ভালোবাসার কষ্টের স্ট্যাটাস
আমার ননদ এইমাত্র আমাকে বাসর ঘর রেখে গেলো।আর বলল ভাইয়ার সঙ্গে মোটেও তর্ক করবে না । ভাইয়া কিন্তু প্রচুর রেগে রয়েছে। ভাইয়ার মুখে মুখে কথা বললে তোমার গায়ে হাত তুলতে পারে ।তাই চুপ চাপ থাকবে।
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম।আর বললাম ঠিক আছে। তোমার ভাই এখন কোথায়?
ভাইয়া এখন নিচে রয়েছে। ভাইয়া রেগে রয়েছে। একটু পর এসে ঘরে ঢুকবে। আমি এখন গেলাম।
আমি বললাম ঠিক আছে!! আমার ননদ ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
আমার পেটে এখনো ব্যথা করছে শশুর বাড়ী আসার আগে সময় সৎ মা পেটে একটা লাথি মেরেছিল।
মা মারা গেছে আজ ৭ বছর হবে। তারপর বাবা আমার সৎ মাকে বিয়ে করে আনেন ।প্রথম ২ বছর ভালোবাসলেও পরে আমার উপর অত্যচার শুরু করে।
আমার সৎ মায়ের একটা মেয়ে হয়েছে। বয়স ৫ বছর হবে।আর আমার বয়স এই ১৭ তে পা দিয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার পর আর পড়তে পারিনি।এক বছর বাড়িতে সারাক্ষণ কাজ করে পার হয়েছে।আর কাজ না করলে সৎ মা এর অত্যচার।
আমার বাবা মোটামুটি ভালো। কিন্তু কিছুদিন হলো দেখলাম আমার সাথে তেমন ভালো করে কথা বলেনি। কারন জিজ্ঞেস করলে তাও বলে না।
আমার বিয়ে আরেকটা ছেলের সাথে হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু ছেলেটা নাকি তার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।আর এখন যার সাথে বিয়ে হয়েছে তার শুধু নামটা জানি। তার নাম নয়ন সবাই নয়ন বলেই ডাকে।
তাছাড়া তার সম্পর্কে আমি আর কিছু জানি না।
এই লোকটার সাথে পরে বিয়ে ঠিক হয়েছে কিন্তু আমি প্রথমে রাজি হয়নি তাই আমার সৎ মা আমাকে লাথি মেরেছে।
পরে রাজি না হয়ে আর উপায় ছিল না।
এসব কথা চিন্তা করছিলাম। আমার নাম অবন্তী।
আমার দুইটা ননদ । একটা ননদের ব্যবহার ভালো দেখলাম না। আমার সাথে কেমন জানি ব্যবহার করছিল। তাকে দেখে বেশি সুবিধা মনে হলো না।কে জানে কপালে কি আছে?
আমি অনুভব করলাম কারো পায়ের শব্দ এগিয়ে আসছে । আসার সময় দেখলাম শশুর বাড়ী দুতলা। ভালো করে দেখতে পারি নাই। আমাকে উপরের রুমে দিয়ে গেছে।
পায়ের শব্দটা এই রুমের দিকে এগিয়ে আসছে।
একটু পর কেউ দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। আমার মনে এক ভয় কাজ করছিল। আমি ভাবতে লাগলাম সে যদি এখন স্বামীর অধিকার খাটানোর চেষ্টা করে। আমার তো আর কিছু করার থাকবে না। মনে মনে চাইলাম যেন
কপাল ভালো থাকে।
কিন্তু আমার এই ইচ্ছা পূরণ হলো না।
একটা লোক ভেতরে ঢুকলো।এটাই হয়তো আমার স্বামী।সে দরজা আটকে দিল। আমি ঘোমটা টেনে মাথা নিচু হয়ে বসে ছিলাম।
আমি উঠে গিয়ে তাকে সালাম করতে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু সে আমার সালাম নিলো না।
আমাকে উঠিয়ে বলল এই মেয়ে তুই কাকে সালাম দিচ্ছিস।
আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম উনি এভাবে কথা বলছে কেন? লোকটাকে দেখে মনে হলো ২৪/২৫ বয়স হবে।এর আগে যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তার বয়স ৩০ এর কাছাকাছি।
আমি বললাম এটাই নিয়ম। আমাকে বড়রা শিখিয়ে দিয়েছে।
কথাটা বলার সাথে সাথে আমার গালে একটা চড় বসলো। আমি ব্যথায় মুখ দিয়ে কথা বের করতে পারছিলাম না।
সে বলল তুই আমার স্ত্রী হতে চাস তাইনা। আমি নীরবে কান্না করতে লাগলাম।কোন কিছু বললাম না।
সে বলল তোকে এখন স্বামীর অধিকার দেখায় দাড়া।
তার মুখ দিয়ে গন্ধ বের হচ্ছিল। মনে হয় নেশা জাতীয় কিছু খেয়েছে।তাই এরকম ব্যবহার করছে। আমি শুধু ভাবলাম উনি যদি আমার সাথে এখন ঐসব করে।এসব ভাবতে কান্না চলে আসলো।
উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে খাটে ফেলে দিল।
আর নিজের শরীরের শার্ট খুলতে লাগলো। আমি ভয়ে তখন একেবারে শেষ হয়ে গেছি।
আমার শরীর ঘামে ভিজে গেছে। আমি মনে মনে শুধু আল্লাহকে ডাকছিলাম।
সে আমার শাড়ীর আঁচল টান দিয়ে খুলে ফেললো। আমার দিকে এগিয়ে আসছিল। তখন তার ফোনে একটা কল আসলো।ফোন এর দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর ফোন ছুড়ে মারলো ।
আমি ভয়ে ততক্ষণে একেবারে শেষ। দু'চোখ দিয়ে কান্না পানি বের হচ্ছে।
শার্ট পড়ে লোকটা বাইরে বেরিয়ে গেল। আমি উঠে নিজের শাড়ি ঠিক করলাম।আর মনে মনে বললাম আল্লাহ তুমি আমাকে বাচিয়েছো।
আমি কাপড় ঠিক করে শুয়ে পড়লাম আর ভাবলাম লোকটা আবার আসবে নাতো।আর কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই। ঘুম ভাঙলো আজানের ধ্বনিতে। আমি নিজেকে ভালো ভাবে পরীক্ষা করলাম। লোকটা রাতে আবার আমার সাথে কিছু করেনি তো।
দেখে মনে হচ্ছে আমার সাথে কিছু করেনি। আমি একটু বেলকনির দিকে এগিয়ে গেলাম। একটা লোক চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। লাইটের হালকা আলোতে দেখে মনে হচ্ছে এক রাজকুমার ঘুমিয়ে রয়েছে।
আমি তখন ভাবলাম এটাই আমার স্বামী।
আমি গিয়ে গোসল সেরে নিলাম। গোসল করে নামাজ পড়তে বসলাম। বেলকনিতে তাকিয়ে দেখি লোকটা নেই। আমি ভাবলাম এখন আবার কোথায় গেল।
আমি নামাজ পড়া শেষ করে বসে রয়েছি। আমার সেই ননদ এসে বলল ভাবী উঠেছো।
- হ্যা উঠেছি।
- তোমাকে মা নিচে যেতে বলেছে।
এটা বলে মেয়েটা চলে গেল। মেয়েটার বয়স আমার সমান হবে।আর বড়টার বয়স আমার থেকে কিছুদিন এর বড় হবে।
আমি উঠে আস্তে আস্তে নিচে চলে গেলাম। রান্না ঘরে আমার শাশুড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমি তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম । আমাকে বলল তুমি নতুন আজ কিছু করতে হবে না।
আমি বললাম অসুবিধা নেই। তখন শাশুড়ি বলল ঠিক আছে তুমি গরুর মাংস রান্না করো।আর বেশি ঝাল দেবে না। আমার ছেলে ঝাল খেতে পারে না।
আমি বুঝলাম না কোন ছেলের কথা বলল।আর ওনার কয়টা ছেলে তাও জানি না।
আমি ঠিক মতো রান্না করলাম। আমি অনেক আগে থেকেই রান্না করতে পারি।তাই ঠিকমতো রান্না করলাম।
রান্না শেষ করে আমি একটু ঘরে যাচ্ছিলাম। তখন আমার সেই বড় ননদ এর সাথে ধাক্কা লাগলো। আমি বললাম আমি দেখিনি ।
সে বলল ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে আবার নেকামি।আর মাফ করতে পারি তবে আমার সব কাপড় ধুয়ে দিতে হবে।
আমি একটু অবাক হলাম বিয়ের প্রথম দিনেই আমাকে কাজ করতে বলল।তাও আবার অন্য জনের কাপড়।
আমি বললাম আজকে আমি পারবো না । আমি অন্যদিন ধুয়ে দিবে আপু।
- আজকেই দিতে হবে।
আমি বললাম আজ পারবো না ।এটা বলার সাথে সাথেই আমার ননদ আমাকে একটা থাপ্পর দিল। আমি কিছুক্ষণ চেয়ে রইলাম।
কিছু বললে সবাই আমাকে খারাপ বলবে।
তাই আমি আর কিছু না বলে দৌড়ে ঘরে গেলাম । বিছানায় গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লাম।প্রথম দিনেই আমার ননদের হাতে মার খেতে হলো। বিছানায় মুখ গুজে কান্না করছিলাম।গালটা লাল হয়ে গেছে।
ঘরে আমার ননদ কখন এসেছে বুঝতে পারি নাই। আমি কান্না করে যাচ্ছি।
পেছন থেকে আমার ননদ আমার কাধে হাত রাখলো।
আমি তাড়াতাড়ি উঠে চোখ মুছে নিলাম।
“ একি ভাবি তুমি কান্না করছো কেন?"
- আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।
- তোমাকে কেউ কিছু বলেছে?
- না কেউ কিছু বলেনি বাবা মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে।
- সত্যি বলছো ভাবি!! কিছু লুকিয়েও না।
- হ্যা সত্যি বলছি।
- আচ্ছা চলো তোমাকে মা ডাকছে!!
আমি উঠে নিচে গেলাম।গালটা শাড়ীর আঁচল দিয়ে ঢেকে গেলাম।
আমার আগে আমার ননদ শাশুড়ির কাছে গিয়ে কি যেন বললো?
আমি গালটা ঢেকে রেখেছি।
হঠাৎ আমার শাশুড়ি আমার বড় ননদের কাছে গিয়ে ঠাস করে একটা চড় মারলো।
আমি আবাক হয়ে গেলাম। আমার শাশুড়ি আমার ননদ কে কি যেন বলছে। দুজনেল তর্ক লেগেছে। আমি দূরে থাকায় কিছু শুনতে পেলাম না।
একটু পর আমার স্বামী বাইরে থেকে আসলো । তার চেহারা রাগী ভাব।
এখন সময় ৮ টা ৩০ বাজে সে এসেই খাবার টেবিলে বসলো।
আমি এগিয়ে গিয়ে তাকে খাবার বেড়ে দিলাম। কিন্তু সে আমাকে প্রত্যখান করে বলল আমি মাকে খাবার দিতে বলেছি।
আমার শাশুড়ি বলল এখন বউয়ের হাতের খাবার খেতে হবে।
আমার শাশুড়ি তাকে খাবার বেড়ে দেয়
একটু পর আমাকে খেতে ডাকলেন। আমি একটা প্লেট নিয়ে বসে ছিলাম। তিনি বললেন আমাদের বাড়ি নিয়ম আছে। তোমায় বিকালে বুঝিয়ে দেব।
আমার ননদ আমাকে একটা মাছ দিতে চেয়েছিল।
কিন্তু আমার শাশুড়ি বাধা দিয়ে বলল যদি সবাই খেয়ে মাছ থাকে তাহলে এই বাড়ির মেয়েরা মাছ ও মাংস খেতে পারবে।
আমি কিছুটা অবাক হলাম।কোন কিছু না বলে ডাউল দিয়ে চালিয়ে দিলাম। আমার শাশুড়ি আমাকে উপরে যেতে বলল।
আমি উপরে গিয়ে বসে রইলাম।আর ভাবলাম এটা আবার কোন নিয়ম।
হঠাৎ পেছন থেকে আমার স্বামীর বাক শুনতে পেলাম ।
বলল অবন্তী একটা কথা?
- আমি এগিয়ে বললাম কি কথা?
- তোমার বাবা আর বেঁচে নেই।এই মাত্র একজন খবর পাঠালো।
আমি কাঁদতে কাঁদতে তাকে জড়িয়ে ধরলাম আর হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম।
মনের শহরে_শুধু_তুমি
মারুফ হাসান_সজীব
পর্ব:০১
মনের শহরে শুধু তুমি
মারুফ হাসান সজীব
পর্ব:২+৩
অবন্তীর এরকম হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরায় নয়নের পুরো শরীর কেপে উঠলো।আজ প্রথম কোন মেয়ে তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে।এর আগে এরকম পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়নি কখনো।
অবশ্য এখন কিছু বলা যাবে না। হঠাৎ করে বাবার মৃত্যুর খবর সহ্য করতে পারে নি।
অবন্তী নয়নকে ছেড়ে দিল।আর বলল আপনি কি সত্যি বলছেন?
কিছুদিন আগে বাবা আমাকে বলেছিল আমি মনে হয় আর বেশিদিন বাঁচবো না।
নয়ন বলল, জ্বী আমি সত্যি বলছি।আর এক্ষুনি আপনাকে যেতে বলেছে!!
অবন্তী সাথে সাথে বলল ঠিক আছে আমি এক্ষুনি আসছি। অবন্তী শুধু তার ছোট ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।
নয়নদের নিজের গাড়ি থাকায় খুব সহজেই রওনা দিল। তাদের বাড়ি যেতে ৪০ মিনিট এর মতো লাগবে ।
সারা রাস্তা অবন্তী কান্না করছে। বাবা মারা গেছে এটা সহ্য করা সত্যি খুব কঠিন।
গাড়ি নয়ন চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাসার সামনে এসেই অবন্তী ছুটে বাড়ি চলে গেল।
চারদিকে মানুষের হাহাকার। সবাই কান্না করছে অবন্তীর দাদী হাজেরা বেগম ছেলের লাশ সামনে নিয়ে কান্না করছে।
অবন্তীর দাদী অবন্তী কে দেখে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। অবন্তীও অনবরত কান্না করছে।
অবন্তী বলল দাদী আমার বাবার কি হয়েছিল?
দাদী কান্না করতে করতে বলল কাল রাতে ভালা মানুষ আইসা খাবার খাইয়া ঘুমিয়েছিল।আর এই সকালে ঘুম থেকে উঠেই বলল আমার বুকে ব্যাথা করছে। আমরা ডাক্তার ডাইকা আনলাম কিন্তু ডাক্তার বলল বাইচা নাই।
তোরে নিয়া কত আশা করছিল।
এই বলে দুজনে আবার কান্না শুরু করলো।নয়ন এক সাইডে দাঁড়িয়ে ছিল।
চারদিকে মানুষ লাশকে দাফন করার ব্যবস্থা করছে। অবন্তীর সৎ মা কান্না করছে। একটু আগে লাশকে গোসল করানো হয়েছে। দুপুরের নামাজের পর লাশ দাফন করা হবে।
অবন্তীর শশুর বাড়ীর সবাই এসেছে।তারা অবন্তী দের পরিবারদের শান্তনা দিচ্ছে।
চারদিকে জোহরের আজান দিচ্ছে। সবাই নামাজ পড়ে লাশ কবরস্থানে নিয়ে গেছে আর দাফন করে এসেছে। অবন্তীর কোন ভাই না থাকায় এলাকার মানুষই সব কাজ করেছে।
অবন্তীদের পরিবারের সবার মুখে করুন ভাব। কান্নায় চোখ লাল হয়ে গেছে সবার।
নয়ন লাশ দাফন করে একটু আগে এসেছে। বিকালে নয়নদের বাড়ির সবাই চলে এসেছে আর অবন্তী কে রেখে গেছে কয়েকদিন এর জন্য।
আজ ৩ দিন পার হয়ে গেছে। অবন্তীদের পরিবার কিছু লোক খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে।
তাদের পরিবার থেকে দুঃখের ছায়া এখনো কমেনি।
আজ নয়ন অবন্তীকে নিতে এসেছে। অবশ্য সে আসতে চায়নি তার মা তাকে জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে।
সেদিন সন্ধ্যায় অবন্তীকে নিয়ে নয়ন বাড়ি ফেরে।
অবন্তী ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছে না কয়েকদিন ধরে।
।
অবন্তীর শাশুড়ি অবন্তীকে কাজ করতে বলছে না।সে চায় আগে অবন্তীর মন ভালো হোক।
অবন্তীর শাশুড়ির মনটা কেমন তা অবন্তী এখনো বোঝেনি।
এই বিয়ের প্রথম দিনেই কেমন ব্যবহার করলো।আর এখন অন্যরকম ব্যবহার।যাই হোক অবন্তী বিশ্বাস করে তার শাশুড়ির মনটা এমনিতেই ভালো।
অবন্তীর বড় ননদের নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে অনেক দিন আগে থেকেই তাই কিছুদিন পর বিয়ে।আর ৭ দিন পর বিয়ে হবে।তাই বাড়িতে আয়োজন চলছে।
কিন্তু এতে অবন্তীর তেমন আগ্রহ নেই। তাছাড়া সে নতুন বউ আর কিছুদিন হলো তার বাবা মারা গেছে তাই এখন আর তার আনন্দ ভালো লাগে না।
অবন্তী এখন আবার তার শাশুড়ির সাথে কাজ এ সাহায্য করে।বাড়ির সকল কাজ প্রায় একাই সে করে। তার দুই ননদ তো সারাদিন বসে থেকেই সময় কাটায়।
কয়েকদিনে নয়ন আর তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি। তবে নয়ন অবন্তীর সাথে ঘুমায় না।নয়ন সোফায় শুয়ে পড়ে।
অবন্তীর সাথে নয়ন একাবারো কথা বলে না।নয়নরা নাকি দুই ভাই।আরেক ভাই ঢাকা পড়াশোনা করে। বিয়েতে আসতে পারে নাই। নয়নের সাথে অবন্তীর হঠাৎ করে বিয়ে হয়ে গেছে।
যার সাথে অবন্তীর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল নয়ন তার মামাতো ভাই।তাই তাদের সম্মান বাঁচাতে নয়ন এর সাথে অবন্তীর বিয়ে হয়। হঠাৎ করে অবন্তীর বিয়ে তাই মানতে পারছে না।
আর নয়ন চাকরি করে।তাই বিয়ের জন্য ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছে। তার বোনের বিয়ের পর চলে যাবে।
বাড়িতে মানুষের ভরপুর আর মাএ দুদিন পর বিয়ে।এই সুযোগে সবাই নয়নের বউকেও দেখে যাচ্ছে।
অবন্তী এই মাএ অনেক কাজ করে এসে ক্লান্ত হয়ে গেছে। ঘরে এসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছে। পেছন থেকে অবন্তী কারো ডাক শুনতে পেল।
- ভাবী কেমন আছো??
- অবন্তী একটু অবাক হলো।
- ভাবী আমার নাম রোহান।
- আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।
- আমাকে আগে দেখোনি তাই।
- আপনার পরিচয় একটু দেন।
- আমি তোমার একমাত্র দেবর। আর আমাকে আপনি করে বলছো কেন?
- ওহ আচ্ছা মনে পড়ছে মা বলেছিল। আসলে আমার মনে ছিল না।
- ঠিক আছে কোনো সমস্যা নেই।
- কখন এসেছো তুমি??
- এইতো ভাবী একটু আগে পড়ে কথা হবে এখন একটু বিশ্রাম নিয়ে আসি। (রোহান)
- আচ্ছা ঠিক আছে। (অবন্তী)
রোহান ঘর থেকে প্রস্থান নিল। অবন্তী একটু বিছানায় গা এলিয়ে দিল।আর ভাবতে লাগলো ছেলেটা ভালো।কথা বার্তা খুব সুন্দর করে বলে।
রোহান অবন্তীর সমবয়সী। রোহান এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। সামনে কিছুদিন পর তার পরীক্ষা।
অবন্তী এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিল সে নিজেও জানে না। ঘুম ভাঙল কারো ডাকে।চোখ খুলে দেখে তার সামনে তার স্বামী নয়ন দাঁড়িয়ে রয়েছে।
যখন অবন্তী চোখ খুললো সাথে সাথে নয়ন সেখান থেকে চলে গেল। অবন্তী ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
তাই তাড়াতাড়ি অবন্তী উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে গেল।
- বাইরে অনেক মানুষ রয়েছে।
সবাই একসাথে বসে গল্প করছে। আগামীকাল গায়ে হলুদ। সবচেয়ে বেশি রোহানকেই বেশি কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। অবন্তীকে দেখার সাথে সাথেই বলল আসো ভাবি।
অবন্তী তাদের দিকে এগিয়ে গেল।
রোহান বলল ভাবী সবাই কাল কোন পারফরমেন্স করবে তার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
অবন্তী বলল ওহ আচ্ছা।
রোহান বলল তাহলে ভাবী তুমি তাহলে কি করবে?
- না আমি কিছুই করবো না।
রোহান বলল আচ্ছা কাল দেখা যাবে তুমি কি করো?
অবন্তী চুপ করে তাদের আলোচনা শুনছে। নয়নের মামাতো বোন ২টা খালাতো বোন ২টা আর একটা চাচাতো বোন সবাই কোনো না কোনো কিছু করবে।
যেমন কেউ নাচ করবে আবার কেউ গান।
তাদের আলোচনা মনে হয় আর শেষ হবে না। রাত তখন নয়টা বাজে খাওয়া শেষ করে সবাই আবার ছাদে গিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।
সবাই গান করছে গল্প করছে। কিন্তু অবন্তীর স্বামী নয়নের কোনো খবর নেই।সে খাওয়া দাওয়া করে কোথায় যেন চলে গেছে!!
অবন্তী রাত ১২ টার দিকে এসে ঘুমিয়েছে কিন্তু তার স্বামী নেই।
রাত তখন ২ টা অবন্তী তার মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেল। কিন্তু সে বুঝতে পারলো না কে?
সে তাড়াতাড়ি উঠে পড়লো। ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দেখে তার স্বামী ঘুমিয়ে রয়েছে। অবন্তী ভাবলো হয়তো তার স্বামী নিজেই এসেছিল আর এখন ঘুমানোর অভিনয় করছে। কিন্তু অবন্তীর সারা রাত আর ঘুম আসলো না।
পরের দিন সবাই গায়ে হলুদের আয়োজন করছে। সবাই হলুদ শাড়ি পড়েছে। অবন্তী নিজেও শাড়ি পড়েছে।
অবন্তী কে হলুদ শাড়ি পড়া অবস্থায় সত্যি সুন্দর লাগছে।
সবাই মেয়েকে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে। অবন্তী সবার নাচ-গান করা দেখছিল।
হঠাৎ কোথা থেকে একটা ছোট মেয়ে এসে অবন্তী কে একটা চিঠি দিয়ে বলল একজন তোমাকে দিতে বলেছে।
মেয়েটা কে তা অবন্তী চিনে না।সে চিঠিটার ভাঁজ খুলল।
চিঠিতে লেখাঃ
প্রিয়,,
অবন্তী তোমায় হলুদ শাড়িতে অপূরুপ লাগছে। মনে হচ্ছে কোনো পরি দাঁড়িয়ে রয়েছে। তুমি সত্যি খুব সুন্দর। তুমি ভাবছো আমি কে?সেটা না জানলেও চলবে!! তোমাকে আর কি বলা যায় তা আমি জানি না।তাই আজ আর কিছু লিখতে পারলাম না। ভালো থেকো। খুব শীঘ্রই আমার আরেকটা চিরকুট পাবে। আমি শুধু তোমাতেই থাকতে চায়।
তোমার অপেক্ষায় দিন গুনেছি
রাত প্রহরে
ভালো বেসে পেয়েছি তোমায়
রাখবো বুকে ধরে।
আমাকে নিয়ে অবহেলা
করোনা তুমি
আমার স্বপ্নের এই
মনের শহরে শুধুই তুমি।
ইতি
মনের মানুষ
_____________
চিঠিটা পড়ে অবন্তী তো মেরে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর তখনি পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেল।।
পর্ব_৩
অবন্তী চিঠিটা পড়ে “থ" মেরে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তার মাথায় কথাগুলো আঘাত করছে বারবার। এরকম চিঠি আবার কে দিবে?
তাছাড়া এগুলো কেউ দেখে ফেললে আবার বিপদ হবে!
তাই অবন্তী চিঠিটা নিজের আঁচল এ বেধে রাখলো।
এখন অবন্তীর মাথায় শুধু এই একটা কথাই ঘুরছে।
অবন্তী একটু পর তার পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেল।ভয়ে তার গলা শুকিয়ে গেল।। কেউ আবার ব্যাপারটা দেখে ফেলল না তো।
অবন্তী বুক ভরা আতষ্ক নিয়ে পেছনে তাকালো।
কিন্তু পেছনে দেখতে পেল তার একমাত্র খালা আলেয়া বেগম। আলেয়া হলো অবন্তীর আপন খালা ।বিয়ের দাওয়াত পেয়ে এসেছে।তার সাথে অবন্তীর সৎ মা এসেছে আর অবন্তীর বোন।
- অবন্তী মা কেমন আছিস?
- জ্বী খালা ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
- আমিও ভালো আছি।
- তোমার পরিবারের সবাই কেমন আছে?
- ওরা সবাই মোটামুটি ভালো তবে তোর খালুর অবস্থা দিন-দিন অবনতি হচ্ছে।
- ওহ আচ্ছা দেখে রেখো আবার আমার বাবার মতো অত্যচারিত হয়ে যেন মরতে না হয়।
- মানে তোর বাবার কি হয়েছিল?
- আমি তোমাকে এটুকু বলতে পারি! আমার বাবা এমনি এমনি মারা যায়নি। আমার বাবাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
- তোকে এসব কথা কে বলল অবন্তী !
- কেউ বলেনি। আমি বের করব আমার বাবা কিভাবে মারা গেছে। তুমি পরে দেখতে পারবে।
- আচ্ছা তোর ব্যপার।
- যাও খালা ভেতরে গিয়ে বসো।
- ঠিক আছে ।
অবন্তী তার খালাকে নিয়ে ভেতরে রুমে গেল। এবং একটা ঘরে বসার ব্যবস্থা করলো।তার শশুর বাড়ী অনেক রুম এমনিতেই খালি পরে থাকে ।
একটা মেয়েকে দিয়ে অবন্তীর শাশুড়ি অবন্তীকে ডেকে পাঠাতে বলল। অবন্তী বলল আসছি।
একটু পর অবন্তী তার শাশুড়ির কাছে গেল।
অবন্তীর শাশুড়ি অবন্তীকে উদ্দেশ্য করে বলল নয়ন আজকের জন্যে একটু বগুড়া যাবে ওর বাইক নিয়ে। সেখানে আমার ভাইকে একটু আনতে যাবে। আগামীকাল সকালে চলে আসবে ।
অবন্তী নয়ন এর দিকে তাকিয়ে বলল না মা আমি কিছু মনে করবো কেন?
নয়ন কেমন যেন কঠোর দৃষ্টিতে অবন্তীর দিকে তাকিয়ে আছে।এটা দেখে অবন্তী রাগ হচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না।
নয়ন হয়তো চেয়েছে সে যাবে না । কিন্তু তার মা যেহেতু বলেছে তাই হয়তো যাবে । একটু পরই নয়ন বেরিয়ে গেল বাইক নিয়ে ।
অবন্তী আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিল।
বাড়িতে সারাদিন সবাই আনন্দ করেই কাটিয়ে দিল। সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত। বিয়ের অনেক আয়োজন করেছে সবাই তাই ক্লান্ত।
অবন্তী সন্ধ্যা বেলা কাজ কর্ম সেরে আবার গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিল।
কয়েকদিন ধরে তার শাশুড়ি তাকে ভালোই খেতে দিচ্ছে প্রথম দিনের মতো নিয়ম মানতে হচ্ছে না ।যা অবন্তীর জন্য ভালোই হয়েছে।
অবন্তী বিছানায় একটু গা এলিয়ে দিল।আর তার বাবার কথা ভাবতে লাগলো।তার বাবার সাথে কাটানো পুরনো দিনগুলো।আর যখন তার মা বেঁচেছিল সেই পুরনো দিনের কথা।
এসব ভাবতে ভাবতে তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।
বাইরে এখনো অনেক মানুষ রয়েছে।আর সে ভিতরে রয়েছে।
কিছুক্ষণ পর অবন্তীকে তার সৎ মা ডাক দিল।আর বলল অবন্তী আসবো। অবন্তীর সৎ মায়ের সাথে তার শাশুড়ি নিজেও ছিলো। অবন্তী বলল হ্যা আসো।
অবন্তীর মা আর তার শাশুড়ি ভেতরে ঢুকলো।
- অবন্তী তোকে একটা কথা বলতে এসেছি। (সৎ মা)
- কি কথা ।
- আসলে কিভাবে বলবো ।
- হেঁয়ালি না করে বলো।
- তোর শশুর বাড়ী অনেক কিছু আসে।আর আমার মেয়েটার ভবিষ্যত কি হবে কে জানে?তোর বাবা তো আর বেঁচে নেই।সে মারা গেছে।আর এখন আমি আর তোর বোন একা।
তোর বাবার যা কিছু সম্পওি আছে সেগুলো যদি আমার মেয়ের শুধু থাকতো তাহলে ভালো হতো।
তখন অবন্তীর সৎ মা তার শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বলল বেয়াইন আপনি কি বলেন?এজন্যই আপনাকে এনেছি।
- আমি আর কি বলবো। অবন্তী যা বলবে তাই।
- আমি এখন কিছু বলতে পারবো না।
এটা শুনে অবন্তীর সৎ মায়ের মুখটা ছোট হয়ে গেল।আর বলল ঠিক আছে আমার কথাটা একটু ভেবে দেখিস। এগুলো তো আমার জন্য চাইনা শুধু তোর বোনটার জন্য।
অবন্তী কিছু বলল না। অবন্তীর মা আর শাশুড়ি ঘর থেকে বের হলো।
অবন্তীর মনে আরেকটা চিন্তা বুকে গেল।
[ এখন পাঠক আপনারাই বলুন অবন্তী কি করবে]
অবন্তীর তখন চিঠিটার কথা মনে পড়লো।সে চিঠিটা বের করে আবার পড়লো। অবন্তী ভাবলো তার স্বামীর হাতের লেখা নাকি চেক করা যাক ।তাই অবন্তী নয়ন ডায়রী বা খাতা খুঁজতে লাগল কিন্তু দুঃখের বিষয় কিছুই পেল না।
অবন্তী মনে মনে বলল লোকটা কোথায় রাখতে পারে এগুলো!
কিন্তু কোথাও পেল না।
তখন আবার কেউ অবন্তী কে ডাক দিল।
অবন্তী দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে তার ননদ আর রোহান।
- ভাবী তোমার কোন খবর নেই কেনো? (রোহান)
- আসলে আজ সারাদিন অনেক কাজ ছিল।
- তোমাদের বিয়েতে তো তেমন আয়োজন হয়নি। তাই তুমি এখন আনন্দ করবে চলো। (অবন্তীর ননদ)
- জ্বী ভাবি ও ঠিক বলেছে । (রোহান)
- আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি।
- তুমি এখনি আসো ভাবি। (রোহান)
- তোমরা যাও আসছি।
- ঠিক আছে তাড়াতাড়ি চলে আসো।আমরা সবাই ছাদে রয়েছি। তুমিও ছাদে চলে আসো।
- ঠিক আছে!
ওরা দুজন চলে গেল।
অবন্তী একটু পর ঘর থেকে বের হতে যাবে তখন বিছানায় বালিশের দিকে চোখ পড়ে। সেখানে একটা কাগজ রাখা ।
অবন্তী কাগজটা খুলে দেখল। আবার সেই আগের মতই চিঠি।একই হাতের লেখা ।
অবন্তী চিঠি পড়া শুরু করল ।
প্রিয়তমা
তোমায় বলেছিলাম আমার আরেকটা চিঠি তুমি পাবে তাই দিলাম। তোমায় যখন জীবনে প্রথম দেখেছিলাম সেদিন ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু আফসোস সেদিন এর পর আর তোমার সাথে দেখা হয়নি ।আর অনেক দিন পর তুমি নিজেই কাছে এসেছো।
যদি পারো আমাকে খুঁজে নিও। দরকার না থাকলে খুজো না। কিন্তু আমি তোমাকে সারাজীবন ভালোবাসব তোমার অজান্তেই।
আজ আর কিছু বলব না। আমার পরিচয় জানতে আগ্রহ হচ্ছে তাই না।জানতে নিজে চেষ্টা করো।
আর একটা কথা বলি। দুই বছর আগে তোমার সাথে একটা মেয়ে থাকতো নাম মিষ্টি।
সে আত্মহত্যা করেছিল। সেটাও একটা মনে করো তোমার কাছে উৎস।
ভালো থেকো সুস্থ থেকো।
আমার এই ছোট্ট জীবনে
সাজাবো তোমায়,
ভালোবেসে রেখো তুমি
তোমার বুকে আমায়।
ইতি
মনের মানুষ
__________
অবন্তী চিঠি পড়ে আবার আগের মতো থ মেরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
তখন পেছন থেকে কেউ চিঠিটা অবন্তীর হাত থেকে কেড়ে নিলো।
মনের শহরে শুধু তুমি
পর্ব_৪+৫
মারুফ হাসান সজীব
পুরো ঘরের ভিতর নিস্তব্দ হয়ে রয়েছে। অবন্তী চুপ করে আবার আগের মতো ভাবনায় ডুবে গেল।চিঠিটা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আহাম্মক এর মতো। কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না । তার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে এগুলো কে দিচ্ছে?
তখন পেছন থেকে কেউ অবন্তীর হাত থেকে চিঠি কেড়ে নিলো। অবন্তী এতক্ষণ ঘোরের ভেতর ছিল ।আর চিঠির কথা মনে করলো ।
পেছনে তাকিয়ে দেখে তার ছোট ননদ বৃষ্টি দাঁড়িয়ে রয়েছে।সে অবন্তীর হাত থেকে চিঠি কেড়ে নিয়েছে । অবন্তী এটা দেখে ঘাবড়ে গেল। আর মনে মনে আল্লাহকে ডাকলো।
- এটা কি ভাবী ?
- অবন্তী চুপ!!
- কি হয়েছে বলো ভাবী?
- তাও অবন্তী চুপ।
এরপর বৃষ্টি চিঠিটা খুলে পড়লো সবটুকু। বৃষ্টি নিজেও কিছুক্ষণ চুপ ছিল । তারপর বলল এগুলো কে লিখেছে ভাবী?
অবন্তী মাথা নিচু করে আছে কারণ সে জানে না এই চিঠি কে দিয়েছে?
তাই কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।
- যে দিয়েছে তুমি কি তাকে চেনো ভাবী?
- অবন্তী আস্তে করে বলল না চিনি না ।
- তাহলে তুমি কিভাবে পেলে?
- ঘরে ছিল।
- সত্যি বলছো ভাবি!!
- হ্যা আরেকটা চিঠি সকালে পেয়েছি । অবন্তী সেই চিঠি বের করে দিল।আর তার ননদ কে দিল। অবন্তী বলল এছাড়া আমার কাছে আর কোনো কিছু নেই ।
আমি সকালে ওই চিঠি পেয়েছি। একটা মেয়ে এসে আমাকে দিয়ে গেছে।
- বৃষ্টি আগের চিঠিটাও পড়লো।দুটো চিঠি মিলিয়ে দেখলো একই হাতের লেখা।
দুটো চিঠি পড়ে বৃষ্টি বলল এটা কে করতে পারে? তোমার কোনো ধারণা আছে ভাবী! তোমার কাউকে সন্দেহ হয় এমন কেউ?
- না তেমন কেউ নেই!!
- আচ্ছা ঠিক আছে।
অবন্তীকে উদ্দেশ্য করে বলল তুমি এই চিঠিগুলো কাউকে দেখাবে না । তাহলে বড় কোনো বিপদ হবে। আমরাই এর সমাধান বের করতে চেষ্টা করব।
- ঠিক আছে।
আচ্ছা ভাবী এখন এসব থাক।চলো আমরা উপরে যায়।
তা নাহলে সবাই সন্দেহ করবে ।
- আচ্ছা ঠিক আছে চলো।আর এই চিঠির ব্যপারে সত্যি আমি কিছু জানি না।আর তোমার ভাইকে এসব কিছু বলো না ।বললে আমার কি হবে কে জানে?
আচ্ছা ঠিক আছে বলব না ভাবী !!
অবন্তী আর বৃষ্টি দুজন ছাদে চলে গেল । সেখানে অবন্তীর বড় ননদ মানে যার বিয়ে হবার কথা।
সেদিন যখন অবন্তীকে থাপ্পর মেরেছিল সেদিন বৃষ্টি দেখে ফেলেছিল তার বড় বোন অবন্তীর গায়ে হাত তুলছে।আর সেটা তার মাকে বলেছে।তাই তার মা তার বড় মেয়েকে সেদিন মেরেছিল।
এটা পরে অবন্তী বৃষ্টির কাছে থেকে জানতে পারে।
সন্ধ্যার পর থেকে রোহান কে কেউ কথাও দেখতে পাচ্ছে না। হয়তো বাইরে কোথাও গেছে।
সবাই আগের মতো আবার গল্প করছে কাল বিয়েটা হয়ে যাবে। তবে অবন্তীর তেমন ভালো লাগছে না। চিঠি গুলো নিয়ে সে খুব চিন্তিত আছে।
আর সে কে? যে আমাকে আগে দেখেছে কিন্তু আমি তাকে দেখিনি এটা তাহলে কে?আর এখন নাকি আমি নিজেই তার কাছে ধরা দিয়েছি।
আর সেই লোকটা কি জানে না আমার বিয়ে হয়েছে। আমার পরিবারের অশান্তি ডেকে আনতে চাই।
আর মিস্টির ব্যাপারে সে কি করে জানে?
মিস্টি তো অনেক আগেই মারা গেছে। কোনো এক কারণে সে আত্মহত্যা করেছিল । অবন্তীর ঠিক মতো মনে নেই।
ওই মেয়েটার সাথে একটা ছেলের ভালবাসার সম্পর্ক ছিল।
পরে কোনো কারনে দুজনের মধ্যে ঝামেলা হয়।আর মিস্টি আত্মহত্যা করে। কিন্তু এর সাথে এটার কি সম্পর্ক।
মিস্টি দের বাসা অবন্তীদের পাশের বাসায়।
অবন্তী তখন একটু বাইরে ওয়াশরুমে গেল ।ছাদ থেকে নিচে নামার সময় একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে অবন্তীর
মেয়েটা খুব দ্রুত হেঁটে যাচ্ছিল।
অবন্তী বলল আস্তে হাঁটতে পারেন না।এতো জোরে কেউ হেটে যায়।
মেয়েটা কিছুক্ষণ অবন্তীর দিকে তাকিয়ে বলল তোমার সামনে খুব বড় বিপদ আছে সাবধানে থেকো।
এই বলে মেয়েটা চলে গেল।
মেয়েটার মুখ ওড়না দিয়ে ঢাকা ছিল।তাই ভালো করে দেখতে পারে নাই।
অবন্তী এমন কথা শুনে আবার দাঁড়িয়ে গেল। মেয়েটা কে ডাকতে লাগল কিন্তু সে শুনলো না। মেয়েটা চলে গেল।
আর কোথায় গেল তাও জানে না।
অবন্তী আবার ভাবলো আমার সাথে এসব কি হচ্ছে?
আর মেয়েটা আবার কে? বলল আমার সামনে বিপদ আছে!! এটা কেমন গোলক ধাঁধা।
_______
বৃষ্টি সবার মাঝখানে থেকে উঠে গেল।আর নিজের ঘরে চলে আসলো। এসে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিল।
আর একজনকে ফোন দিল।
- হ্যালো । (বৃষ্টি)
- হ্যা বলো।
- আমার কাজ হয়ে গেছে
- ঠিকমতো করেছ।
- হ্যা ঠিকমতো করেছি।আর চিঠি কাউকে দেখাতে নিষেধ করেছি।
- অবন্তী এখন কোথায়?
- ভাবী একটু মায়ের রুমে গেছে।
- আচ্ছা চিঠির ব্যাপার যেন কাউকে না বলে।
- তা বলবে না। আমি ভাবীকে বুঝিয়ে বলছি।
- তাহলে আমাদের কাজ কি পূর্ণ হবে।
- অবশ্যই হবে।
- আচ্ছা এখন রাখি । একটু ব্যস্ত রয়েছি।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
বৃষ্টি ফোন কেটে দিয়ে বাইরে চলে গেল। বাইরে সবাই রয়েছে। বৃষ্টির খালাতো বোন বলল,
- কোথায় ছিলি?
- এইতো একটু ঘরে।
- ওহ আচ্ছা।
অবন্তী এখন রয়েছে তার শাশুড়ির ঘরে। অনেক এ মিলে সেখানে কথা বলছে।তাই অবন্তী সেখানে বসে কথা গুলো শুনছে।
তখন একটা লোক বলল তাহলে নয়নের বিয়ে তো হঠাৎ করে হয়ে গেল। আমাদের তেমন দাওয়াত দিলি না।
তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নয়নের জন্য একটা অনুষ্ঠান হবে।
অবন্তীর শাশুড়ি বলল ঠিক আছে।
যে লোক কথা বলেছে সে আসলে নয়নের মামা হোন। অবন্তীর শাশুড়ির ভাই।
তখন অবন্তীর শাশুড়ির মোবাইল এ একটা কল আসলো।
- হ্যালো কে বলছেন?
- আমি বাজারে থেকে একজন আপনাকে ফোন দিয়েছি।
- কেন?
- আপনার ছেলের নাম রোহান।
- হ্যা আমার ছেলের নাম রোহান।কেন আমার ছেলের কি হয়েছে।
- তেমন কিছু না। তবে বাজারে কয়েকজনের সাথে মারামারি লেগেছে। তাই অনেক জায়গায় আহত হয়েছে।এখন ডাক্তার এর কাছে রয়েছে ।
- আপনি কি বলছেন এসব আমার ছেলের কি হয়েছে আমি আসছি।
- আচ্ছা আসুন।
ফোন লোকটা কেটে দিল ।
সবাই কথা গুলো শুনল। এবং অনেক এ বাজারে চলে গেল।
রাত তখন প্রায় বারোটা একটা ছেলে দৌড়ে এসে উঠোনে বলল ,
খুন হয়েছে খুন।
একটা লোক খুন হয়েছে।
এটা শুনে সবাই আতঙ্কিত হয়ে গেল।আর অনেকে বাড়ির উঠোনে গিয়ে জমা হলো।
পর্বঃ৫
অবন্তীর শাশুড়ি আর কিছু লোক মিলে রোহান কে আনতে গেল । তখন রাত ৯ টার মতো বাজে । বাড়িতে ছিল অনেক মানুষ। রোহান কে নিয়ে সবাই ১০ টার দিকে এসেছে। ছেলেটা্য অনেক জায়গায় কাটা। কপালেও কাটা আছে।
সবাই এগিয়ে গেল ওদের দিকে। এরকম হওয়ার কারণ জানতে চাইলো।
অবন্তীর শাশুড়ি বলল খেলা নিয়ে নাকি কয়েকজনের সাথে হাতাহাতি হয়। তারপর সবাই বড় মারামারি করে ফেলে।
রোহান কে নিয়ে ঘরে যাওয়া হলো। তার সেবা করা হলো।পরে রোহান এর জন্য ঘরে খাবার পাঠানো হলো।
সবাই খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে গেল। কাল বাড়িতে বিয়ে তাই আবার সকালে উঠতে হবে অনেক কাজ বাকি।
কাল সব কিছুর ব্যবস্থা করতে।তাই সবাই ঘুমাতে গেল।
রাত ১২ টার দিকে হঠাৎ সবাই ঘুম থেকে উঠে পড়লো। কেউ বাড়ির উঠোনে চিল্লাচিল্লি করে বলছে বাড়িতে কে আছেন?
এখানে খুন হয়েছে।খুন হয়েছে। সবাই তাড়াতাড়ি বাইরে আসুন। আপনাদের বাড়ির সামনে খুন হয়েছে তাড়াতাড়ি দরজা খুলুন।
এছাড়াও বাইরে কিছু মানুষ এর আওয়াজ শুনতে পেল
অবন্তীদের শশুর বাড়ির সবাই ততক্ষণে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। সবাই উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে বাইরে কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে।
অবন্তীর শাশুড়ি বলল কি হয়েছে এখানে? আপনারা ডাকাডাকি করছেন কেন?
- এখানে একটা খুন হয়েছে!! (লোক)
- কি খুন। (অবন্তীর শাশুড়ি)
- জ্বী খুন হয়েছে।তাই আপনাদের বলছি।
- কোন জায়গায় হয়েছে।
- এইতো আপনাদের গেটের সামনে ।
- সবাই তাড়াতাড়ি সেদিকে রওনা হলো।আর গিয়ে দেখল একটা ১৮/১৯ বছরের একটা ছেলে খুন হয়েছে।
অবন্তীর শাশুড়ি বলল একে এখন কি করবে?
আর ছেলেটা কে?
সবাই বলল আমরাও চিনি না ।এই ছেলেটি কে?
এখন ভালো হবে পুলিশ আনলে!!
একজন বলল হ্যা এখন পুলিশ কে খবর দিতে হবে।তাই একজন তাই করলো।সে পুলিশ কে ফোন দিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো।আর জায়গার কথা বলল।
পুলিশরা বলল আমরা কিছুক্ষণ এর মধ্যে সেই জায়গায় আসছি। আপনারা দেখুন কেউ যেন লাশ না ধরে।
ইতিমধ্যে এলাকায় মাইক দিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে একটি ছেলে কে কারা যেন খুন করেছে। সেই ছেলেটার লাশ পাওয়া গেছে। তাই কেউ যদি কারো ছেলেকে না পান তবে এখানে এসে খোঁজ করুন।
রাত তখন ২ টা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে হাজির। দুজন পুলিশ লাশ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে কোন পরিচয় পাওয়া যায় কিনা।কোন তথ্য পাওয়া গেলে ভালো হতো। কিন্তু কিছু পাওয়া গেল না।
শুধু কিছু টাকা ছিল ছেলেটির কাছে।
পুলিশ লাশ পোষ্ট মরটেম করতে পাঠালো।রাত তখন প্রায় ৩টার কাছাকাছি। অবন্তী চুপ করে একসাইডে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এসব লাশ সে দেখে সহ্য করতে পারে না।
।
একজন পুলিশ অবন্তীর শাশুড়ি কে জিজ্ঞেস করল, আপনারা কি ওই ছেলেটাকে চেনেন?
- না।
- তাহলে আপনাদের এখানে খুন হলো কিভাবে?
- আমরা কিভাবে বলবো!
- আপনাদের বাড়ি এত সাজগোজ কেন?
- কাল সকালে আমার মেয়ের বিয়ে তাই আয়োজন করা হয়েছে ।আর আজ এই ঝামেলা এলো।
- আপনারা তাহলে সত্যি বলছেন।
- হ্যা সত্যি বলছি।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আমরা আবার আসবো।
পুলিশ ওলা সেই লোকটা সেখান থেকে চলে গেল। অবন্তীর শাশুড়ি ভেতরে চলে গেল। তার সাথে সবাই বাড়ির ভেতরে ঢুকলো।
অবন্তীর ননদ বৃষ্টি আবার সেই লোকটা কে ফোন দিল। তার সাথে কথা বলল।
- হ্যালো
- হ্যা বলো
- একটা সমস্যা হয়ে গেছে।
- কি সমস্যা হয়েছে আর এত রাতে ফোন কেন?
- আমাদের এখানে খুন হয়েছে।
- কি খুন হয়েছে কিভাবে আর কে?বাড়ির সবাই ঠিক আছে তো।কি হয়েছে সব ঘটনা খুলে বলো।
- এরপর বৃষ্টি সব কথা তাকে খুলে বলল। শুরু থেকে যা কিছু হয়েছে।
- ছেলেটা কে খুন হলো?
- আমি নিজেও জানি না।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
বৃষ্টি আর সেই লোকটার কথাকপন শেষ হলো। বৃষ্টি বাইরে চলে গেল।দেখলো সবাই ড্রয়িং রুমে বসে রয়েছে।
বৃষ্টি গিয়ে সেখানে তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলল মা এটা কেমন ভেজাল। আমাদের বাড়ির সামনে এসেই তাকে খুন হতে হলো!
- কি জানি জানি না । আমি নিজেও সেটা ভাবছি।
- তো এখন কি করা যায় মা?
- কি আর করবো আমরা।যা করার পুলিশ করবে আমাদের কিছু করার নেই এখানে।
- আচ্ছা ঠিক আছে মা।এটা বলে বৃষ্টি উপরে রুমে চলে গেল। বাইরে এখনো অনেক মানুষের আনাগোনা চলেছে।
লাশ পোষ্ট মরটেম করে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স এসেছে। কয়েকজন মিলে লাশ গাড়িতে তুলে দিল। সবাই সেখানে দাঁড়িয়ে দেখছে।
পুরো গ্ৰামের মানুষের কাছে এই ঘটনাটা ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই দেখতে এসেছে।
একজন পুলিশ অবন্তীদের শশুর বাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে ।সে এসে অবন্তীর শাশুড়ির খোঁজ করলো। একটু পর অবন্তীর শাশুড়ি এসে হাজির হলো।
পুলিশ অফিসার বলল আমি ওই থানার ওসি। আপনাদের এখানে খুন হয়েছে তাই একটু তদন্ত করতে হবে।
- অবন্তীর শাশুড়ি বলল ঠিক আছে।
আপনাদের বাড়ির সামনে যেহেতু খুন হয়েছে তাই আপনাদের কে থানায় যেতে হবে। আপনাদের নামে কেস হতে পারে।
আর আপনার বাড়িতে যেহেতু অনুষ্ঠান। চলছে। অনেক মানুষ রয়েছে এখনো আপনাদের বাড়িতে এদের ভেতর কেউ যদি খুন করে। আমার ধারণা মতে কোনো কারণ এ আপনাদের বাড়িতে অবস্থান করা কোনো লোক এই কাজ করেছে।
- এটা কি বলছেন অফিসার।
- হ্যা আমি ঠিক বলছি।
- আমাদের বাড়ির কেউ এসব কখনো করবে না।
- বলা যায় না করতেও পারে।
- আমার মনে হয় অফিসার সাহেব এটা বাইরের কেউ খুন করেছে।
- আচ্ছা ঠিক আছে দেখা যাক।
ওসি তাদের বলে সেখান থেকে বিদায় নিলো। অবন্তীর শাশুড়ি আরেক চিন্তায় মগ্ন হলো যদি কোনো কারণে তার মেয়ের বিয়ে ভেঙে যায় তো কি হবে।
এসব ভাবনা তাকে ছিঁড়ে খাচ্ছে।
বাড়িতে সবাই আছে কিন্তু অবন্তী নেই এটা কারো মনে নেই। সবাই এই ঘটনা নিয়ে ভাবছে।
আগামীকাল বাড়িতে বিয়ে আর আজ এইরকম একটা ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ।
এখন এটা নিয়ে কি করা যায় তাই নিয়ে সবাই দুশ্চিন্ত।
হঠাৎ বৃষ্টির অবন্তীর কথা মনে পড়লো। বৃষ্টির অবন্তীদের ঘরের দিকে রওনা হলো।ঘরে গিয়ে দেখে অবন্তী কোথাও নেই।
বৃষ্টির মনে এক আশংকা ঢুকলো।
বৃষ্টি সব জায়গায় অবন্তীর খোঁজ করলো কিন্তু কোথাও পেল না । শেষে বাইরের গিয়ে সবাইকে ব্যাপারটা বলল।
সবাই তখনি সারা বাড়ি খোঁজ করতে লাগলাম অবন্তীকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না ।প্রত্যকটা ঘর ঘুরে ঘুরে দেখছেন সবাই কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না ।
বাইরে দিয়ে খোঁজা হচ্ছে।
অবশেষে সবাই বৃথা হয়ে ফিরে এলো অবন্তীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
একজন অবন্তীর মায়ের বাড়িতে খবর পাঠালো।
মনের শহরে শুধু তুমি
পর্বঃ-৬
লেখাঃ- মারুফ হাসান সজীব
অবশেষে একজন এসে বলল অবন্তীকে পাওয়া গেছে বাড়ির পাশে যে নদীটা আছে সেখানে একা বসে রয়েছে। সবাই অবাক হয়ে বলল এতো রাতে নদীর পাড়ে কি করে? অবন্তীর শাশুড়ি বলল তাড়াতাড়ি চলো আমাদের এখনি যেতে হবে।
রোহান নিজেও বলল হ্যা মা চলো তাড়াতাড়ি ।
কয়েকজন মিলে নদীর পাড়ে উদ্দেশ্য রওনা হলো। তারা গিয়ে দেখল অবন্তীর সাথে একটা মেয়ে বসে রয়েছে। মেয়েটার বয়স ১০ এর মতো হবে।
রোহান অসুস্থ শরীর নিয়ে এগিয়ে গিয়ে বলল ভাবী তুমি এতো রাতে এখানে কেন?
অবন্তী আস্তে করে উওর দিলো এমনি রয়েছি।
সবাই কিছুটা অবাক হয়ে গেল অবন্তীর শাশুড়ি বলল এতো রাতে কেউ এমনি নদীর পাড়ে আসে ।মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি তোমার ।আর এই মেয়েটা কে?
অবন্তী উওর দিল একটু আগে যে ছেলে খুন হয়েছে এটা তার মেয়ে এবং তার স্ত্রী একটু আগে এই বর্ষার ভরা পানিতে আত্মহত্যা করেছে।
সবাই আতংকিত হলো আর তার শাশুড়ি বলল আত্মহত্যা করেছে তুমি কি করে জানলে?
আমার পাশে যে মেয়েটা রয়েছে এই মেয়েটা বলেছে কিছুক্ষণ আগে তাই এই মেয়েটার কাছ থেকে সব কিছু শুনছি।যে লোকটা মারা গেছে সে প্রচুর মাদকাসক্ত ছিল এবং বিভিন্ন অন্যয় কাজের সাথে লিপ্ত ছিল।
তার স্ত্রী অনেক আগে থেকেই এসব সহ্য করছে কিন্তু আজ আর সহ্য করতে পারে নাই।এই মেয়েটার বাড়ি এই দুই গ্ৰাম আগের গ্ৰামে। ওদের গ্ৰামের নাম হাঁড়িভাঙ্গা।
আর এই মেয়েটার বাবা আজ এই রাস্তা দিয়ে একটা মেয়ের সাথে খারাপ কাজ করতে যাচ্ছিল আর মেয়েটার মা লোকটার পিছু নেয়।আর এতো দূর আসার পর তাকে হয়তো পেছন থেকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে।
অবন্তী তার শাশুড়ি কে বলল মেয়েটা আমাকে ভালো করে বলতে পারে নাই ।
অবন্তীর শাশুড়ি বলল এই মেয়েটা কিভাবে আসলো?
মেয়েটা ওর মায়ের সঙ্গে এসেছে ।ওর মা খুন করার পর
ওকে এখানে রেখে এই ভরা নদীর পানিতে ঝাঁপ দেয়।
আর তখন থেকেই মেয়েটা কান্না করছে।
মেয়েটা কান্না করতে করতে আমাদের বাড়ির সামনে এসেছিল আমি দেখেছিলাম।
তখন মেয়েটা আমাকে সম্পুর্ন ঘটনা খুলে বললো তবে ভালো করে বলতে পারে নাই।
ততক্ষণে সেখানে লোক জড় হয়ে গেছিল। এখন সময় ভোর ৪টার বেশি বাজে।নয়ন এই খুনের ব্যাপারটা জানতে পেরেছে তাই সে অনেক আগেই বাইক নিয়ে রওনা দিয়েছে।এবং ইতিমধ্যে সে চলে এসেছে।
কয়েকজন লোক মিলে নদীতে খুঁজতে লাগল কোথাও লাশ দেখা যায় কিনা।
অবন্তী মেয়েটাকে নিয়ে তার ঘরে চলে গেল। মেয়েটা কে দেখে তার মায়া হচ্ছে । ঠিক এইরকম বয়সেই সে তার মাকে হারিয়ে ফেলে।
নয়ন ঘরে এসে অবন্তীকে দেখে খুশি হয়ে গেল আর বলল তুমি নাকি কাউকে না বলে কোথায় চলে গিয়েছিলে।
পেছন থেকে নয়ন এর কন্ঠ শুনতে পেয়ে অবন্তী চমকে যায় এখন তার স্বামী কোথায় থেকে আসলো?
নয়ন বলল বৃষ্টি আমাকে ঘটনা যখন ঘটেছে তখনই আমাকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল আর আমি তখনি রওনা দিয়েছিলাম।
নয়ন একটু অবন্তীর দিকে এগিয়ে গেল এবং বলল অবন্তী আমি এ পর্যন্ত কাউকে ভালোবাসিনি।
শুধু একটা মেয়ে কে ছাড়া আর সেই মেয়েটি হলে তুমি। আমি যখন আমার নানা বাড়িতে গিয়েছিলাম ২০২০ সালে দিকে তোমাকে আমি তোমাদের সেই স্কুলের সামনে প্রথম দেখেছিলাম বিশ্বাস করো সেদিন এর পর আমি তোমাকে খুঁজতে গিয়েছিলাম কিন্তু কিছুদিন পর করোনার কারনে সব স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যায়।
তারপর তুমি আর স্কুলে আসো নি । তোমায় আর খুঁজতে পারি নাই। আমার নানা বাড়িতে ওইখানে কারো সাথে বেশি পরিচয় ছিল না।তাই তোমার কথা কাউকে বলতে পারি নাই।
অবন্তীর হঠাৎ সেই চিঠির কথা মনে পড়ে ।
অবন্তী আমি তোমাকে দুটো চিন্তা দিয়েছিলাম দুটো চিঠি আমি তোমাকে দিয়েছিলাম।আর চিঠিতে মিস্টি নামে যে মেয়েটার কথা বলা হয়েছে সেই মেয়েটি আমার চাচাতো বোনের বান্ধবী ছিল।আর আমার চাচাতো ভাই এর সাথে তার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু কোনো এক কারণে সেই মেয়েটি আত্মহত্যা করে।তাই আমি তোমাকে কিছু টা ইঙ্গিত দিয়েছিলাম।
বিশ্বাস করো যেদিন হঠাৎ করে মা আমাকে বলল আমার বিয়ে করতে হবে। আমি রাজি হয়েছিলাম না। আমি শুধু তোমার কথা ভাবতাম।
কিন্তু মা আমাকে জোর করায় আমি বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। সেদিন আমি প্রচুর নেশা করেছিলাম। তাই তোমার সাথে খারাপ কিছু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে ফোন এসেছিল। আমি নাম্বার টা দেখলাম আমার বান্ধবীর।
আমার বান্ধবী রাখি সে আমাকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতো। কিন্তু আমি তাকে করতাম না।তাই রাতে তার নাম্বার থেকে ফোন আসায় রাগ হয়েছিল আর ফোন ছুড়ে মেরেছিলাম।
পরে রাগ করে বাইরে এক বন্ধুর কাছে গিয়েছিলাম ।ভোর হওয়ার একটু আগে বাড়ীতে এসেছিলাম।
পরে সকালে তোমাকে দেখে আমি সেই দু'বছর আগের সেই কথা মনে পড়ে গেল। আমি সেদিন তোমাকেই দেখেছিলাম।
তারপর ভাবলাম তোমাকে সত্যি কথাটা কিভাবে বলা যায় এটা নিয়ে আমি আমার ছোট বোন বৃষ্টি কে বললাম।
বৃষ্টি আমাকে বলেছিল এই চিঠি দিয়ে একটু মজা করতে।তাই আমি তোমাকে চিঠির দিয়েছিলাম।
আর সব খবর বৃষ্টি আমাকে ফোনে বলেছিল কালকের ঘটনা। তুমি নাকি চিঠি নিয়ে অনেক চিন্তিত আছো।
তাই সব সত্য আজ বলে দিলাম।আজ আমি সত্যি বলছি তোমাকে ছাড়া আমি জীবনে ভালো থাকতে পারবো না।
অবন্তী তখন কেঁদে দিল আর বলল সত্যি আপনি আমাকে ভালোবাসবেন এরকম ভাবে কথা আগে আমাকে কেউ বলেনি।
নয়ন বলল হ্যা আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসতে চায়।
নয়ন আর অবন্তী দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো।এক অন্যরকম অনুভুতি দুজনের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেল । তখন চারদিকে ফজরের আজান দিল। দুজন দুজনকে ছেড়ে দিল। হঠাৎ অবন্তীর সেই মেয়েটির কথা মনে হলো বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটি কখন যেন ঘুমিয়ে গেছে ।
অবন্তী মনে মনে লজ্জা পাচ্ছে মেয়েটা আবার এসব কিছু দেখে ফেলে নি তো।
অবন্তী আর নয়ন বাইরে গেল। মেয়েটার মার লাশ খুঁজে পাওয়া গেছে ।
সেই ওসি এসে অবন্তীর কাছে থেকে সবকিছু শুনল। এবং মহিলার লাশ নিয়ে চলে গেল ।
সকাল হতেই মেয়েটার নানা আর কিছু লোক এসেছিল নয়নের বাড়িতে। এসে সব কিছু শুনে মেয়েটা কে সাথে করে নিয়ে যায় ।
সেদিন তার বড় ননদের বিয়ে হয়ে গেল। সবাই তাকে বিদায় দিয়ে দিলো। অবন্তীর শাশুড়ি অনেক ক্ষন কান্না করলো।
বাড়ির সবাই আস্তে আস্তে কমে গেল।সব অতিথি বাড়ি থেকে চলে গেল। কয়েকজন অতিথি শুধু ছিল।
সেদিন রাতে বাড়ির সবাই রাত ১২ টার দিকে ঘুমিয়েছিল। তবে অবন্তী আর নয়ন এর মধ্যে এক অন্যরকম সম্পর্ক গড়ে ওঠে।তারা দুজন সেদিন এক হয়ে গিয়েছিল। পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা সেদিন তাদের মধ্যে এসেছিল।
এর কিছুদিন পর নয়ন বাঁকা তার কর্মস্থলে চলে গেল এবং সাথে অবন্তীকে নিয়ে গেল ।
বাড়ির সবাই খুশি হয়েছিল নয়ন আর অবন্তীর মিল হওয়ায়।
অন্যদিকে অবন্তীর জীবন সুখে কাটছিল। তবে বাড়ীর কথা মনে হলে তাদের মন খারাপ হয়ে যেত।
।
।
আজ ৫ বছর পর অবন্তী আর নয়নের ৫ বছর পূর্ন হলো সংসার জীবনে ।এ কয়দিন এ অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। তাদের ৪ বছরের একটা মেয়ে হয়েছে। নাম তার জান্নাতুল ফেরদৌস দৃষ্টি। অবন্তীর শাশুড়ি এক বছর আগে মারা গেছে।
নয়ন অফিস করে এসেই তার মেয়েকে নিয়ে শয়তানি করতে লাগলো।আর অবন্তীর জন্য গিফট এনেছে আজ তাদের বিবাহ বার্ষিকী।
অবন্তী নিজেও নয়নের জন্য গিফট কিনেছে।
রাত দশটা অবন্তী আর নয়ন একটা কেক নিয়ে দুজন দাঁড়িয়ে রয়েছে । এখন তারা কেক কাটবে। অবন্তী আর নয়ন কেক কাটলো। দুজন দুজনকে খাইয়ে দিল।
নয়ন নিজের হাতে করে অবন্তী কে খাইয়ে দিল আর অবন্তী নিজেও তাই করলো।
নয়ন অবন্তীকে শাড়ির প্যাকেট বাড়িয়ে দিল আর অবন্তীকে একটা গোলাপ দিয়ে বলল “ আমি তোমাকে সেদিন প্রথম দেখায় ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু তোমাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। হঠাৎ তুমি নিজেই আমার কাছে ধরা দিয়েছিলে। সেই থেকে আমি তোমাকে আরো বেশি করে আপন করে নিয়েছি। তোমায় আমি এই মন দিয়ে ভালোবেসেছি।আজ আমাদের সংসার এর ৫ বছর পূর্ন হলো । কিন্তু আমাদের ভালোবাসা আগের মতো রয়েছে আমি তোমাকে এভাবেই চিরজীবন ভালোবাসতে চাই।
তোমার জন্য সব কিছু করতে পারবো। তুমি শুধু আমাকে ছেড়ে কখনো যাবে না অবন্তী। তুমি আমাকে এটার কথা দাও।
আমি তোমাকে ছাড়া কখনো বাঁচবো না।আর যদি মারাও যায় তবুও মৃত্যুর পর তোমার জন্য অপেক্ষা করব।এই জীবনে যেমন একসাথে রয়েছি মৃত্যুর পরের জীবনেও শুধু তোমারই থাকতে চায়।আর কোনো মেয়ে আমার জীবন এ যেন না আসে। আমার মনের শুধু এই একটাই বাসনা।
তুমি কি অবন্তী আমার সাথে বাকি জীবন কাটাবে?
অবন্তী দুচোখ এর পানি মুছে গোলাপ হাতে নিয়ে বলল আমার সব ভালোবাসা শুধু তোমারই জন্য। আমি বিয়ের আগে কোনো ছেলের দিকে ঘুরেও তাকায় নাই। শুধু সবটুকু ভালোবাসা আমার স্বামীর জন্য রেখেছি।আর তুমি সেই আমার ভালোবাসার মানুষ যার সাথে এতো দিন সংসার করেছি এবং তোমার সাথে ভবিষ্যতে সংসার করবো।
তুমি যদি না থাকতো তবে আমার বেঁচে থাকা অচল হয়ে যাবে। আমি তোমাকে ছাড়া কখনো থাকতে পারবো না।
তুমি ছাড়া এই অবন্তী অচল। তোমার আমার ভালবাসা কখনো অপূর্ণতা পাবে না। তুমি ছাড়া এই জীবনে আমারো দ্বিতীয় কোনো পুরুষ আসবে না। তুমি ছিলে আমার জীবনের প্রথম পুরুষ এবং আছো আর ভবিষ্যতে তুমিই থাকবে। তুমি সারাজীবন শুধু আমার পাশে থাকবে এটাই আমি কামনা করি।
অবন্তী তখন কাব্যোর মাধ্যমে তার ভালোবাসা প্রকাশ করলো।
থাকবে তুমি আমার
হইয়ে এই জীবনে
রবে সারাজীবন ছায়া
হয়ে আমার মনে।
ভালোবাসা থাকবে তোমার
শুধু আমার জন্য
তুমি ছাড়া আমি নই
কারো অন্য।
সাগরের জলরাশি গুলো
যেমন তলে ঢেউ,
তেমনি আমাদের মষ
ভাঙ্গতে পারবে না কেউ।
তোমার জন্য শুধুই
ছিলাম আমি,
এখনো আছি থাকবো
মনের শহরে শুধুই তুমি।
এরকম কথা বলতে বলতে রাত ১১ টা পার হয়ে গেল। তাদের মধ্যে সেই আগের মতো এক ভালোবাসা সৃষ্টি হলো। পুরো ঘর ফুলের অপূরুপ গন্ধে ভরে গেল। এবং তাদের জীবনের এক সুন্দর সীমাহীন রাত পার হলো।
ভোরে অবন্তী ঘুম থেকে উঠলো।সে প্রতিদিন এর মতো রান্না কাজ করতে গেল। রান্না শেষ হয়ে গেল ৬:৩০ এর দিকে। অবন্তী খেয়াল করলো নয়ন এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। নয়নের এতক্ষন ঘুমানোর কোনদিনে রং অভ্যস নেই ।
নয়ন আজানের সময় ঘুম থেকে উঠে পড়ে কিন্তু আজ কেন জানি ঘুম থেকে উঠছে না।
অবন্তী নয়ন কে ঘরে থাকতে গেল। অবন্তী নয়নের কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ থাকলো কিন্তু কোনো সাড়া পেল না। অবন্তী নয়ন এর শরীরে হাত দিতেই ভয় পেয়ে গেল। কারন নয়ন এর পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে রয়েছে। অবন্তী ভয় পেয়ে গেল। এবং নয়ন কে ডাকতে লাগলো। কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ নেই। অবন্তী নয়ন এর নাকের কাছে হাত রাখতেই একটা চিৎকার দিল মে আশেপাশে সব ফ্লাটের মানুষ ছুটে আসলো। কারন নয়ন আর বেঁচে নেই।
অবন্তীর এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে নয়ন বেঁচে নেই। এখন নয়নের জন্য রান্না খাবার কাকে খাওয়াবে।
অবন্তীর কান্না দেখে সবাই নিস্তব্ধ হয়ে রয়েছে কেউ কিছু বলতে পারছে না। কারন তারাও জেনে গেছে নয়ন আর বেঁচে নেই।
এভাবেই দুটি পবিত্র ভালোবাসার গল্পের সমাপ্ত হলো।
সমাপ্ত,,
★★★