গল্প: সাজে না যার জীবনের রঙ
শারমিন ছোটবেলা থেকেই খুব সাধারণ মেয়ে। বেশি সাজগোজে ছিল না আগ্রহ, বরং বই, রান্না আর সংসারই ছিল তার জীবন। মা বলতেন, "মেয়েদের গরিমা থাকে তার ব্যবহার আর নম্রতায়, সাজে নয়।" শারমিন সেই কথাই বুক পাথর করে বিশ্বাস করে বড় হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পরিচয় হয় সোহেলের সাথে। সোহেল দেখতে ভালো, স্মার্ট, একটু আধুনিকও। ব্যবসা করে, পরিবার বেশ ধনী। প্রথম দেখাতেই তার পরিবার শারমিনকে পছন্দ করে। কারণ, মেয়েটি শান্ত, নম্র এবং পরিবারের মানানসই।
বিয়ে হয়। শুরুটা সুন্দর ছিল। সোহেলও খুশি ছিল, তবে ধীরে ধীরে তার চাহিদাগুলো বদলাতে শুরু করে। অফিস পার্টিতে গেলে বলে—"তুমি একটু সাজো না কেন? সবাই তো নিজের বউ নিয়ে গর্ব করে, আর আমি..." শারমিন হেসে বলত, "তোমার জন্যই তো সাজবো, তুমি তো বলো তুমি এসব পছন্দ করো না!" সোহেল বলত, "হুম, আগে বলতাম, এখন চাই তুমি একটু স্মার্ট হও, বুঝো না?"
শারমিন হিমশিম খায়। সাজতে গিয়ে আবার শুনে, "এভাবে সাজো না তো, কেমন বেমানান লাগছে!" সে ধীরে ধীরে বুঝতে পারে, সে না সাজলেও সমস্যা, সাজলেও।
একদিন সোহেলের ফোনে একটি মেসেজ দেখে শারমিনের মাথায় বাজ পড়ে—"তুমি সেই রকম, তোমার মতো করে আমার বউ যদি একবার সাজতো!"
শারমিন থমকে যায়। ফোনে ছবি দেখে—একজন গ্ল্যামারাস নারী, মেকআপে ঝলমলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় স্টাইল আইকন। সোহেল তার সাথে ঘনিষ্ঠ, কথাবার্তা দিনে দিনে গভীর হচ্ছে।
শারমিন চুপচাপ থাকে। কাউকে কিছু না বলে নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকে—"আমি কি এতটাই অপূর্ণ?"
সে নিজের আয়নাটাকে নতুন করে দেখতে শুরু করে। পুরোনো শাড়ির জায়গায় নতুন কিছু যোগ হয়। চুল কাটে, হালকা সাজ নেয়। কিন্তু তাতেও সোহেল বলে, "তুমি চেষ্টা করছো, কিন্তু ওই মেয়েটার মতো হতে পারবে না!"
শারমিন সেই রাতে সোহেলকে জিজ্ঞাসা করে, "তুমি কি চাও আমি শুধু সুন্দর দেখাই, নাকি বুঝি তোমার মনের কথাও?"
সোহেল হাসে, "এই যুগে কে কাকে বোঝে? এখন সবাই দেখে কীভাবে দেখাচ্ছে!"
শারমিন বুঝে যায়, যাকে সে ভালবেসেছে, সে আসলে ভালবেসেছে একজন 'লুক'কে—not 'মনে'কে। সে ভেঙে পড়ে, কাঁদে, তারপর আবার নিজেকে গড়ে। না, শুধু সাজ দিয়ে নয়, নিজেকে শিক্ষায়, নিজের ভালোবাসায়, নিজের আত্মসম্মানে।
তিন বছর পর, শারমিন এখন একজন উদ্যোক্তা—নারীদের সৌন্দর্য আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করে। সে এখন অন্য মেয়েদের শেখায়, কেবল বাইরের সাজ নয়, ভেতরের বিশ্বাসই সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য।
আর সোহেল?
সে এখন নিঃসঙ্গ। কারণ সে শুধু চেয়েছিল সাজ, হৃদয়ের মানুষকে কখনো চিনে উঠতে পারেনি।
শেষে শারমিন লিখেছিল—
"আমি সাজি, তবে নিজের জন্য। যিনি শুধু মুখ দেখে হৃদয় খোঁজেন না, তার সঙ্গে আর হৃদয় হারাতে নেই।"
Disclaimer / Story Policy
This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.
We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.
If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.
"এই গল্পটি ‘জীবন যুদ্ধ গল্প.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com