গল্পঃশাস্তি | অবহেলার কষ্টের গল্প

চাপা কষ্টের স্ট্যাটাস

চাপা কষ্টের স্ট্যাটাস

 আমি কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি,মাঝ রাতে আমার দুলাভাই আমার ঘরে আসে...আমার বিছানার পাশ থেকে এসে ঘুরে-ফিরে চলে যায়.আপাকে এখনো বলিনি..কি কারণে আসে সেটা না বুঝে তো আর আপাকে বলা যায় না...

আজকে রাতে আমি বিষয়টা আরো ভালো ভাবে বুঝে দেখবো,এই চিন্তা মাথায় নিয়ে রাতে তাড়াতাড়ি খেয়েই আমি ঘুমতো গেলাম...

আপা জিজ্ঞাসা করলো যদিও, কেন এতো আগেই ঘুমোতে যাচ্ছি....

আমি উত্তর দিলাম,"মাথা ব্যাথা করছে আপা..

মাথা ব্যাথার ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বো..."

উত্তর দেওয়ার সময় আড়চোখে খেয়াল করলাম,

দুলাভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে...


আমি বুঝতে না দিয়ে আমার ঘরে চলে গেলাম..

বিষয়টা কেমন জানি অস্বস্তিকর..আগে ক্লিয়ার করে বুঝে নেই,তারপর আপাকে বলবো..


ঘরের লাইট বন্ধ করে,মাথার পাশে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে শুয়ে পড়লাম..

ঘুম তো আসবে না,শুধু শুধু চোখ বন্ধ করে থাকা..

কিছুক্ষণ পরে,আপা আসলো ঘরে..

এসে আমার মাথার কাছে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো...

আপার আদরটা খুব ভালো লাগছিলো..

আপা জিজ্ঞাসা করলো--

"মাথা ব্যাথা কমেছে...?"

আমি মুচকি হাসছিলাম--

"নাহ..তুই হাত দেওয়াতে বেড়েছে..."


আপা মাথায় আলতো করে একটা টোকা দিয়ে বললো--

"যাহ..মিচকা শয়তান একটা..."

আপার এই ভালোবাসার সময়টাতে চেহারা যেন ঠিক মায়ের মত হয়ে যায়..কি যে শান্তি লাগে,দেখলে....!

আমি আপাকে জিজ্ঞাসা করলাম--

"আপা,তুই আমাকে খুব ভালোবাসিস..তাই না..??

আপা হেসে উঠে উত্তর দিলো--

" রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়েকে আবার কেউ ভালোবাসে নাকি....!!"


দুজন মিলে খুব হেসে উঠলাম...

তারপর আপা কাথাটা মেলে আমার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে, টেবিল ল্যাম্প টাও বন্ধ করে দিয়ে আমার গায়ে কয়েকটা আস্তে থাবা দিয়ে ঘুমিয়ে যেতে বললো...আমিও মাথা নেড়ে গুড নাইট জানালাম আপাকে...


সব ঘরের লাইট বন্ধ করে আপারাও বোধ হয় শুয়ে পড়েছে..আমার একটু একটু ভয় করছে..কেমন জানি বিরক্তও লাগছে..এভাবেই রাত এক টা বেজে গেল...

ঘড়ির কাটা টিকটিক করতে করতে রাত আরো গভীর হচ্ছে..আমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি...

ঠিক সেসময়ে আমার ঘরে দুলাভাইয়ের উপস্থিতি টের পেলাম..যদিও খুব নিঃশব্দে এসেছে সে...

আমি চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকলাম বিছানায়...


আস্তে আস্তে মনে হলো,দুলাভাই আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে..কারণ দুলাভাইয়ের ট্রাউজার আমার এক আংগুলের কোণায় বাঁধছিলো..তবুও আমি স্থির হয়ে আছি..এরপর দুলাভাই,তার একটা হাত দিয়ে আমার মুখের সামনে ধরে খেয়াল করতে লাগলো আমি ঘুমোচ্ছি কিনা...কাব্য পেইজে সকল পাঠ দেওয়া হবে

আমি ঘুমের ভান করেই থাকলাম..

তারপর হঠাৎ দুলাভাই আমার ঘাড় বরাবর হাত দিলো..আমার সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো..ছিঃ দুলাভাই এমন করছে কেন আমার সাথে..!!

ভয়ে আমার গা শিউরে উঠলো...

আমি সাথে সাথেই একটু আড়মোড়া ভাব করে উঠলাম...আর দুলাভাই আমার থেকে ছিটকে সরে গেল...ঘুমের ঘোরে থাকার মতন গলা করে,আমি 

আস্তে আস্তে বলে উঠলাম--

"উহু...পানির পিপাসা লেগেছে খুব...."


এই কথা শোনার সাথে সাথেই দুলাভাই জলদি করে বোধ হয় চলে গেল..আমিও তাড়াহুড়ো করে উঠে গিয়ে ডাইনিং এর লাইট দিলাম..দিয়ে দেখি দুলাভাইও দাঁড়িয়ে পানি খাচ্ছে..খুব খুব রাগ হচ্ছিলো উনার চেহারা দেখে...তবুও কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না এই কারণে,আমি ঢুলতে ঢুলতে জিজ্ঞাসা করলাম-

"দুলাভাই এতো রাতে??"

দুলাভাই উত্তর দিলো--

"তোমার আপা পানি নিয়ে যেতে ভুলে গেছে,তাই আমি পানি খেতে আসলাম.."


মিথ্যুক..মনে মনে ধিক্কার দিলাম তাকে...

আমার মত আমি পানি খেয়ে,নিজের ঘরে এসে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিলাম..।

খুব খারাপ লাগছে আমার..মনে হচ্ছে যেন,নিজের ভেতরই মিশে যাচ্ছি লজ্জায়..

দুলাভাই সুবিধার মানুষ না..

আপার চেহারা মনে হতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম..।।

কোনভাবে রাত টা পার করলাম..জেগেই ছিলাম..কখনো কেঁদে,কখনো ঘরের মধ্যে পায়চারী করে এভাবেই কাটলো রাত...

সকাল সাতটা বাজলে দুলাভাই অফিস চলে যায়..তারপর আপাকে সব খুলে বলবো..।

এই অপেক্ষায় ঘর থেকে একবারও বের হলাম না..সাতটা বাজার সাথে সাথেই বের হয়ে গেলাম ঘর থেকে আপার কাছে......


গল্পঃশাস্তি

পর্ব(১)


গল্পঃশাস্তি

পর্বঃ২


 কোনভাবে রাত টা পার করলাম..জেগেই ছিলাম..কখনো কেঁদে,কখনো ঘরের মধ্যে পায়চারী করে এভাবেই কাটলো রাত...

সকাল সাতটা বাজলে দুলাভাই অফিস চলে যায়..তারপর আপাকে সব খুলে বলবো..।

এই অপেক্ষায় ঘর থেকে একবারও বের হলাম না..সাতটা বাজার সাথে সাথেই বের হয়ে গেলাম ঘর থেকে আপার কাছে......


কোন রকম ফ্রেশ হয়েই আমি আপার ঘরে গিয়ে ভুলুক দিলাম..

"আপা,এ আপা..কই তুই.."

আপা নেই ঘরে..ওয়াশরুমের দরজা লাগানো দেখে আমি ভাবলাম আপা বোধ হয় ওয়াশরুমে..

এমন সময় আপা ঘরের বাইরে থেকে উত্তর দিলো--

"আমি রান্নাঘরে তো..এদিকে আই..."

আমি তাড়াতাড়ি করে আপার কাছে ছুটে গেলাম..

আপা আমাকে দেখেই হেসে দিলো।আমার কপালে হাত দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো-

"রাতে ভালো ঘুম হয়েছে,তোর??মাথা ব্যাথা কমেছে,তো....??"


রাতের কথা মনে পড়তেই যতটা না খারাপ লাগলো,তার থেকেও বেশি খারাপ লেগে উঠলো আমার আপার মুখ দেখে..কি যে নিষ্পাপ লাগছিলো আপাকে...!!

আমার আপার মত মানুষের কপালে এমন একটা মানুষ পড়েছে ভেবেই আমার অনেক খারাপ লেগে উঠলো..আমার চোখে পানি চলে এসেছে...আপার দিকে তাকিয়ে আমি মনের অজান্তেই কেঁদে উঠলাম..


আপা সাথে সাথে হাতের কাজ ফেলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো,"কি হয়েছে মণি??চোখে পানি কেন,তোর???"


আমিও আপার কোলের মধ্যে মাথা রেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম..সব বলতে ইচ্ছে করছে আমার,কিন্তু কি করে যে আমি বলি..

ফোপাঁতে ফোপাঁতে শুধু বললাম--

"তোর মুখটা দেখে মায়ের কথা মনে পড়ছে..."


আপা হেসে উঠলো--

"আমিও তো আরেকটা মা রে,পাগলী..."

বলেই আমাকে বুকের সাথে চেপে ধরলো..

আমি আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে গেলাম..

তারপর নিজেকে একটু শক্ত করে,মাথাটা উঁচু করে আপাকে বললাম-

"আপা,তোর সাথে আমার খুব জরুরী একটা কথা আছে.."


আপা মুচকি হেসে উঠে বললো--

"আচ্ছা ঠিক আছে..আগে তোর দুলাভাই,অফিসে যাক..তারপর দুইবোন মিলে জমিয়ে গল্প করবো।।"


আমি ভ্রু কুচলাম " দুলাভাই এখনো অফিসে যায়নি??"

আপা বললো -

"না..তার নাকি রাতে ঘুম হয়নি ভালো..তাই অফিসে লেট করে যাচ্ছে,ঘুমোচ্ছিলো এতোক্ষণ..গোসলে ঢুকেছে..."


তার মানে আমাকে আর একটু অপেক্ষা করতে হবে,মনে মনে ভাবলাম..দুলাভাইয়ের সামনে আমি পড়তে চাই না,তাই আস্তে আস্তে আপার কোল থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমি বললাম,

"ঠিক আছে,তাহলে আমি আমার ঘরে গেলাম.."


আপা বললো--

"ঠিক আছে..কিছু খেয়ে নে,আগে..আর যাওয়ার সময় সোফার উপর থেকে মোবাইলটা নিয়ে গিয়ে চার্জে দিস তো,মণি.."


আমি তাই করতে গেলাম..আপার ঘরে গিয়ে দেখি,

টেবিলের উপর দুলাভাইয়ের ফোন বারবার বেজেই যাচ্ছে...আমি উঁকি দিয়ে দেখলাম,একটা নাম্বার থেকে বারবার কল আসছে..

লোকটার উপর আমার খুব সন্দেহ এখন..ফোনটা হাতে নিতেই একটা টেক্সট এলো...


--"কখন থেকে অনলাইনে বসে আছি..আসো না কেন,জান???"

সাথে সাথে আরো একটা টেক্সট-

--কাল রাতে ফোন দাওনি কেন??

তারপর আরো একটা টেক্সট--

--আজকে একটু সময় বেশি করে আসবে...


টেক্সট গুলো যেই নাম্বার থেকে কল এসেছিলো,ঠিক সেই নাম্বার থেকেই..

আমার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠছে বারবার...

দুলাভাইয়ের ফোনে কে এমন মেসেজ পাঠালো??কেন পাঠালো??কি সম্পর্ক আমার দুলাভাইয়ের সাথে তার..??

কি যে অসহ্য লাগছিলো চিন্তা গুলো...

মনে হচ্ছিলো পায়ের নিচে মাটি সরে যাচ্ছে...আপার কথা মনে করে বারবার কান্না চলে আসছে...


লোকটা আমার আপাকে কি অবলীলায় ই না ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন....

আমি ফোনটা রেখেই আমার ঘরে চলে গেলাম ছুটে...

বালিশে মুখ গুজে কান্না করলাম অনেকক্ষণ..


কাঁদতে কাঁদতে কখন যেন ঘুমিয়ে গেলাম..

দুপুরে আপার ডাকে ঘুম ভাঙলো.....

দুলাভাই অফিসে গেছে..মনের মধ্যে খারাপ লাগা নিয়েই গোসল,খাওয়া শেষ করলাম একে একে..

আপা বোধ হয় ভুলে গেছে আমার কথা বলার বিষয়টা......


সবকাজ শেষ করে আপার ঘরে গিয়ে বসলাম।।

আপা শুয়েই ছিলো..আমি যাওয়াতে উঠে বসলো..

কিভাবে কথা শুরু করি,কিভাবে শুরু করি এই ভাবতে ভাবতেই আমি হুট করে বলা শুরু করলাম--


--আপা,একটা সত্যি কথা বলবি???

--হুম,বল...

--দুলাভাই তোকে কেমন ভালোবাসে??

--যেমন ভালোবাসার,তেমন বাসে..(হেসে উঠে বললো)কেন রে??হঠাৎ এই প্রশ্ন??

--এমনি...


কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে--

--আচ্ছা,আপা..তুই দুলাভাইকে কতটা বিশ্বাস করিস?

--যতটা করতে হয়..কেন রে??

--এমনি (চুপ করে গেলাম)


তারপর আর কোন কিছু না ভেবেই আমি সরাসরি আপাকে বলতে লাগলাম--

--আপা,আমার মনে হয়।।দুলাভাই তোকে ঠকাচ্ছে...আজ সকালে আমি দুলাভাইয়ের ফোনে একটা নাম্বার থেকে একটার পর একটা প্রেমের টেক্সট দেখেছি,এক গাদা কল আসতে দেখেছি..

আমি ঘুমের ঘরে ভয় পায় বলে,রাতে যে দরজার ছিটকিনি না দিয়ে ঘুমায়..দুলাভাই কয়েকরাত আমার ঘরে এসেছে..এমনকি কালকেও...................


(ঠিক যেন,এক নিঃশ্বাসে বললাম..আমার চোখ মুখ দিয়ে যেন ক্ষোভ ছুটতেছে..সাথে কান্নার পানি...)


আপার দিকে তাকাতে সাহস হচ্ছে না আমার..।অনেক কষ্টে মুখ উঁচু করলাম..আপার চোখ আগুনের মত লাল হয়ে আছে..সাথে পানি..

নিঃশ্বাস নেওয়ার মতনও যেন নড়ছে না..


চোখের পলকও নড়ছে না আপার..

আমি আপা বলে ডাকতেই,

আপা আমার বাম গাল বরাবর একটা চড় লাগিয়ে দিলো........

চলবে


গল্পঃশাস্তি

পর্বঃ- ৩


(ঠিক যেন,এক নিঃশ্বাসে বললাম..আমার চোখ মুখ দিয়ে যেন ক্ষোভ ছুটতেছে..সাথে কান্নার পানি...)


আপার দিকে তাকাতে সাহস হচ্ছে না আমার..।অনেক কষ্টে মুখ উঁচু করলাম..আপার চোখ আগুনের মত লাল হয়ে আছে..সাথে পানি..

নিঃশ্বাস নেওয়ার মতনও যেন নড়ছে না..


চোখের পলকও নড়ছে না আপার..

আমি আপা বলে ডাকতেই,

আপা আমার বাম গাল বরাবর একটা চড় লাগিয়ে দিলো........


আমি আপার কাছ থেকে ছিটকে সরে গেলাম মুখে হাত দিয়েই..মুহুর্তেই মনে হলো,আমার পৃথিবী দুই খণ্ড হয়ে গেল..আপার চোখ-মুখ ফুটে যেন আগুন বের হচ্ছে...যতটা না কষ্ট হচ্ছে আমার,তার থেকেও বেশি ভয় করছে আপার চেহারা দেখে...


আমি টলে পড়ে যেতে লাগলাম..

এতটাই চমকে গেছি আমি যে,কাঁদতে পারছি না..

ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লাম..

আপা যেন রোবটের মত বসে আছে..

পুরো ঘরটাতে যেন একটুও বাতাস নেই...

আপার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি অসহায়ের মতন তাকিয়ে আছি..দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে যেন আমার...


কিছুক্ষণ এভাবেই থাকলো আপা..

সারাটাক্ষণ আপার মুখের দিকে তাকিয়েই ছিলাম..

আপা কিছু বললো না দেখে প্রচণ্ড অভিমান হচ্ছিলো..আমি দেয়াল ধরে আস্তে আস্তে কোনরকম উঠে দাঁড়ালাম।।


ঘর থেকে বের হয়ে যাবো আমি..

আরো একবার আপার দিকে তাকালাম..

আপা শূণ্যের দিকে তাকিয়েই আছে...

বুক ফেটে কান্না চলে এলো এবার আমার..

আমি কান্নাকে ঠেকাতে, হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে আপার ঘরের দরজা পার হলাম.....


আমার ঘরে ঢুকতেই হঠাৎ করে আপা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো..আপার চোখের পানি অনবরত পড়তে থাকলো...

আপা আমাকে জড়িয়ে ধরলো বুকের ভেতর...

আমাকে ধরেই ঠিক ছোটদের মতন হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো..আমার বুকটাও যেন ফেটে যাচ্ছিলো..আপার সে কি কান্না..আপা থেমে থেমে খুব কষ্ট করে বললো--

"জানোয়ার টা,আ.মা....র ছোট বো....ন টাকেও ছাড়লো না..আ...আ......"


আমি আপাকে ধরলাম,আপা তুই সব জানতিস??

আপা বললো কেমন জানি ডুকরে উঠলো..

কোন উত্তর দিতে পারলো না..

আমি আস্তে আস্তে আপাকে আমার ঘরে বিছানায় নিয়ে বসালাম....


আপার কান্না যেন কিছুতেই থামছে না..

আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারছি না আপার কষ্ট..

একটু জোর গলায় বলে উঠলাম-

"আপা,তুই কিচ্ছু লুকাস না..সত্যি করে বল আমাকে.."


আপা কয়েক মিনিট শুধু ফোঁপালো..তারপর বললো---

"জানিস,মণি..?

সেই বিয়ের রাত থেকেই আমি সব জানি..রাতের বেলা যখন দুজন ঘুমিয়েছিলাম.হঠাৎ করেই দেখি ওর ফোনে একভাবে আলো জ্বলে আছে..আমি কোনরকম ফোনটা হাতে নিয়ে ওকে ডাকতে যাবো,তখন দেখি............."


(লম্বা একটা দম নিলো আপা...)


তখন দেখি,ফোনে অনেক গুলো কল আর সাথে মেসেজের পর মেসেজ--

বউ পেয়ে আমাকে ভুলে গেছো??

তুমি কালকেই আমার সাথে দেখা করবে..

আমি তোমার জন্য অপেক্ষায় আছি..


তারপর যা লেখা ছিলো,তা আমি বলতেও পারবো না.."


এটুকু বলেই আপা বিছানায় লুটিয়ে পড়লো...

কি যে আর্তনাদ করছিলো আপা,আমার মনে হচ্ছিলো দুনিয়ার সব থেকে কঠিন কষ্টটা এই মুহুর্তে আপার হচ্ছে..আমি আপার কোলের ভেতর গিয়ে,

মাথায় হাত দিয়েই আপাকে জড়িয়ে ধরলাম...

হাউমাউ করে কি যে কান্না করলাম দুই বোন..

আমাদের মা মারা যাওয়ার সময় এভাবেই কেঁদেছিলাম দুইবোন মিলে..

কিছুতেই দুজনের কান্না থামছে না...


আপা তখন হুট করেই উঠে বসেই আমাকে ওর জামার গলা টেনে পিঠের হালকা দেখালো--

"দেখ..সে তার আগের প্রেমিকাকে ভালোবাসা বিলিয়ে দেয় আর আমাকে এগুলো দেয়..."


আপার এই অবস্থা দেখেই আমার পুরো শরীর শিউরে উঠলো..আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম..

আমার আপা কিভাবে এতো কষ্ট সহ্য করেছে মুখ বুজে??আমার আপার মত মাটির মানুষের কপালে কেন এমন হয়েছে??


একদিকে আকাশ ভাঙা কষ্ট,তার উপর আবার এই যন্ত্রণা???আপার মুখের দিকে আর তাকাতে পারছি না আমি..ওর কথা ভাবতেই আমার কষ্ট গুলো কেমন জানি তীব্র ক্ষোভে পরিণত হয়ে যাচ্ছে..যতটা কষ্ট হচ্ছিলো তার থেকেও বেশি ঘৃণা আর ক্ষোভ তৈরী হলো...

আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম--

"আমি ওই জানোয়ারটাকে খুন করে ফেলবো আপা..আমি ঘরের ভেতরই ছটফট করে উঠলাম..পাগলের মত করছিলাম...

ঠিক এই মুহূর্তে কলিং বেল বেজে উঠলো কয়েকবার..


আপা আমাকে শান্ত হওয়ার কথা বলে তড়িঘড়ি করে চোখ-মুখ মুছে দরজা খুলতে গেল..

দরজা খোলার শব্দ হতেই অমানুষ দুলাভাইয়ের কণ্ঠ শুনলাম..ঘড়ির কাটার দিকে খেয়াল হলো-


অফিস টাইম শেষ...

ঢুকেই আপাকে জিজ্ঞাসা করছে,

" তোমার এমন বেহাল অবস্থা কেন..?

কি হয়েছে তোমার...??"


এটা শুনেই আমার ভেতর কি যেন হয়ে গেলো..আমার চোখ যেন রক্তচক্ষু হয়ে আছে,।শরীরে মনে হলো,কোত্থেকে অনেক জোর অনুভব হলো..বিদঘুটে গরম হলো শরীর..রাগ ক্ষোভ পুরো মাথায় চড়া..পাগলের মত করতে করতে

আমার ঘরে টেবিলের ড্রয়ারে রাখা ইন্সট্রুমেন্ট বক্সের ভেতর থেকে আমি একটা ছুরি হাতে নিয়ে ঘরের দরজা মাড়ালাম--


"আজকেই আমি ওই লোকটাকে খুন করে ফেলবো.."

চলবে


গল্পঃশাস্তি

পর্বঃ৪


অফিস টাইম শেষ...

লোকটা ঢুকেই আপাকে জিজ্ঞাসা করছে,

" তোমার এমন বেহাল অবস্থা কেন..?

কি হয়েছে তোমার...??"


এটা শুনেই আমার ভেতর কি যেন হয়ে গেলো..আমার চোখ যেন রক্তচক্ষু হয়ে আছে,।শরীরে মনে হলো,কোত্থেকে অনেক জোর অনুভব হলো..বিদঘুটে গরম হলো শরীর..রাগ ক্ষোভ পুরো মাথায় চড়া..পাগলের মত করতে করতে

আমার ঘরে টেবিলের ড্রয়ারে রাখা ইন্সট্রুমেন্ট বক্সের ভেতর থেকে আমি একটা ছুরি হাতে নিয়ে ঘরের দরজা মাড়ালাম--


"আজকেই আমি ওই লোকটাকে খুন করে ফেলবো.."


আমি পর্দা সরাতেই দেখি আপা হুড়মুড় করে আমার ঘরে ঢুকছে..কেউ কাউকে খেয়াল করিনি.

ধাক্কা লাগতেই,ছুরিটা বেসামাল হয়ে আপার হাতের কোণায় টান লেগে আমার হাতের কোণায় লেগে হাত একটু কেটে গেল.. 


আপা ব্যাপার‍টা বুঝতে পেরে আমাকে আজড়ে ধরে ঠেলতে ঠেলতে ঘরে নিয়ে আমার ঘরের ছিটকিনি দিলো..আপার হাত কেটেছে আমার হাত কেটেছে সেদিকে একটুও খেয়াল নেই আমার..

আমি ফুসছি..অনেক জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি আর ফোপাচ্ছি--

"আপা...আ..আপা..তুই আমাকে ছেড়ে দে,আমি ওই অমানুষ টাকে খুন করে ফেলবো. তুই সরে যাহ...."


আপা আমাকে থামানোর চেষ্টা করছে..

আমার হাত থেকে রক্ত বেরিয়েই যাচ্ছে..

কোন কিছুর দিকে এক ফোটাও নজর নেই আমার..

আমার মাথায় খুন চেপে আছে...


চোখের পলকে যেন আমার আপার গায়ের কালচে দাগটাই ভাসছে..কত কষ্টই না করে আমার আপা সব লুকিয়ে..এসব মনে করে আমার রাগ কিছু তেই মাথা থেকে নামছে না..আপা কি জানি বলছিলো আমাকে।আমার মাথাতেই ঢুকছে না....


আমি আপার হাতের ভেতর থেকে আমাকে ছুটিয়েই মেঝেতে পড়ে যাওয়া চাকু,নিয়ে উঠে গেলাম..

আপা কোনরকমে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে,

"মণি,তুই আমার কথা শোন..পাগলামী ছাড়...."

বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলো...

আপার কান্নার আওয়াজ আমাকে কাতর করে দিলো....

আমি আপাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলাম--


"আপা,তুই কেন এতো কষ্ট করতেছিস একা একা..কেন তুই এই দেড় বছরে একটা বারও আমাদেরকে কিছু বলিস নাই..কেন তুই এই অমানুষটাকে ছেড়ে গেলি না...??"


আপা আমার মাথা বুকে জড়িয়ে ধরে অসহায়ের মত কাঁদতে লাগলো..

"আমি অনেকবার চেয়েছি,ওই লোক টাকে ছেড়ে যেতে..আমাদের মা নেই,আব্বা নিজে হাতে বিয়ে দিয়ে যদি জানতে পারে তার মেয়ে কোন নরকে আছে তাহলে আব্বা এই কষ্ট সহ্য করতে পারবে না..আমি অপেক্ষা করেছি এতোদিন ধরে যেন, লোকটা কোনভাবে ভালো হয়ে যায়..."


আমি সাথে সাথে ঘৃণায় মুখ সরিয়ে নিলাম.

"ওই লোক কোনদিন ভালো হবে না,আপা..তোর মত মেয়ের জীবন যে নষ্ট করতে পারে,সে কোনদিন ভালো হবে না..তুই আমার সাথে বাড়ি চল আপা..আমি এখানে তোকে একদিনও থাকতে দিবো না...."


আপা নিঃশ্বাস ছাড়লো অনেক বড় করে..তারপর একদিকে তাকিয়ে বলতে থাকলো...

"জানিস??

যে মানুষটার হাত ধরে এই ঘরে আসলাম,সুখের সংসার করবো..সেই মানুষ টা যখন অন্যের কাছে থেকে এসে আমার গায়ে হাত তোলে,তখন মনে হয় ঘুমন্ত মানুষটাকে যদি গলা টিপে মেরে ফেলে নিজে মরে যেতাম তাহলে বোধ হয় শান্তি পেতাম..

জানিস,মণি???

কয়েকদিন মাঝরাতে আমার এমনই মনে হতো...

সাথে সাথেই তোর আর আব্বার চেহারা মনে পড়তো..তখন নিজেকে সামলে নিতাম,আমাকে তোদের জন্য বাঁচতে হবে...."


আমি আপার দিকে তাকিয়ে কান্না অবস্থায়ই কপালে একটা চুমু দিলাম.আর বললাম--

"আপারে,অনেক কষ্ট করেছিস তুই...

আমার আর আব্বার দোহাই লাগে হয় তুই আমার সাথে কালই বাড়ি যাবি,না হয় আমি কিছু একটা করে ফেলবো...."


আপা সাথে সাথে আমার মুখে হাত দিয়ে বাকি কথা ঠেকালো..আর আমার একটা হাত টেনে ওর মাথায় দিয়ে আমাকে দিব্ব্যি দেওয়ালো--

"আমার দিব্ব্যি থাকলো তোর,যাই হয়ে যাক তুই এমন কিছু করবি না... "


আমি মেনে নিলাম আপার দিব্ব্যি...।।

আপাকে বললাম--

"তুই তাহলে কালই এই বাড়ি ছেড়ে আমার সাথে চলে যাবি..আমরা তোকে আগলে রাখবো আপা..তুই দেখিস..."


বলেই আমি আপার পা জড়িয়ে ধরলাম..

আপা কেমন জানি নেতিয়ে গেল..

কিছুক্ষণ কাঁদলো..তারপর আমার মাথায় হাত দিয়ে বললো---

"যে ভুল,লোকটা আমার সাথে করেছে..তার কোন শাস্তি হয়তো দুনিয়াতে নেই..আমি চলে যাবো কাল সকালেই তোর হাত ধরে..খুব ভোর থাকতেই দুইবোন বের হয়ে যাবো..আর কোনদিন ফিরেও তাকাবো না এদিকে..."


আপার খুব কষ্ট হচ্ছিলো..

আমি বুঝতে পারছিলাম...... 

আপাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলাম...

আপা একটা ছোট বাচ্চার মত ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিলো..আস্তে আস্তে আপার গলার আওয়াজ কমে আসছিলো যেন.....


আমাদের দরজায় কড়া নড়লো...

অমানুষটা ছাড়া আবার কে...

আপা আমাকে ঠেকালো..

"দরজা খুলতে হবে না..."


আমিও চুপ করে বসে থাকলাম আপার কাছেই...

কয়েকবার জোরে ধাক্কালো দরজা..

আপা নিশ্চুপ হয়েই থাকলো..একসময় দরজার জোরে ধাক্কানো দেখে আপা নিজেই উঠতে গেল..আমি আপাকে ধরে আস্তে আস্তে তুলে ধরলাম..আপা খুব দুর্বল হয়ে গেছে বুঝতে পারছিলাম...

আমি আপাকে আজড়ে ধরে রেখেছি..আপা যেন না পড়ে..দরজা খুলতেই দেখি--

অমানুষটা রোবটের মত দাঁড়িয়ে আছে..চোখে মুখে বিস্ময়,আর কিসের যেন একটা অজানা ভয়ের চেহারা,এমনকি চেহারার রং বদলে গেছে,মুখটা কেমন জানি কালচে দেখা যাচ্ছে..আমি পাত্তা দিলাম না..মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম..

কাঁপা স্বরে আপাকে জিজ্ঞাসা করলো--

"কি হয়েছে,তোমাদের???

আমাকে কিছু তো বলো..."


আপা আস্তে আস্তে বলে উঠলো--

"দুইবোন মিলে ঝগড়া করেছি..আমাদের নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না.."

অমানুষটা হাত এগিয়ে আপাকে ধরতে গেল।।।

"মনে হচ্ছে,তোমার শরীরটা ভালো নেই..তুমি ঘরে চলো.."


আপা আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল..কিন্তু বাড়িয়ে লোকটাকে ধরলো না..লোকটা আমার দিকে হতভম্ব হয়ে একবার তাকালো,আমি চোখ সরিয়ে নিলাম সাথে সাথে..আপার পেছন পেছন হাটছি,আপা যেভাবে টলছে যেন পড়ে না যায়...


কয়েক পা এগিয়েই আপা থেমে গেল দেওয়াল ধরে..কেমন জানি হাপাতে হাপাতে আপা বলে উঠলো --

"মণি,আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগছে রে..."

আমি সাথে সাথে আপাকে ধরলাম..লোকটাও ছুটে এসে আরেকপাশে ধরলো আপার..আপার অবস্থা দেখে প্রচণ্ড ঘাবড়ে গেলাম...আপার চোখ কেমন জানি উল্টে যাচ্ছিলো..আমি ভয়েই কান্না করে দিলাম--

"এই আপা,আপা..চোখ মেলে দেখ..."


অমানুষটাও চেঁচিয়ে উঠলো--

"তুমি এমন করছো কেন..??"


আপা চোখে মুখ নড়াতে পারছে না..

ঢলে পড়ে যেতে গেল..লোকটা সাথে সাথেই আপাকে আড়কোলা করে বিছানায় নিয়ে গেল...

আপাকে রেখেই লোকটা ফোন হাতে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ডাক্তারকে ফোন করতে লাগলো..


আমি আপা আপা বলে কাঁদছি..

আপা কোন উত্তর নিতে পারে না..

একসময় আপা জোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে কেমন জানি আবছা করে জড়ো কণ্ঠে বলে উঠলো--

"মা.....মা....."

বলেই আপা চোখ বন্ধ করে ফেললো....


আমি "আপা..." বলে চিৎকার করে উঠলাম..

আমার বুক চিরে বের হলো সেই ডাক..লোকটা ছুটে এসে আপার হাত পা ম্যাসেজ করা শুরু করলো আপার নাম ধরে ডেকে..তার কণ্ঠেও কেমন জানি আর্তনাদ...

আমার আপা চোখ মেলছে না..

আমার চারপাশ কালো হয়ে এলো..

চলবে


গল্পঃশাস্তি

পর্বঃ৫


আমি আপা আপা বলে কাঁদছি..

আপা কোন উত্তর নিতে পারে না..

একসময় আপা জোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে কেমন জানি আবছা করে জড়ো কণ্ঠে বলে উঠলো--

"মা.....মা....."

বলেই আপা চোখ বন্ধ করে ফেললো....


আমি "আপা..." বলে চিৎকার করে উঠলাম..

আমার বুক চিরে বের হলো সেই ডাক..লোকটা ছুটে এসে আপার হাত পা ম্যাসেজ করা শুরু করলো আপার নাম ধরে ডেকে..তার কণ্ঠেও কেমন জানি আর্তনাদ...

আমার আপা চোখ মেলছে না..

আমার চারপাশ কালো হয়ে এলো..

আমার হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে..

ছোটবেলাতে যখন মা মারা গিয়েছিলো,

আমাকে আপা বুকের ভেতর সবটুকু সময় লাগিয়ে রেখেছিলো..কিন্তু আমার আপার যদি কিছু হয়,আমি কার বুকে বেঁচে থাকবো...???

আমার শরীরের সমস্ত শক্তি ফুরিয়ে আসছিলো..

মনে মনে একটা কথায় বলছিলাম হুশ থাকা পর্যন্ত,

"আল্লাহ, আমার আপাকে সুস্থ করে দাও তুমি...

আর যদি তাকে কেড়ে নিতে চাও,তাহলে আমাকেও সাথে নিয়ো আপার সাথে...."


আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করে আপার পাশেই ঢলে পড়লাম আমি..আমার হুঁশ ফিরলো,কে জানি আমাকে মণি মণি করে ডাকছে...

আমি কোনরকম চোখ মেললাম...


দেখি আপা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,পাশে শুয়েই..হালকা হাসিমুখে তাকিয়ে আছে আপা..আমি খুশিতে চিৎকার করে উঠেই আপাকে জড়িয়ে ধরলাম আর বললাম-

"আমার আপা ঠিক আছে..আমার আপা ঠিক আছে...."


আপাও আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার পিঠে হাত বুলালো..কিছুক্ষণ এভাবেই থাকলাম দুইবোন..

খেয়াল করলাম কে যেন বলছে--

"এবার তোমার আপাকে ছাড়ো,আমি তাকে আরেকটু দেখবো.."


আমি ফিরে তাকিয়ে দেখি,ডাক্তার আমাকে বলছে কথা গুলো..তারপাশে ওই লোকটা দাঁড়িয়ে আছে..

আমি আপার কাছে থেকে একটু সরে বসলাম..

ডাক্তার আপার দিকে ঝুঁকে আপাকে দেখতে থাকলো......


চোখ,জিহবা ভালোভাবে দেখে একটু গম্ভীর হয়ে 

বললো--

"মানসিক চাপ শরীরের উপর খুব বেশি করে পড়ছে..এই অবস্থা চললে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে..নিজের দিকে খুব বেশি করে খেয়াল করবেন..ঘুমের প্রয়োজন খুব বেশি..যে ওষুধ গুলো দিচ্ছি, ওগুলো নিয়মিত খাবেন..আর অবশ্যই এক সপ্তাহ পরে আমাকে দেখাবেন..."


আপা মাথা নাড়ালো..তারপর ডাক্তার হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো--

"এই যে আপার ছোটবোন..আপার দিকে অনেক বেশি বেশি খেয়াল রাখতে হবে কিন্তু.."


আমিও সজোরে মাথা নাড়িয়ে বললাম--

"হুম..খুব খেয়াল রাখবো এখন থেকে আমার আপার..."


শুনেই ডাক্তার উঠে দাঁড়ালো..প্রেসক্রিপশন লিখে দুলাভাইয়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওষুধ গুলোর নিয়ম বুঝিয়ে দিলো আর বললো সবরকমের মানসিক চাপ থেকে আপাকে বাইরে রাখতে...

সে মাথা নাড়ালো।।আর ডাক্তারের পিছু পিছু গেল ওষুধ কিনে আনতে....


আপার ফোন বেজে উঠলো..

আব্বা ফোন করেছে..আমিই ধরলাম,

আব্বা ইশারা করলো আমাকে, যেন কিছু না বলি..

আমিও মেনে নিলাম...খুব সুন্দর করে আব্বার সাথে কথা বলছিলাম..


একসময় আব্বা প্রশ্ন করলো--

--কতদিন তোদের দেখি না মা,বাড়ি আসবি কবে???

আমি আনমনে বলে ফেললাম--

--মনে করো আব্বা,কাল ঘুম থেকে উঠেই আমাদেরকে দেখবে চোখের সামনে...

আব্বা হেসে উঠলো।।।

আমি আব্বাকে বললাম--

--আচ্ছা আব্বা..আমি আর আপা যদি সারাজীব তোমার চোখের সামনে থাকি..আমাদের রাখবে তো???


আব্বা আবারো হেসে উঠে কেমন জানি মায়া করে বলে উঠলো--

--রাখবো তো..আমার এই ঘরটাই তো তোমরা..সারাজীবন রেখে দিবো আমার দুই নয়নের মণিদের....


আব্বার কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে এলো..

ফোনটা হাসিমুখে রেখে আপাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকলাম আর বললাম--

--আমি তোর খুব খেয়াল রাখবো,আপা..কিচ্ছু হতে দিবো না..তুই দেখে নিস...


তারপর আপা হালকা হাসি দিয়ে কেমন জানি উদাসীন ভাবে তাকিয়ে রইলো দেয়ালের দিকে..


কিছুক্ষণ পরে,লোকটা ওষুধ নিয়ে ফিরে এলো..

আপার মাথার কাছে বসে বললো--

--কি খাবে তুমি??ওষুধ খেতে হবে তোমার...

আপা মুখ ফিরিয়ে নিলো..বললো--

--আমার তো ক্ষিদা নেই..এমনিই ওষুধ খেয়ে নিবো..


লোকটা মানা করে উঠে গিয়ে একটা প্লেটে কিছু খাবার নিয়ে এলো..এনে আপার মুখের সামনে ধরলো..আপা কেমন অসহায়ের মতন তাকালো..

আমার তো গায়ে যেন আগুন ধরে যাচ্ছে দেখে,যার জন্য এতো কষ্ট আমার আপার..তার এখন নাটকীয়ভাবে দরদ উতলে উঠতেছে...

চুপচাপ সহ্য করছি শুধু আপার জন্য..


আপা প্লেট হাত দিয়ে সরিয়ে দিলো...

লোকটা এবার প্লেট সামনে এনে,নিজের হাতে ভাত মেখে এক লোকমা আপার মুখের সামনে ধরলো..

আর বললো---

"প্লিজ একটু খেয়ে নাও..তোমার অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে গিয়েছে..."


লোকটার চোখে মুখে তখন কেমন জানি ভীষণ মায়ার ছায়া ভেসে উঠছিলো..আর গলাটাও একেবারেই নরম..কাব্য পেইজে সকল পাঠ পেয়ে যাবেন

আপা তখন কেমন করুণ ভাবে যে, তাকালো লোকটার দিকে...আমারই দেখে বুকের ভেতর কেমন ব্যাথা করে উঠলো..

কিছুক্ষণ চুপ থেকে আপা গাল এগিয়ে হা করলো..

লোকটা আলতো হাসিমুখ করে খাবারটা দিলো আপার মুখে..আপা সাথে সাথেই খুব নীরবে চোখের পানি ছেড়ে দিলো..তার তীব্র কষ্ট যেন,মুখেই ফুটে উঠছিলো..কেমন ভয়ার্ত ভাবে ফুপিয়ে উঠে আপা মুখে হাত ঠেকাতেই হড়হড় করে বমি করে দিলো....


লোকটা সাথে সাথে প্লেট রেখে দিয়ে আপার পেছনে গিয়ে কপাল ধরলো..আর পিঠে হাত বুলানো শুরু করলো..

আমি তড়িঘড়ি করে এক দৌড়ে পানি নিয়ে এলাম আর আপার মুখের সামনে বালতি ধরলাম..

দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো,আপার খুব কষ্ট হচ্ছে...


আপা বমি করা বন্ধ করলে,আপার মুখ ধুইয়ে দিলো লোকটা..আমি দেখছি আর অবাক হচ্ছি..যদিও আমার মনের ভেতর ভালো লাগছিলো না..

আপাকে আস্তে করে শুইয়ে দিলো লোকটা..

আমাকে বললো..তুমি ওর পাশে বসো,আমি একটু বাইরে থেকে আসছি...


আমি উত্তর না দিলে সোজা আপার কাছে বসে পড়লাম...লোকটা বাইরে যাওয়ার আগে তেল-পানি এনে দিলো আপার মাথায় দেওয়ার জন্য..।আমি হাত থেকে নিয়ে আপার মাথায় দিয়ে দিলাম..

আপা একপাশে ফিরে শুয়ে থাকলো..

এতোক্ষণে আপা লোকটার দিকে একবারো তাকালো না...

লোকটা আস্তে আস্তে বাইরে চলে গেল...


আমি আপার মাথায় হাত বুলাচ্ছি আর প্রশ্ন করছি..

আপা তোর ভালো লাগছে এখন একটু.??

আপা উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকলো কয়েক মুহুর্ত.. তারপর খুব দুর্বল স্বরে বলে উঠলো-


"মণি,তুই আমাকে এখনি বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবি...??"

চলবে


গল্পঃশাস্তি

৬ এবং শেষ পর্ব


আমি উত্তর না দিয়ে সোজা আপার কাছে বসে পড়লাম...লোকটা বাইরে যাওয়ার আগে তেল-পানি এনে দিলো আপার মাথায় দেওয়ার জন্য..।আমি হাত থেকে নিয়ে আপার মাথায় দিয়ে দিলাম..

আপা একপাশে ফিরে শুয়ে থাকলো..

এতোক্ষণে আপা লোকটার দিকে একবারো তাকালো না...

লোকটা আস্তে আস্তে বাইরে চলে গেল...


আমি আপার মাথায় হাত বুলাচ্ছি আর প্রশ্ন করছি..

আপা তোর ভালো লাগছে এখন একটু.??

আপা উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকলো কয়েক মুহুর্ত.. তারপর খুব দুর্বল স্বরে বলে উঠলো-


"মণি,তুই আমাকে এখনি বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবি...??"


আমি একটু অবাক হয়েই রাজী হয়ে গেলাম--

"হ্যাঁ,আপা..পারবো..কিন্তু তোর এই শরীরে এতো টা কষ্ট নেওয়াটা ঠিক হবে না আপা..

তুই আগে একটু সুস্থ হ...তারপর আমরা এখান থেকে চলে যাবো..."


আপা একটু অভিমান কণ্ঠেই বলে উঠলো--

"আমি পারবো..কষ্ট হবে না..এখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে..."


আপার কথাটা শুনে আমার বুকের ভেতর খচখচ করতে লাগলো--

"কত কষ্টই না হচ্ছে আমার আপার.."

আপা আমাকে জলদি করতে বললো..

আমি আর কথা না বাড়িয়ে আপার ফোন থেকে আপাদের পরিচিত এক ড্রাইভার কে কল করলাম...

উনাকে জলদি করে আসতে বললাম...


তারপর আমি আপার পাশে বসে,মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর আপার কষ্টটাকে বোঝার চেষ্টা করছি...

আপাকে জিজ্ঞাসা করলাম আস্তে করে--

"তোর আবার বমি হবে না তো,আপা???এক ফোটাও শক্তি নেই এখন তোর গায়ে..রাস্তায় বমি শুরু হলে তোকে নিয়ে কি করবো বল তো..."


আপা হুহু করে কেঁদে উঠলো --

"আমি তখন খেতে চাইনি রে একদম..কিন্তু লোকটার শেষ স্পর্শ টুকু পেতে চেয়েছিলাম.তাই আমি বেশি না করতে পারিনি..."


আমি আপার দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলাম..

এতো কষ্ট,এতো যন্ত্রণা,এই নরকের ভেতর ভোগ করেও আপা কিনা একটু ভালোবাসার কাছে কাতর ছিলো...অথচ অমানুষটা আপাকে বুঝলোই না...


আমার যদি ক্ষমতা থাকতো,তাহলে অমানুষটাকে পৃথিবীর সব থেকে বড় শাস্তিটাই দিতাম..

আপার মনোযোগ সরাতে জিজ্ঞাসা করলাম--

"আপা ব্যাগ গুছাতে হবে না...?তুই আমাকে বলে বলে দে,আমি গুছিয়ে নিচ্ছি..."


আপা মুখ ফিরিয়ে দিয়ে বললো..

"শুনেছিলাম,মেয়েরা স্বামীর বাড়িতে আসে একবারে মৃত্যুর পরে ফিরে যায়..আমিও যেহেতু চলে যাচ্ছি,মৃত মানুষের মত খালি হাতেই চলে যাবো এই ঘর থেকে..."


আমার পুরো শরীর শিউরে উঠলো আপার মুখের দিকে তাকিয়ে..ফর্সা মুখটা বোধ হয় আকাশ ছোঁয়া যন্ত্রণায় নীল হয়ে গেছে...আপা স্তব্ধ হয়ে বসে আছে..আমিও নির্বাক হয়ে আপাকে দেখছি...


হঠাৎ লোকটা নিঃশ্বাস না নেওয়া দম ভরে,ছুটতে ছুটতে এসে আপার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো--

"নীলা...তুমি নাকি বাড়ি যাচ্ছো এখনি..??ড্রাইভার ফোন করেছিলো..তোমার মাথা ঠিক আছে??

এই শরীরে কিভাবে বের হবে তুমি..??একটু সুস্থ হও তুমি আমি নিজে গিয়ে তোমাকে দিয়ে আসবো..."


আপা একটু চুপ থাকার পর বললো--

"আমার এই শরীরে বাবার কাছে থাকতে ইচ্ছে করছে..আমাকে বাঁধা দিও না,হয়তো আমাকে ঠেকানো যাবে না..."


লোকটা মুখটা কেমন অসহায়ের নত করে সরে গেল একটু আপার থেকে...একবার আমার দিকে তাকিয়ে তারপর আপার মুখের দিকে চেয়ে থাকলো.আপা অন্যদিকেই তাকিয়ে আছে..

লোকটার মুখ দেখেই মনে হচ্ছিলো--

"সে সব বুঝতে পারছে..তার বলার কিছুই নেই... "


আমি আমার ঘরে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম আমার খুব তাড়াহুড়ো করে...তারপর আপাকে উঠালাম ধীরে ধীরে..লোকটা বোবার মত তাকিয়ে আছে,তার যেন কিছুই করার নেই..

আপা একসময় একটু টলে পড়তে গেল..


লোকটা জলদি করে হাত এগিয়ে দিলো ধরার জন্য..আপা ধরতে দিলো না..একাই আমাকে ধরে দাঁড়িয়ে গেল..লোকটা কি যে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আর বললো--

--আমি তোমাকে এতো খারাপ অবস্থায় দেখবো কখনো ভাবিনি..

আপা উত্তর দিলো--

--আমার অবস্থা এমন হয়ে যাবে আমিও কখনো ভাবিনি..


আমি নীরব দর্শকের মত তাকিয়ে দেখছিলাম..

গাড়ির হর্ণ বেজে উঠলো..

ওটা শুনেই আমার আপা কেমন জানি চমকে উঠলো...আর লোকটা মাথাটা একেবারে নুইয়ে দিয়ে আপাকে বললো-

--"আমার ভুলের শাস্তি তুমি নিজেকে দিও না..

ভুল থেকে বেরিয়ে আসতে চাই যদি,তুমি কি আমাকে সুযোগ দিবে একবার...??"


কথাটা শুনেই আপা কেমন জানি পাথরের মত শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো....

কিছু বলছে না...

লোকটা কেমন একটা আর্তনাদ করে উঠলো..

--প্লিজ নীলা..কিছু বলো তুমি..এভাবে শাস্তি দিও না আমাকে...আমি ক্ষমা পেতে চাই... 


আপা আমার হাত কেমন জানি শক্ত করে ধরে হাঁটা শুরু করলো একটু একটু করে...মেইন দরজার কাছ পর্যন্ত গিয়ে একটু থেমে গেল.....


লোকটা পেছন পেছন ছুটে এলো..কাতর হয়ে বললো-

"দোহাই লাগে,কিছু বলে যাও আমাকে..."


আপা ঘুরে তাকালো না..মুখটা হালকা সাইড করে নিয়ে বললো--

"আমি তোমাকে নীরবে হাজার বার সুযোগ দিয়েছি ভুল শুধরানোর..আমি চলে যাচ্ছি..এখন থেকে তোমাকে লুকিয়ে ভুল করতে হবে না..আর ক্ষমার সুযোগটা তোমাকে দেওয়া হবে না..(তারপর আপা অনেক বড় করে দম নিয়ে, পেটে আলতো করে হাত দিয়ে বললো)"তোমার ভুলের শাস্তি এটাই,তুমি তোমার সন্তানকে তোমার পরিচয় নিজে শেখাতে পারবে না..."


এই কথা শুনেই আমি এতোটা চমকে গেলাম যে,আমি কেমন যেন কেঁদে উঠলাম..হা করে আপার দিকে তাকিয়ে দেখি আপা যেন একটা রোবটের মত দাঁড়িয়ে আছে..আমি আপাকে কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই,আপা অতটা দুর্বলতা নিয়েও আমার হাত হ্যাচকা টান দিয়ে হাঁটা শুরু করলো..আমি যতটা  অবাক হয়েছিলাম তার থেকেও বড় শক যেন লোকটা পেয়েছিলো...


পেছন থেকে লোকটার আর্তনাদ শোনা গেল... 

আমি পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি,

লোকটা মেঝেতে আছড়ে কাঁদছে..

আপার কান পর্যন্তও শব্দ আসছিলো..

কিন্তু একটা বার ভুল করেও আপা ফিরে তাকালো না...লোকটার জন্য আমার একটু মায়া হলো..


কে বলেছে তার ভুলের শাস্তি দুনিয়াতে নেই..

আমার তো মনে হল,এর থেকে বড় শাস্তি আর কিছুই নেই...শেষ।


পর্রবের আরও গল্প পড়ুন।