পরকীয়ার কষ্টের গল্প
গল্প: "তিলে তিলে..."
আমার নাম হাশিব।
প্রবাসে আছি অনেক বছর ধরে। মা-বাবা আর একমাত্র স্ত্রী রুবাইয়া—এই তিনজনই ছিল আমার পৃথিবী।
রুবাইয়াকে আমি বিয়ে করেছিলাম ভালোবেসে, পরিবার না মানলেও জোর করে। কারণ আমি ভেবেছিলাম, এই মেয়েটি আমার জীবনের চেয়ে দামি।
বিয়ের পর ওকে সাজিয়েছি, লেখাপড়া শিখিয়েছি, সব স্বাধীনতা দিয়েছি। এমনকি নিজের স্বপ্নের অনেক কিছু বাদ দিয়েছি শুধু ওকে মানুষ করার জন্য।
প্রবাসে যাওয়ার সময় মা বলেছিলেন,
“মা-বাবা তো বুড়ো হয়ে গেছে রে বাবা, ও মেয়েটার আচরণ দেখে ভয় পাই।”
আমি হেসে বলেছিলাম,
“মা, তুমি বেশি ভাবো। রুবাইয়া ভালো মেয়ে, ও তো তোমাদের দেখাশোনা করে দিবে।”
কিন্তু সেই বিশ্বাসটাই আমার শেষ বিশ্বাস ছিল।
---
চার বছর পর হঠাৎ একদিন ফোনে জানানো হয়—আমার মা-বাবা মারা গেছেন।
কারণ?
রুবাইয়ার ভাষায়—“ভাইরাস হয়েছিল, দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, আর শেষ হয়ে গেলেন। দাফনও হয়ে গেছে, সব কিছু আমি নিজে করেছি।”
প্রথমে কান্না আসেনি, শুধু শরীরটা ঝিম ধরে গিয়েছিল।
মা-বাবা!
তাঁদের মুখটাও শেষবার দেখতে পারলাম না।
আমি সব কাজ ফেলে দেশে ফিরলাম, কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
গ্রামে গিয়ে শুনলাম—রুবাইয়া কয়েক মাস ধরে একটা ছেলেকে নিয়ে আসত বাড়িতে, নাম নিহাদ।
প্রতিবেশীরা কিছু বলতে সাহস করেনি, কারণ রুবাইয়া ভয়ংকর রাগী হয়ে উঠেছিল।
তখনো আমি জানতাম না পুরো ঘটনা।
---
একদিন অচেনা একটা নম্বর থেকে ফোন আসে।
মেয়েলি কণ্ঠ, কিন্তু নাম বলে না।
সে জানায়—
“আপনার মা-বাবার মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না।
তাদের খেতে দেওয়া হতো না, মারধর করা হতো।
আপনার স্ত্রীর প্রেমিক নিহাদ প্রায়ই বাড়িতে আসত।
আপনার মা একদিন প্রতিবাদ করায় তাকে সিঁড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়।
বাবাকে বেঁধে রাখা হয় দুইদিন ধরে, এরপর তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
আমি এই ঘটনার সাক্ষী, কিন্তু পরিচয় দিতে পারি না।
আপনার দায়িত্ব এখন—ন্যায় দেওয়া।
ওদের ক্ষমা করলে আপনার মা-বাবার আত্মা কাঁদবে।”
শুনেই মাথার ভেতর আগুন জ্বলে উঠলো।
আমি শপথ করলাম—এবার শুধু মানুষ হয়ে প্রতিশোধ নয়, আমি রাক্ষস হয়ে ফিরে আসবো।
---
পরিকল্পনার শুরু
আমি ঠাণ্ডা মাথায় দেশে এলাম।
রুবাইয়া ভাবলো আমি কিছুই জানি না।
হাসি মুখে আমাকে স্বাগত জানালো।
আমি বললাম,
“চলো ঘুরে আসি দূরে কোথাও। তুমি আর আমি—একটু সময় কাটাই।”
ও খুশি হলো।
তবে সেই ঘোরার গন্তব্য ছিল—পুরনো পরিত্যক্ত এক পাহাড়ঘেরা কটেজ, যেটা একসময় আমার নানার ছিল।
ওকে নিয়ে সেখানে গেলাম।
এর আগে আমি গোপনে নিহাদকে খুঁজে বের করেছিলাম।
ওর সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজের পরিচয় গোপন রেখে বন্ধুত্ব পাতিয়েছিলাম।
আমি নিজেকে উপস্থাপন করেছিলাম একজন ধনী ও অপরাধ জগতের সদস্য হিসেবে।
ও টাকার লোভে আমার ফাঁদে পা দিলো।
আমি ওকে ডেকে আনি সেই একই কটেজে—রুবাইয়ার অজান্তে।
---
প্রতিশোধের শুরু
প্রথম দিন আমি ওদের দুজনকেই আলাদা আলাদা ঘরে আটকে রাখি।
রুবাইয়া চিৎকার করে,
“তুমি পাগল হয়ে গেছো! আমাকে ছেড়ে দাও!”
আমি বলি,
“তুমি আমার মা-বাবার জন্য কাঁদো আগে।
তাদের যেভাবে না খাইয়ে রেখেছিলে, তেমন করে আজ তোমাকেও রোজা রাখতে হবে—জোর করে।”
প্রথম তিনদিন শুধু পানি দিয়েছিলাম, খাবার নয়।
তারপর আমি তাদের শরীরে ইনজেকশন দিয়ে এক বিশেষ ধরণের ভাইরাস ঢুকিয়ে দিলাম—কোনো প্রাণঘাতী নয়, বরং দিন দিন শরীর ক্ষয় করে, যন্ত্রণা দেয়, মাংস শুকিয়ে যায়।
তারা কাঁদে, চিৎকার করে, আর আমি বসে বসে শুনি।
নিহাদ একবার পা ধরে বলেছিল,
“ভাই, মাফ করে দাও... আমি জানতাম না মেয়েটা বিবাহিতা ছিল।”
আমি বলি,
“তুমি শুধু প্রেম করোনি, তুমি খুনি হয়েছো।
আমার বাবার মুখের পানিও কেড়ে নিয়েছিলে।
আজ আমি তোমার শরীর থেকে রক্ত বাঁচিয়ে রক্ত শুষে নেবো।”
---
তিলে তিলে মৃত্যু
প্রতিদিন আমি তাদের সামনে বসে মা-বাবার ছবি রাখতাম।
বলতাম,
“এই মানুষ দুজন যাদের তুমি মেরে ফেলেছো, আজ তাদের আত্মা তোমাদের কাঁদতে দেখছে।”
দশ দিনের মাথায় রুবাইয়ার মুখ শুকিয়ে যায়, দাঁত পড়ে যায়, শরীর জ্বলতে থাকে।
নিহাদ অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
কিন্তু আমি তাদের মরতে দিইনি তখনো।
আমি ডাক্তার ডেকে গোপনে ওদের জীবন ফিরিয়ে এনেছিলাম—শুধু আরও কষ্ট পেতে।
এক মাস পর তারা দুজনই আর নিজের নাম পর্যন্ত বলতে পারে না।
আমি শেষ দিন তাদের একসাথে বসিয়ে বললাম—
“এই ভাইরাস তোমাদের শরীর নষ্ট করেছে, আর আমার প্রতিশোধ তোমাদের আত্মা পর্যন্ত জ্বালিয়ে দিয়েছে।
তোমরা কেউ মরো না, কেউ বাঁচো না—এটাই আমার ন্যায় বিচার।”
তারপর একদিন তাদের দেহগুলো আমি একটা আগুনের ঘরে রেখে এলাম।
তারা জীবিত ছিল তখনো, কিন্তু চিৎকারের শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল।
---
আজ অনেক বছর কেটে গেছে।
কেউ জানে না—রুবাইয়া আর নিহাদ কোথায় গেল।
তাদের পরিবার ভাবছে—তারা পালিয়েছে কোথাও।
আমি জানি—তারা পালায়নি,
তারা ছিল তিলে তিলে মৃত্যুর খাঁচায় বন্দী।
এই গল্প কেউ জানে না।
কেউ জানবেও না।
কারণ আমি প্রতিশোধ নিইনি—
আমি শুধু ন্যায় দিয়েছি।
একটা হৃদয় যখন চূর্ণ হয়, তখন সে আর মানুষ থাকে না—সে ন্যায়বিচার হয়ে উঠে।
---
শেষ লাইন:
"মৃত্যু নয়, কষ্টই আসল বিচার—কারণ কষ্টই মানুষকে মনে করিয়ে দেয়, কী ভুল সে করেছিল..."
লেখা টিম-জীবন যুদ্ধ গল্প.কম
Disclaimer / Story Policy
This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.
We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.
If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.
"এই গল্পটি ‘জীবন যুদ্ধ গল্প.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com