নিজের পথে হাঁটা: বাস্তবতার শিক্ষা
মানুষের জীবন হলো একটা দীর্ঘ পথচলা। এই পথে কখনো সমতল রাস্তা, আবার কখনো খাড়া পাহাড়, কখনো ঝড়-বৃষ্টি আবার কখনো রোদেলা সকাল। কিন্তু একটা জিনিস স্থির— যতক্ষণ নিজের পায়ের শক্তি আছে, ততক্ষণ সেই পা-ই ভরসা।
ছোটবেলায় আমরা সবাই দৌড়াতে শিখি। জীবনের শুরুতে উদ্যম থাকে, শক্তি থাকে, স্বপ্ন থাকে। তখন মনে হয় পৃথিবী জয় করা সহজ। অনেকে সেই শক্তি দিয়ে স্বপ্নের দিকে দৌড়ায়— কেউ পড়াশোনায়, কেউ চাকরিতে, কেউ ব্যবসায় আবার কেউ শিল্পে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে শক্তি কমতে থাকে। জীবন চাপে ভরে ওঠে, সমস্যার পাহাড় জমতে থাকে। তখন দৌড় বন্ধ হয়ে যায়, শুরু হয় ধীরে হাঁটা।
এক বাস্তব গল্প: রফিকের জীবন
রফিক ছিল গ্রামের এক সাধারণ ছেলে। বাবা চাষাবাদ করতেন, সংসার কষ্টে চলত। ছোটবেলা থেকেই রফিক বুঝেছিল— যদি সে অন্যের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে, তবে কখনো নিজের ভাগ্য বদলাতে পারবে না।
ম্যাট্রিক পাশ করার পর রফিক শহরে গেলো। হাতে টাকা ছিল না, কাউকে বলতে চাইলেও বলল না— “আমাকে সাহায্য করো”। সে জানত, অন্যের পা ধরে চলা মানে সারা জীবন ভরসাহীন থাকা। তাই শুরু করল শ্রমিকের কাজ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করত, রাতে এসে পড়াশোনা করত।
প্রথম দিকে জীবনটা দৌড়ানোর মতো ছিল। শরীরে শক্তি ছিল, চোখে স্বপ্ন ছিল। কিন্তু দিন গড়াতে গড়াতে দৌড়ানোর শক্তি কমতে লাগল। তখন রফিক থামল না, শুধু গতি কমাল। হাঁটতে হাঁটতে সে পড়াশোনা শেষ করল, এক সময় চাকরিও পেল।
আজ রফিক তার পরিবারকে সচ্ছল জীবন দিতে পারছে। সে এখনও বলে—
“আমি হয়তো দৌড়াতে পারিনি সারাজীবন, কিন্তু থামিনি। অন্যের পা ধরে যদি এগোতাম, তবে হয়তো আজও ভিক্ষুকের মতো মুখ তুলে দাঁড়াতে হতো।”
জীবনের শিক্ষা
নিজের শক্তি দিয়ে শুরু করতে হবে।
দৌড়ানোর শক্তি না থাকলে হাঁটা চালিয়ে যেতে হবে।
কিন্তু অন্যের পায়ের ভরসায় এগোতে গেলে নিজের পায়ের দাম ভুলে যাবেন।
অন্যের সাহায্য খারাপ নয়, কিন্তু সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। কারণ কালকে যদি সেই সাহায্য বন্ধ হয়ে যায়, তখন আপনি একেবারেই অসহায় হয়ে পড়বেন।
বাস্তবতা
জীবন মানে প্রতিদিন নতুন লড়াই। এখানে যারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখে, তারাই টিকে থাকে। ঝড়-ঝাপটা আসবে, শক্তি কমবে, হয়তো একসময় হাঁটাও কষ্টকর হবে— তবুও হাঁটতে হবে। কারণ আপনি থেমে গেলে পথ থেমে যাবে।
জীবনের মূলমন্ত্র হলো—
“নিজের পায়ে যতক্ষণ শক্তি আছে দৌড়াতে হবে, শক্তি কমে গেলে হাঁটতে হবে, কিন্তু অন্যের পা ধরে কখনো চলা যাবে না।”
কারণ একদিন আপনি বুঝবেন, যে নিজে হাঁটে সে-ই সবচেয়ে শক্তিশালী।