গল্প: প্রেমিকা যখন শাশুড়ী হয়
পনেরো বছর পর দেশে ফিরেছি। বাবা-মা যেন মুখে হাসি লুকিয়ে রাখতেই পারছে না। আমি ভাবলাম, এই বুঝি বয়সের ভারে চোখে পানি! কিন্তু না, আসল রহস্য বের হলো কিছুদিন পর। মা বললো,
— তুই দেশে আসছিস, এবার বিয়েটা করে ফেল।
বাবা কণ্ঠে দৃঢ়তা এনে বললেন,
— আর না, ছেলে বুড়ো হয়ে যাচ্ছে! সমাজে কি মুখ দেখাবো?
আমি মাথা চুলকে বললাম,
— আচ্ছা ঠিক আছে, আমি রাজি। কিন্তু একটা শর্ত, মেয়ে দেখতে আমি যাবো না। যাকে তোমরা পছন্দ করো, তাকেই আমি বিয়ে করবো।
এ কথায় মা তো খুশিতে ডানা মেললেন। যেন আমি বিয়েতে রাজি হয়ে বিশাল কোনো তীর মারলাম! মা হেসে বললেন,
— আমরা তো আগেই দেখে রেখেছি। মেয়েও রাজি, বলে দিয়েছে ছেলেটা বিদেশ ফেরত, দেখতে শুনতেও ভালো, আমার পছন্দ!
আমি মনে মনে হেসে ফেললাম, “টাকাই যে সব কিছু ঠিক করে দেয়, এ যুগে কে আর মন দেখে!”
দিন যায়, তারিখ ঠিক হয়, আর আমি একরকম ‘চোখ বুঁজে’ বিয়েতে বসে গেলাম।
বিয়ের দিন সন্ধ্যা। চারদিক আলোকসজ্জা, ফটোশুট, মেকআপ, গান বাজনা—সব মিলিয়ে এলাহী কাণ্ড। আমি চেয়ারে বসে ভাবছি, "কি অদ্ভুত! নিজের বিয়েতে আমি এমন নিশ্চুপ!"
রিসেপশনের ভিড় পেরিয়ে নতুন বউকে নিয়ে যখন বাসর ঘরে প্রবেশ করলাম, তখন যেন এক অজানা ধোঁয়াশা মাথায় ঘুরছে।
ঘরে ঢুকে দেখি, আমার নববধূ ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি মুচকি হেসে বললাম,
— আহা, ক্লান্ত হয়ে গেছে বুঝি।
আমি একটু সামনে গিয়ে তার মুখটা ভালো করে দেখলাম। হঠাৎ মাথায় যেন বাজ পড়লো! আমি চিৎকার করে উঠলাম,
— লিজা! তুমি!!
ঘুম ভাঙলো মেয়েটির। চোখ মেলে তাকালো। কিছুটা ভয় পেয়ে বললো,
— আপনি কি আমার মাকে চিনেন?
আমি মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে গেলাম। আমি বুঝে গেলাম, এটা সেই লিজা না, এটা লিজার মেয়ে! কিন্তু চেহারাটা এমন অবিকল, এমন একটা মিল, যে কোনো মানুষ ধাঁধায় পড়ে যাবে।
আমি ধীরে ধীরে নিচে বসে পড়লাম। মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে লাগলাম।
১৬ বছর আগের কথা।
আমার কলেজ জীবনের প্রেম, লিজা।
ওর সাথে রিকশায় ঘোরা, বৃষ্টিতে ভিজে চা খাওয়া, কলেজের ল্যাব ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখা—সব যেন এখনো চোখের সামনে।
তবে একদিন হঠাৎ লিজার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। ও কিছু বললো না। আমি খবর পেলাম বন্ধুদের মুখে। প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছিলাম। প্রায় এক বছর নিজের জীবন তছনছ করে ফেলেছিলাম।
বাবা-মা বাধ্য হয়ে আমায় বিদেশে পাঠায়। তারপর ব্যস্ততা, কাজ, সফলতা—সবকিছুর মাঝে হারিয়ে ফেলি লিজাকে।
কিন্তু কে জানতো, আজ বাসর রাতে আবার সে ফিরে আসবে—তবে প্রেমিকা না, শাশুড়ী রূপে!
মেয়েটি একটু দ্বিধা নিয়ে বললো,
— আপনি আমার মাকে কি নামে ডাকলেন?
আমি নিজেকে সামলে বললাম,
— লিজা… মানে… তোমার মা… আমার কলেজের বন্ধু ছিলেন।
মেয়েটি একটু হেসে বললো,
— আচ্ছা! ও বুঝেছি। মা মাঝে মাঝে বলতো, তাদের কলেজে এক পাগল বন্ধু ছিল। খুব হাসাতো। নাম মনে নেই কিন্তু…
আমার ভেতরটা কেঁপে উঠলো। আমি বললাম,
— ঠিকই বলেছে। সে পাগলটা আমিই ছিলাম।
পরদিন সকালে ঘর থেকে বের হয়ে শাশুড়ীমায়ের মুখোমুখি হতেই চমকে উঠলাম।
— লিজা…
সে একটু হেসে বললো,
— তুমি এখন আমাকে লিজা না বলে আন্টি বলবে না হয় শাশুড়ী মা।
আমার গলা শুকিয়ে গেলো। সে বললো,
— তুমি তো বলেছিলে, তোমার পছন্দ হলে হবে, আমি তো তোমায় আগেই পছন্দ করতাম… এখন তুমি আমার মেয়ের পছন্দ।
আমরা দুজনেই হাসতে লাগলাম।
সময় কতো অদ্ভুত খেলা খেলে, না?
আমি লিজাকে চেয়েছিলাম, পেলাম লিজার ছায়া।
আর লিজা?
সে আমাকে ভালোবেসেছিলো, বিয়েতে না পেলেও জীবনের গল্পে আমাকে নিজের পরিবারে নিয়ে নিলো।
জীবনের এই মোড় ঘোরানো মুহূর্তটা আমাকে বুঝিয়ে দিলো—ভালোবাসা হারায় না, রূপ পাল্টায়। প্রেমিকা একদিন শাশুড়ী হয়েও ফিরে আসতে পারে… আর জীবন হয়ে ওঠে আরও বেশি নাটকীয়, কিন্তু একই সাথে অসম্ভব সুন্দর।
Disclaimer / Story Policy
This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.
We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.
If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.
"এই গল্পটি ‘জীবন যুদ্ধ গল্প.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com