গল্প: "প্রবাসীর স্ত্রীর প্রেমিক"
আমার নাম রায়হান।
প্রবাসে ছিলাম প্রায় আট বছর।
ছোটবেলায় বাবা-মা আমার সব কিছু। আমি ছোট থেকেই বুঝতাম, তারা না থাকলে আমি কেউ না।
বড় হয়ে যখন বিয়ে করলাম, ভাবলাম একটা মেয়ে পাবো, যে আমার মায়ের মতো হবে—শান্ত, নির্ভরযোগ্য, ধৈর্যশীল।
তার নাম ছিল নিঝুম।
নাম যেমন, স্বভাব তেমন—শুরুতে অন্তত তাই মনে হয়েছিল।
প্রথম এক বছর আমি দেশে ছিলাম। নিঝুমকে নিয়ে স্বপ্ন বুনেছি।
ওকে পড়াতে দিয়েছি, সাজতে দিয়েছি, দামি ফোন, গয়নাগাটি—যা চেয়েছে, তা এনে দিয়েছি।
আমার মা মাঝে মাঝে বলতেন,
“এই মেয়েটার চোখে কিছু লুকানো আছে রায়হান। খুব বেশিই সাজে, বেশিই কথা বলে, বেশি ফোনে ঝুলে থাকে।”
আমি হেসে বলতাম,
“মা, তোমরা পুরনো মানুষ। এখনকার মেয়েরা এমনই হয়।”
তারপর একদিন সময়ের চাপে আবার চলে গেলাম বিদেশে।
ওর চোখে জল ছিল, আমার চোখেও।
কিন্তু তখন জানতাম না, ওর সেই জলের পেছনে কোনো প্রেম ছিল না—ছিল অভিনয়।
প্রথম কয়েক মাস ফোন করতো প্রতিদিন। ভিডিও কলে খুশি দেখাতো।
তারপর ধীরে ধীরে ব্যস্ততা বাড়ল।
বলতো,
“আমি বান্ধবীর বাসায় আছি, একটু পরে কথা বলি।”
“মা-বাবা ভালো আছে, তুমি টাকা পাঠাও, সব ঠিক।”
কিন্তু একদিন ফোন করলাম, মা রিসিভ করেনি।
তারপর কয়েকদিন ফোন বন্ধ।
এক সপ্তাহ পর হঠাৎ নিঝুম জানাল,
“তোমার বাবা-মা অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন।”
আমি স্তব্ধ।
বললাম,
“মা–বাবা দুইজন একসাথে? কী হয়েছিল? কিভাবে?”
ও শুধু বলল,
“ভাইরাস হয়েছিল, খুব দ্রুত শেষ। আমি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু… বাঁচানো যায়নি।”
আমি শূন্য হয়ে গেলাম।
দেশে ফিরে আসার ব্যবস্থা করলাম, কিন্তু তখন কোভিড লকডাউন, ফ্লাইট বন্ধ।
সবচেয়ে কষ্ট হয়েছিল, শেষবার মায়ের মুখটা দেখতেও পারিনি।
তিন মাস পর দেশে ফিরি।
সব বদলে গেছে। নিঝুম আগের মতো নেই।
বাড়ির ভেতর পুরুষের গন্ধ, আমার চিরচেনা ঘরে অপরিচিত কিছু ছায়া।
তারপর ধীরে ধীরে জানতে পারি…
আমার বাবা-মা মারা যায়নি কোন ভাইরাসে।
ওরা মারা গিয়েছিল চরম অবহেলায়। ওদের খেতে দেওয়া হতো না ঠিকমতো, ওদের গায়ে হাত তোলা হতো, মারধর করা হতো।
আর এই সবের পিছনে ছিল নিহাল—নিঝুমের প্রেমিক।
আমি যখন মাসে মাসে টাকা পাঠাতাম, নিঝুম আর নিহাল সেই টাকায় হোটেল, শপিং, বাড়িতে রাত যাপন করতো।
আর আমার বাবা-মা... ফেলে দেওয়া কুকুরের মতো দিন কাটিয়েছেন।
একবার মা প্রতিবাদ করেছিলেন—তাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফেলা হয়েছিল।
বাবা চিৎকার করলেও কেউ শোনেনি।
আমি জানতে পেরেছিলাম প্রতিবেশী রশিদ চাচার কাছ থেকে।
তিনি অনেকদিন ধরেই এসব দেখে যাচ্ছিলেন, কিন্তু ভয়ে কিছু বলতেন না।
আমি আর কাঁদিনি। আমি শুধু প্রতিশোধের আগুনে পুড়ছিলাম।
নিজেকে অনেক ঠাণ্ডা রেখেছিলাম বাইরের চোখে।
তাদের বিশ্বাস করিয়ে দিয়েছিলাম—আমি কিছুই জানি না।
হঠাৎ একদিন বললাম,
“চলো, ঘুরতে যাই। একটু দূরে।”
ওরা রাজি হয়ে গেল।
আমি গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেলাম একটা পুরনো ভাঙা বাংলোতে—যেখানে আগে আমাদের এক আত্মীয় থাকতেন।
সেখানে আমি আগে থেকেই রেখে এসেছিলাম এক জিনিস—এক ধরণের তরল, দেখতে জলের মতো, কিন্তু আসলে এক বায়োলজিক্যাল ভাইরাস।
প্রযুক্তি এখন অনেক কিছু শেখায়।
সেই পানি দিয়ে ওদের চা বানালাম।
তিনদিন পর তারা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লো।
শরীর ফুলে উঠলো, কথা বন্ধ, চোখ লাল।
আমি তখন বলেছিলাম,
“এই ভাইরাস তোমাদের মারবে না, তোমাদের ছিঁড়ে-খুঁড়ে খাবে।
তোমরা শুধু মরবে না—তোমরা বুঝবে, কীভাবে নিঃশেষ হওয়া যায়।”
তারপর আমি ওদের হাসপাতালে না নিয়ে, ওদের ঠিক সেই ঘরে ফেলে রাখলাম।
তিনদিন ধরে শুধু এক বোতল পানি দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম, যাতে তারা বেশি দিন কষ্ট পায়।
শেষে যখন নিঝুম কান্নাকাটি করে বলছিল,
“ক্ষমা করে দাও... আমি ভুল করেছিলাম... আমাকে বাঁচাও...”
আমি বলেছিলাম,
“তুমি শুধু প্রতারণা করোনি, তুমি খুন করেছো।
আমার মা-বাবা মরে গেছে অভিমানে, আর তুমি মরবে নিজের পাপের ভেতর পুড়ে।”
---
জীবন থেমে থাকে না:
আজ আমি আবার প্রবাসে ফিরছি, কিন্তু ভেতরে শূন্যতা ছাড়া কিছু নেই।
প্রতিশোধ মিষ্টি হয় না, তা শুধু তিক্ত এক শূন্যতা এনে দেয়।
তবে আমি প্রতিশোধ নিইনি, আমি শুধু ন্যায় বিচার করেছি…
তুমি যদি কারো সবকিছু হয়ে যাও, তাকে ফেলে যাওয়ার আগে একবার ভাববে—কার হৃদয়টা পুড়বে, আর কিভাবে।
Disclaimer / Story Policy
This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.
We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.
If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.
"এই গল্পটি ‘জীবন যুদ্ধ গল্প.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com