গল্প: "বড় লোকের মেয়ের অহংকার"
তিথি।
ঢাকার এক অভিজাত পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকার।
বাবা দেশের অন্যতম বড় ব্যবসায়ী, মা একজন সফল উদ্যোক্তা।
ছোটবেলা থেকে তিথিকে কখনও "না" শব্দটা শুনতে হয়নি।
তার জন্মদিন মানে হোটেল বুকিং, গিফটের বন্যা, মিডিয়ায় ফিচার।
স্কুলে গেলে বাকি ছাত্রীরা ফিসফিস করত—
"ওটা ওদের স্কুলে পড়ে? ওর তো আলাদা স্কুল হইতে পারত!"
তিথি কখনো টিফিন লাইনে দাঁড়ায়নি, কখনো খাতা নিজের হাতে বইছে না।
তার জন্য আলাদা চেয়ার, আলাদা গ্রুপ, এমনকি শিক্ষকরাও যেন একটু আলাদা দৃষ্টি দিত।
সে বিশ্বাস করত—
"আমার অবস্থান জন্মসূত্রে ঠিক হয়ে গেছে। আমি বড়, বাকিরা আমার পায়ের নিচে।"
কলেজে উঠেও অবস্থা একই ছিল।
প্রতিযোগিতা বলতেই বুঝত— কে কাকে ব্যাগ, জুতো, কিংবা মেকআপের দামে হারাতে পারে।
তিথি ছিল সবার শীর্ষে।
তার কাছে ক্লাসের সাধারণ মেয়েরা ছিল হাস্যকর, গরিব, অসহ্য।
একদিন কলেজে একটা নতুন প্রজেক্ট শুরু হয়—
"কমিউনিটি সার্ভিস"
সব শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে অন্তত ২ ঘণ্টা সময় দিতে হবে সমাজসেবামূলক কাজে।
অনেকে রক্তদান, কেউ পথশিশুদের পড়ানো, কেউ বস্তিতে গিয়ে হেলথ ক্যাম্পের জন্য তালিকাভুক্ত হয়।
তিথি গা করল না।
তার যুক্তি—
"আমার বাবা তো অনেক দান করেন। আমি গিয়ে ময়লা জায়গায় বসব কেন?"
তবু কলেজ কর্তৃপক্ষ বাধ্য করে তাকে।
তিথি বাধ্য হয়ে এক NGO’র সঙ্গে এক বস্তি এলাকায় গিয়ে শিক্ষাদান কার্যক্রমে অংশ নেয়।
প্রথম দিনেই ধাক্কা খায়।
একটা ছোট মেয়ের নাম রুবি।
মুখে ধুলো, গায়ে ছেঁড়া জামা।
কিন্তু চোখে এমন আগ্রহ, এমন মনোযোগ— যা তিথি জীবনে কোনোদিন দেখেনি।
তিথি তার মোবাইল বের করে ছবি তোলে।
পরে পোস্ট দেয়—
"Today I taught a poor kid! Feeling proud."
কমেন্টে প্রশংসা আসে।
তিথি খুশি হয়।
কিন্তু আবার সেখানে যেতে মন চায় না। ওর ‘লেভেল’ না।
একদিন আবার যেতেই হয়।
সেই রুবি আসে।
তিথির মুখ গম্ভীর।
রুবি বলে—
"আপা, আপনি পড়ালে আমি খুব বুঝি। আপনি না এলে পড়া থাকি যায়।"
তিথি চুপচাপ শুনে।
পরের সপ্তাহে আরেকটা বাচ্চা আসে।
তার মা এসে বলে—
"আপার মতো হইতে চাই আমার মেয়ে। আপনি না এলে ও পড়ে না।"
সেই রাতটা তিথির ঘুম হয়নি।
প্রথমবার সে উপলব্ধি করে—
"মানুষ হওয়াটাই সম্মানের আসল পরিচয়।"
সে পোস্ট ডিলিট করে দেয়।
ধীরে ধীরে সে নিয়মিত বস্তিতে যেতে শুরু করে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার নয়,
বরং নিজের আনন্দ, অনুভবের জন্য।
সে নিজের কিছু দামি জামা ওই মেয়েগুলোকে দেয়।
রুবি যখন বলে—
"আপা, এগুলা আমার জীবনের সেরা ঈদ হবে,"
তিথির চোখে পানি আসে।
দিন যায়।
একদিন তার এক পুরোনো বন্ধু বলে—
"তুই এসব করিস কেন? তোর তো দরকার নাই।"
তিথি হাসে—
"এই সব দরকারই ছিল, এতদিন আমি বুঝিনি।"
তার মা একদিন চুপচাপ মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলেন—
"আজ আমি আসলেই গর্বিত একজন মা। তুই আজ তিথি নামে বড় লোক না, তুই আজ তিথি নামে একজন মানুষ।"
---
গল্পের শিক্ষা:
তিথির জীবনের চূড়ান্ত শিক্ষাটা ছিল—
> অহংকার জন্মসূত্রে আসতে পারে, কিন্তু সম্মান অর্জন করতে হয়।
বড়লোক হওয়া কপালের বিষয় হতে পারে, কিন্তু মানুষ হওয়া নিজের সিদ্ধান্ত।
Disclaimer / Story Policy
This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.
We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.
If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.
"এই গল্পটি ‘জীবন যুদ্ধ গল্প.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com