গল্প: স্ত্রী'কে লেখা পড়া | ব্যর্থ ভালোবাসার কষ্টের গল্প

 অসমাপ্ত ভালোবাসার কষ্টের গল্প

গল্প: “স্ত্রী'কে লেখা পড়া”

আমার নাম মঞ্জুর। খুব সাধারণ একজন মানুষ। ছোট চাকরি করি একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। বাবার ছোট্ট একটা বাড়িতে থাকি, মাকে নিয়ে। বিয়ের বয়স যখন পেরিয়ে যাচ্ছিল, তখন এক আত্মীয়র মাধ্যমে পরিচয় হলো নীলার সাথে।

নীলা ছিল অল্প পড়াশোনা জানা, গ্রামের শান্তশিষ্ট এক মেয়ে। বড় কোনো দাবি ছিল না, শুধু ভালোবাসা আর একটু সম্মান। আমি পছন্দ করলাম, বিয়ে করলাম।

বিয়ের পর থেকেই মনে হলো—এই মেয়েটার মধ্যে কিছু একটা আছে, কিছু একটা আলাদা। আমি বললাম,

“তুমি কি আবার পড়াশোনা শুরু করতে চাও?”

সে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো, “আমি? এতদিন পর?”

আমি বললাম, “তুমি চাও তো আমি আছি, আমি সব সামলাবো।”

সেই শুরু।

আমি নিজে খরচ কমিয়ে দিলাম, বাইক কেনার টাকা জমিয়ে ওর ক্লাস ফি দিলাম। অফিস শেষে ঘরে ফিরে তাকে পড়াতাম। পরীক্ষার আগের রাতে পাশে বসে রাত জাগতাম, শুধু ওর চোখের আত্নবিশ্বাস দেখতে।

তিন বছরে সে কলেজ শেষ করল, তারপর ভর্তি হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে।

আমি তখন নিজের সব স্বপ্ন ভুলে শুধু ওকে সামনে এগিয়ে দিতে ব্যস্ত। মায়ের চিকিৎসাও কখনো কখনো মুলতবি রেখেছি, যাতে ওর কোচিং-ফি দিতে পারি।

আর ততদিনে নীলা বদলে যেতে লাগলো।

কথায় অহংকার, চোখে নতুন নতুন পরিচিতি, মুখে নতুন ভাষা।

তার বন্ধুরা হতো দামি পোশাকের, স্মার্ট ফোনে ব্যস্ত, আর আমি শুধু সেই পুরোনো, সাধারণ মানুষ—যে নীলার ছায়াও হতে পারি না।

প্রথমে বুঝিনি। ভেবেছি ক্লাস, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ।

কিন্তু একদিন হঠাৎ ওর ফোনে এসএমএস পেয়েছিলাম।

“তোমাকে ছাড়া আর কিছুই চাই না…”

পাঠিয়েছে এক ছেলে, নাম—রাকিব।

নীলা বলেছিলো, “আমার সঙ্গে সন্দেহ কোরো না।”

আমি চুপ করেছিলাম, আমি তো শুধু ওর পাশে থাকতে চেয়েছিলাম।

কিন্তু সেই চুপ করাটা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।

দেখতে দেখতে একদিন সে ঘর ছেড়ে চলে গেলো।

রাকিবের হাত ধরে, তার ফ্ল্যাটে, তার স্বপ্নে।

আমার তখন কিছুই ছিল না—না ভালোবাসা, না মান, না নিজেকে ব্যাখ্যা করার ভাষা।

শুধু একটা প্রশ্ন ছিল — “তাকে মানুষ বানিয়ে আমি কি অমানুষ হয়ে গেলাম?”

মা চোখের জল ফেললো, সমাজ টিটকারি দিলো, আমি রাত জেগে শুধু ভাবতাম — আমি কি খুব বেশি ভালোবেসেছিলাম?

তিন বছর পর একদিন হঠাৎ নীলা আবার ফিরে এলো।

চোখে ক্লান্তি, মুখে হতাশা, হাতে এক শিশুকে ধরে।

বললো, “আমার ভুল হয়েছিল, ক্ষমা করে দাও। সে শুধু খেলেছে আমার সঙ্গে। সন্তানটা তার হলেও সে স্বীকার করে না… তুমি চাইলে আমি সব ছেড়ে তোমার সঙ্গে আবার থাকতে চাই।”

আমি অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম তার চোখে।

সেই চোখে এখন আর কোনো স্বপ্ন নেই, শুধু অনুতাপ।

আমি তাকিয়ে বলেছিলাম,

“নীলা, আমি তো তোমার স্বপ্ন গড়েছিলাম, আর তুমি আমার জীবনটাই ভেঙে ফেললে। এখন তুমি ফিরতে চাও, কিন্তু ফিরে আসার দরজাটা আর আগের মতো খোলা নেই।

তোমাকে মানুষ বানিয়ে আমি শিখেছি, সব মানুষ হয়ে ওঠে না।”

নীলা চলে গিয়েছিল, আর কোনোদিন ফিরে আসেনি।

আর আমি? আমি এখনো একা থাকি,

কিন্তু নিজেকে হারাইনি।

আমি ভালোবাসা বিশ্বাস করি,

তবে অন্ধবিশ্বাস নয়।

---

গল্পের উদ্দেশ্য কথা:

প্রত্যেক ভালোবাসা গভীর যত্ন চায়, আর যাকে পাশে দাঁড়িয়ে মানুষ করা হয় — সেই মানুষ যদি ফিরে এসে সেই ভরসা ভাঙে, তার চেয়ে বড় আঘাত আর কিছু হয় না।

Disclaimer / Story Policy

This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.

We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.

If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.

"এই গল্পটি ‘জীবন যুদ্ধ গল্প.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com