বাবা যখন ছোট ছেলেকে বেশি ভালোবাসে | বাবা সন্তানের অবহেলা কষ্ট

 গল্প: বাবার চোখে আমি অদৃশ্য

গল্প: বাবার চোখে আমি অদৃশ্য

বাড়িটা ছোট, কিন্তু দুই ভাইয়ের হৃদয়ের মধ্যে বিস্তর দূরত্ব।

আর সেই দূরত্বের শুরু, বাবার ভালোবাসা থেকেই।

আমার নাম নাই, কারণ আমার অস্তিত্বই যেন এক অদৃশ্য ছায়া।

আমি বড় ছেলে, বাড়ির প্রথম সন্তান।

যে দিন জন্মেছিলাম, দাদু বলতেন, “বংশের বাতি এসেছে।”

কিন্তু সেই বাতির আলো হয়তো বাবার চোখে কখনোই পৌঁছায়নি।

ছোট ভাই জন্মের পর থেকে বাবার দুনিয়া যেন পাল্টে গেল।

যেন সে-ই তার হৃদয়ের রাজপুত্র।

স্কুল থেকে ফিরে আমি যদি বাবা’র দিকে তাকিয়ে একটা হাসি চাইতাম,

তিনি ব্যস্ত থাকতেন ছোট ভাইয়ের পিঠে তেল মাখাতে।

আমি পড়ালেখায় ভালো ছিলাম, জেএসসি-তে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলাম।

বাবা একবারও জিজ্ঞেস করেননি,

“তুই খুশি তো?”

ছোট ভাই ক্লাসে পাস করলেই বাড়ি খুশিতে মাতোয়ারা।

গরু জবাই না হলেও, মুরগি জবাই হতো—ছেলের সাফল্য উদযাপনে।

একদিন বাবা বললেন,

“ছোটটা খুব স্মার্ট, কত কথা জানে! তোর মতো গম্ভীর না।”

গম্ভীর?

আমি কী করে হাসি, যখন আমার চোখের ভাষা কেউ বোঝে না?

আমার পড়ার খরচ আমি নিজেই টিউশনি করে চালাতাম।

ছোট ভাইয়ের জন্য বাবা নতুন মোবাইল কিনতেন,

আর আমি চাইলে বলতেন—

“এই বয়সে ফোন কি লাগে?”

জীবনের প্রতিটি বাঁকে আমি নিজেই নিজেকে গড়ে তুলেছি।

নিজেই ভর্তি হয়েছি কলেজে, ইউনিভার্সিটিতে।

আমি চাকরি পেলাম,

বাড়িতে ফোন করে বললাম—

“বাবা, চাকরি পেয়ে গেছি!”

তিনি বললেন,

“ভালো কথা। তোর ভাইয়ের রেজাল্ট কেমন হয়েছে জানিস?”

আমি তখনো নীরব।

চাকরি করে আমি বাসায় টাকাও পাঠাতাম।

ছোট ভাই তখনো বাবার ঘাড়ে।

তবুও বাবা বলতেন,

“ছোটটা অনেক দূর যাবে ইনশাআল্লাহ। মাথায় বুদ্ধি আছে।”

আর আমি?

আমার বুদ্ধি শুধু দায়িত্ব পালনে?

আমার ত্যাগ শুধু নীরব ইতিহাস?

একবার বাবার হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হলো।

ছোট ভাই তখন ঘুরতে গিয়েছিল বন্ধুর সঙ্গে।

আমি ছুটে গিয়ে বাবা’র চিকিৎসা করালাম, বিল মেটালাম।

চিকিৎসা শেষে বাবা শুধু বললেন,

“তোর ভাই তো আর কেয়ার করতে পারে না। ও অনেক ব্যস্ত। তুই-ই তো বড়, তোর দায়িত্ব।”

আমি আবারও নীরব।

কিছু কথা শব্দ হয় না...

আমার জীবন যেন নিঃশব্দ যুদ্ধ, যেখানে পুরস্কার নেই।

শুধু দায়িত্ব, ত্যাগ আর উপেক্ষা।

বাবা এখন বৃদ্ধ, আর আমি এখন আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত।

ছোট ভাই এখনো বাবার প্রিয়, যদিও ঘরে কম আসা-যাওয়া করে।

আমি মাসে মাসে বাজার দিই, ওষুধ পাঠাই।

তবুও বাবা বলেন,

“ছোটটা কখন আসবে রে? খুব মনে পড়ে।”

আমি বলি না কিছু।

আমি শুধু আস্তে আস্তে বুঝে গেছি—

সব বাবা একরকম হয় না।

কেউ কেউ ভালোবাসে শর্তে, কেউ গড়ে পরিবার—

আদর দিয়ে নয়, দায়িত্ব দিয়ে।

---

গল্পের উদ্দেশ্য

আজ আমি সফল, কিন্তু বাবার মনে জায়গা পাইনি।

তবুও আমি বলি না কিছু।

কারণ একদিন ছোট ভাই হয়তো ভুলে যাবে,

তখন আমি থাকবো—নীরবে, কিন্তু পাশে।

বাবা তখন হয়তো বুঝবে,

যে ছেলেকে সে অবহেলা করেছে,

সেই ছেলেই ছিলো তার সবচেয়ে বড় ভরসা।

---

এই গল্পটা শুধু একটা পরিবারের না—এটা হাজারো সন্তানের বাস্তব চিত্র।

যেখানে দায়িত্ববান ছেলেটা অবহেলিত হয়,

আর অল্প কিছুতে খুশি করা সন্তান পায় সব ভালোবাসা।

Disclaimer / Story Policy

This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.

We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.

If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.

"এই গল্পটি ‘জীবন যুদ্ধ গল্প.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com