গল্প: অপরাজিতা | স্বামী শাশুড়ী যখন না বুঝে; অবহেলা কষ্ট দেয়

 গল্প: "অপরাজিতা"

রূপা একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত মেয়ে। সাদামাটা মুখ, শান্ত স্বভাব, আর হাজারটা স্বপ্ন নিয়ে বিয়ে হয়েছিলো রিফাতের সঙ্গে। বিয়ের পর নতুন সংসারে পা দিয়েই সে বুঝেছিল—এটা শুধু তার স্বপ্নের রাজ্য না, বরং এক যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে তাকে প্রতিনিয়ত প্রমাণ করতে হবে সে কেমন ‘ভালো বউ’।

সকাল শুরু হতো শাশুড়ির চোখ রাঙানি দিয়ে, স্বামীর মুখ গোমরা, আর আত্মীয়দের অকারণ তুলনা দিয়ে। তবুও সে নীরবে সব সহ্য করত। কারণ তার বিশ্বাস ছিল—ভালোবাসা একদিন ঠিকই সব কিছু বদলে দেবে।

সে রান্না করতো পছন্দমতো, হাসি মুখে, রাত জেগে শাড়ি ইস্ত্রি করতো, নতুন জামা না কেনার বদলে ছেলের স্কুল ফি দিতো। আর রিফাত? সে শুধু অভিযোগ করত—“তুমি তো আর আগের মতো সাজো না, তোমার মধ্যে আকর্ষণ নেই।”

একদিন হঠাৎ রূপার পুরনো ডায়েরির পাতা খুলে পড়ে রিফাত। সেখানে সে দেখে—রূপার নিজের লেখা কবিতা, ছোট ছোট গল্প, কিছু অপূর্ণ স্বপ্ন আর খুব চুপিচুপি লেখা কষ্টের কথা।

তখনও সে বুঝতে পারেনি, এই মেয়েটি শুধু সংসার চালায়নি, নিজেকে গিলে সংসার বাঁচিয়েছে।

দিন পেরিয়ে গেছে। রূপা এখন একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ছেলেকে মানুষ করছে একাই। কারণ রিফাতের সেই অভিযোগের সংসারে রূপা একদিন হঠাৎ সব ফেলে চলে গিয়েছিল—না কাঁদে, না বলে।

আজও রিফাত মাঝেমধ্যে তার পুরনো ফেসবুক খোলে। রূপার নতুন পোস্টে চোখ রাখে—সেখানে লেখা থাকে,

“সবাই ভাবে আমি বদলে গেছি, অথচ আমি কেবল নিজেকে চিনে ফেলেছি।”

---

এই গল্পটা শুধু রূপার না। সমাজে হাজারো রূপা আছে—যারা নিজের জীবন ভুলে, সবার ভালো রাখে। কিন্তু যখন তাদের অভিমান জমে ওঠে, তখন তারা নীরবে চলে যায়—আর ফিরে আসে না।