সংসার জীবনের কষ্ট
দুই সপ্তাহ আগে জানতে পেরেছি যে আমি দ্বিতীয় বারের মতো মা হতে যাচ্ছি।প্রথম বারের মতো এবারো পুলকিত হলাম। আমার প্রথম সন্তান মেয়ে।বাসার সবাই সেবার খুশি হলেও প্রত্যাশা প্রায় সবারই ছিলো একটা ছেলের। তাই এবার যখন কনসিভ করলাম সবাই জোরেশোরে চাইলো এবার যেনো ছেলেই হয়!
অবাক হলাম। ছেলে হওয়া কী আমার হাতে?
কিছুদিন পর শ্বাশুড়ি মা ডেকে কাছে বসালেন। একথা ওকথা বলার পর বললেন,
-- " মা, আমার কিন্তু এবার ছেলেই লাগবে। আমার তো একটাই ছেলে। তার যদি একটা ছেলে না হয় তবে বংশ রক্ষা হয় কী করে, বলো তো?"
প্রসঙ্গত বলি, আমার শ্বাশুড়ির এক ছেলে, এক মেয়ে।উনার মেয়ের আবার তিন ছেলে। উনার ছেলের কোন ছেলে নাই। এটা বিষম দুঃখ তার।
মায়ের কথা শুনে বললাম,
-- " মা, বুঝলাম। কিন্তু মেয়ে হলে কী ফেলে দিবেন, বলেন তো!"
-- " এতো কথা বুঝি না। আমার ছেলেই চাই।"
-- "আচ্ছা মা, আপনি কী জানেন, সন্তান ছেলে বা মেয়ে হওয়ার পেছনে দায়ী কে?"
মা বড়ো বড়ো চোখে আমার দিকে তাকালেন।
আমি মাকে XX আর XY ক্রোমোজমের ব্যাপারে বিশদ ব্যাখ্যা করলাম। বুঝালাম, সন্তান ছেলে- মেয়ে হওয়ার পেছনে আসলে বাবা দায়ী।তবে এটা পুরোপুরি ভাগ্যের ব্যাপার। সব শেষে বললাম, মহান স্রষ্টার উপর কারো কোন হাত নেই। তিনি চাইলে সব সম্ভব।
শ্বাশুড়ি মা বললেন,
-- " অনেক কথা বলছো। আমার ছেলে লাগবে। ব্যস! নইলে অন্য পথ ধরবো।"
-- " মানে?"
মানে তুমি কচি খুকি না যে সব বুঝায় বলতে হবে।
-- " আপনি কী বিচ্ছেদ এর কথা ভাবছেন? "
-- " মনে করো তাই। "
কেনো জানি কষ্ট পাবার পরিবর্তে আমার ভীষণ মেজাজ খারাপ হলো। বললাম,
-- " মা, আমারো একটা ছেলের শখ আছে।এবার যদি আমার মেয়ে হয় তাহলে আপনার ছেলেকে আমি ডিভোর্স দিবো।কারণ, এর জন্য সে দায়ী, আমি না। "
বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। বুঝতে পারছি শ্বাশুড়ি মা আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। থাকুক। এতো বুঝানোর পরও যিনি বুঝেন না তাকে আর কি বলতে পারি!
(সমাপ্ত)
অণুগল্প : প্রতিউত্তর
লেখা- নুজহাত তাসনিম