মানুষ টাকা দেখে বয়স আর মন না | টাকা ছাড়া পুরুষ মানুষ: কেউ পছন্দ করে না

 গল্প: টাকার ওজন বেশি, ভালোবাসার নয়

টাকার ভালোবাসা

সারা জীবন শুধু স্বপ্ন দেখে কেটেছে—কোনোদিন সংসারে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য থাকবে, মায়ের মুখে হাসি থাকবে, বাবার কপালে চিন্তার ভাঁজ থাকবে না, আর ভালোবাসার মানুষটা হবে তার জীবনের সবচেয়ে বড় আশ্রয়। ছোটবেলায় বাবা যখন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতো, তখন মা দুটো বাড়িতে কাজ করে যা আয় করতো, তা দিয়েই চলতো সংসার।


কখনো ভাতের সঙ্গে লবণ, কখনো পান্তা-লঙ্কা, আর কখনো শুকনো মুখে রাত—এসবই ছিল নিত্যদিনের গল্প।


কিন্তু স্বপ্ন ছিল অন্যরকম। সে জানতো, এই দারিদ্র্য চিরকাল থাকবে না। বইয়ের পাতা ছিল তার একমাত্র মুক্তির পথ। দিনের আলো আর রাতের নিস্তব্ধতা মিলিয়ে যে যতটুকু সময় পেত, পড়তো। না খেয়ে থেকেছে, তবুও পড়া ছেড়ে দেয়নি। একটা সময় বৃত্তি পেয়ে, সবার চোখে শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।


শিক্ষা তাকে পৌঁছে দিয়েছিল এমন এক জায়গায়, যেখান থেকে সে সোজা বিদেশের পথে। পরিশ্রমের কোনো ঘাটতি ছিল না তার মধ্যে। সে জানতো, টাকা আসবে, সময় আসবে, কিন্তু তার ‘মানুষ’ যেন হারিয়ে না যায়।


তার পৃথিবীতে তখনও একজন মানুষ ছিল—যে ছোটবেলা থেকেই পাশে ছিল, প্রতিটা জয়ের পেছনে যার নীরব শুভকামনা ছিল, যে বলে এসেছিল—


> “আমি তোর অপেক্ষায় থাকবো। যেদিন ফিরবি, আমার হাত ধরবি, আমি চুপচাপ বসে থাকবো শুধু তোর জন্য।”


এই একটি বাক্যে বেঁচে ছিল সে। একাকী বিদেশের মাটিতে, রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে, মাথায় স্বপ্ন আর বুকে আশা নিয়ে সে এগিয়ে গিয়েছিল। টাকা জমেছে, জীবনে স্থিতি এসেছে, আর একদিন সে ফিরে এসেছে—নিজের মানুষকে, নিজের শেকড়কে আলিঙ্গন করতে।


কিন্তু দেশে ফিরে সে যা দেখলো, তাতে মাথা ঘুরে গেল।


মানুষটা—যার অপেক্ষায় সে বছরের পর বছর কাটিয়েছে—সে আজ আর তার নয়। সে আজ অন্য কারও জীবনসঙ্গী। প্রশ্ন করার ভাষা খুঁজে পায়নি সে। শুধু শুনেছে,


> “সময় পায়নি তোর খোঁজ নিতে, জানতাম না তুই ফিরবি। আর কি করবো বল, পরিবার চেয়েছিল, ছেলেটা অনেক টাকা ওয়ালা…”


হাসিমুখে শুনেছিল সে। ভেতরে বুকটা চিৎকার করছিল, কিন্তু মুখে কিছু বলল না।


সবাই বলেছিল,


> “তুই তো এখন বড় মানুষ, টাকা আছে, গাড়ি আছে, দেখতে ভালো—তোর জন্য লাইন পড়বে।”


হ্যাঁ, লাইন পড়েছিল।


মানুষ এসেছিল সম্পর্কের জন্য নয়, এসেছিল টাকার ঘ্রাণে মোহিত হয়ে। কেউ বলেছে,


> “আপনার মতো ছেলে হলে আমার মেয়েকে এখনই বিয়ে দিয়ে দেব,”

আবার কেউ বলেছে,

“একটু বেশি বয়স হয়েছে, কিন্তু টাকাটা আছে তো, সমস্যা হবে না।”


কেউ কখনো জিজ্ঞেস করেনি, “আপনার মনটা কেমন?”

এমনকি মা-ও এখন বলে,

> “বিয়েটা করে ফেল, এত টাকা কামাইছ, এখন একটা সংসার দরকার।”

সে হাসে, মাথা নেড়ে বলে,

> “ঠিক আছে।”


কিন্তু সে জানে, সে আজ অনেক কিছু পেয়েছে, কিন্তু নিজের ‘মানুষ’টিকে হারিয়ে ফেলেছে। ভালোবাসা যদি টাকায় বিক্রি হয়, তাহলে ভালোবাসা আর থাকে না—তা শুধু একধরনের ‘চুক্তি’।


এখন সে গাড়িতে চড়ে, অফিসে যায়, হাজার মানুষের সামনে বক্তৃতা দেয়—তবুও রাতে একা থাকে। বিছানায় শুয়ে তাকিয়ে থাকে ছাদের দিকে।


কখনো চোখ বেয়ে জল পড়ে—কারণ মনটা কেউ চায়নি, শুধু দাম চেয়েছে।


আজ সে জানে,

টাকা মানুষকে কদর দেয়, মনকে নয়।

---

গল্পের শিক্ষা

এই দুনিয়া এখন টাকার পাগল।

টাকা দিয়ে মানুষ কেনা যায়, ভালোবাসা নয়।

টাকা দিয়ে বিয়ে হয়, সম্পর্ক নয়।

টাকা দিয়ে সংসার চলে, হৃদয় নয়।

এটাই বাস্তবতা।

যেখানে "দেখতে ভালো, আয় ভালো, গাড়ি আছে"—তবেই মানুষ পছন্দ করে।

মনটা কেমন, কষ্ট পায় কি না, কাউকে মিস করে কি না—এমন প্রশ্ন আর কেউ করে না।

এই গল্পটা সবার নয়।

কিন্তু যারা বুঝবে—তারা জানে, কতটা জ্বালা লুকিয়ে থাকে এই “টাকার” পেছনে।

Disclaimer / Story Policy

This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.

We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.

If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.

"এই গল্পটি ‘জীবন যুদ্ধ গল্প.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com