গল্প: ডং দেখে বাছিনা
অধ্যায় ১: জ্বরের জ্বালায় জ্বলে যাওয়া
এক শীতের সন্ধ্যা। ঢাকার এক অলস পাড়ায়, বাসা ৩২/বি-তে, একটি পরিবারে ছোটখাটো হইচই শুরু হয়েছে। রূপা, এই বাড়ির গৃহিণী, সকাল থেকে বেশ ক্লান্ত লাগছিল। রাত বাড়তেই শরীরটা হালকা কাঁপুনি দিয়ে জ্বরে পরিণত হলো। মুখটা কাগজের মতো সাদা। চোখদুটো কুয়াশা দিয়ে ঢাকা। তার স্বামী রায়হান, অফিস থেকে ফিরে এসব দেখে চিন্তায় পড়ে গেল।
"তুমি একেবারে গলে গেছো! আমি তো তোমার শরীরের তাপমাত্রা দেখে ভয় পেয়ে গেছি!" — রায়হান বলল।
রূপা মুখ ঘুরিয়ে বলল, "তুমি কিছু একটা করো, শরীরটা ভেঙে যাচ্ছে!"
অধ্যায় ২: নাপা বনাম মুরগির সুপ
রায়হান ফোন হাতে নিয়ে ডাক্তার গুগলকে জিজ্ঞেস করলো: “জ্বর হলে কী করা উচিত?”
গুগল উত্তর দিল:
> ১. বিশ্রাম
২. প্রচুর পানি
৩. হালকা খাবার
৪. নাপা
৫. মুরগির সুপ
রায়হানের মাথায় ঢুকে গেল, “মুরগির সুপ! হ্যাঁ! এটাই বুদ্ধি!”
সে তৎক্ষণাৎ কিচেনে গিয়ে বলল, "তোমার জন্য আমি মুরগির সুপ বানাচ্ছি।"
রূপা বলল, "তুমি তো ভালো করে চা বানাতেও পারো না, সুপ কিভাবে বানাবে?"
রায়হান আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল, “বাবু তোমার জ্বর আমি সেরে দিবো মুরগির সুপ দিয়ে।”
অধ্যায় ৩: মুরগিদের গোপন সভা
এদিকে বাড়ির পেছনের উঠোনে থাকা তিনটি মুরগির মুখে মুখে খবর ছড়িয়ে পড়েছে।
মুরগি বেগম, মুরগি ললিতা আর মুরগি মজনু বসেছে বিশেষ সভায়।
বেগম বলল, “চুপ করো সবাই! শুনেছি আজ রাতের ডিনারে আমাদের কাউকে দিয়ে সুপ বানানো হবে।”
ললিতা চোখ গোল করে বলল, “ডং দেখলেই বুঝি বাছবি! শরীর গরম হলেই নাপা খেলে হয় না?”
মজনু উত্তেজিত হয়ে বলল, “আমার ঠ্যাং এত্ত চিকন, সুপে যাবে কী! বলো দেখি!”
তারা সিদ্ধান্ত নেয়—মানবজাতিকে শিক্ষা দিতে হবে। মুরগিরা চায় “নাপা আগে, সুপ পরে।”
অধ্যায় ৪: সুপের গন্ধে বিপর্যয়
রায়হান সুপ বানাতে শুরু করল। ইউটিউব দেখে দেখে সে জল, রসুন, আদা, পেঁয়াজ আর নিজের বুদ্ধিতে কিছু দারুচিনি মিশিয়ে ফেলল।
পাশের ফ্ল্যাটের খালাম্মা গন্ধ পেয়ে বললেন, “এই রায়হান! কী রান্না করছো? গন্ধে তো লাগছে যেন পোলাওয়ের পাত্রে জলপাই দিয়ে সুপ!”
সুপ নামিয়ে রায়হান গিয়ে দেখল, রূপা অজ্ঞান প্রায়। তার শ্বাস-প্রশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।
"আরে বাবা! এতক্ষণ তো আমি সুপ নিয়ে ব্যস্ত, অথচ তুমি এখনো জ্বরে পুড়ছো?"
অধ্যায় ৫: রক্ষা পেলাম নাপায়
মুরগিরা তাদের গোপন সুপারপাওয়ার ব্যবহার করে রায়হানের মগে নোট রাখে –
"নাপা আগে খাওয়াও, না হলে আমরা তিনজন একসাথে মুরগির ভূত হয়ে আসবো।"
রায়হান ঘামতে ঘামতে পাশের ফার্মেসিতে ছুটে যায়। নাপা কিনে এনে রূপাকে খাওয়ায়।
মাত্র আধাঘণ্টা পর রূপা উঠে বলে, “আহা! অনেক ভালো লাগছে।”
রায়হান তো অবাক! সুপের কিছু খাওয়ালই না, অথচ এখন জ্বর কমে গেছে।
অধ্যায় ৬: মুরগিদের বিজয় গান
পেছনের উঠোনে সেই তিন মুরগি – বেগম, ললিতা আর মজনু — ডানা ঝাঁপটে গান গাইতে শুরু করল:
“নাপা নাও আগে, সুপ পরে খেও,
আমরা আছি বাঁচা, ডং দেখে চেও।”
তারপর থেকে রায়হান আর কখনো মুরগির দিকে সুপের চোখে তাকায় না। এখন সে জানে, গায়ে একটু জ্বর হলেই “ডং দেখে বাছিনা” কাজ দেয় না, আগে লাগে নাপা!