মাথার মুকুট
শহরের ভেতরে ছোট্ট এক পাড়া—মাটির গলি, ভাঙাচোরা ঘর, আর চায়ের দোকানেই পাড়ার খবরের আড্ডা।
সেখানেই থাকতো আলম—সদা হাসিখুশি, সাহায্যপ্রিয় এক মানুষ।
আলমের একটা অভ্যাস ছিলো—
যে কেউ তাকে ভালো কথা বললে, একবার প্রশংসা করলে, সে সেই মানুষটাকে নিজের মাথায় তুলে রাখতো।
“মানুষ তো সোনার চেয়ে দামি”—এই ভাবনায় সে চলতো।
প্রথম ভুল
পাড়ায় একদিন নতুন ভাড়াটিয়া এলো—শামীম।
মুখে মিষ্টি কথা, গল্পে দারুণ, আর সবসময় নিজেকে কষ্টে থাকা মানুষ হিসেবে দেখাতো।
শামীম আলমের কাছ থেকে একটু সাহায্য চাইলো—একশ টাকা ধার।
আলম দিলো, আর ভাবলো—
> “আহা, এই মানুষটাকে আমি পাশে রাখবো।”
ধার দেওয়া টাকাটা শামীম ফেরত দিলো না।
উল্টে আলমকে বলতে লাগলো—
> “দোস্ত, তুমি আমার ভাই, ভাইয়ের কাছ থেকে কি টাকা নেওয়া যায়?”
আলম রাগ করলো না, বরং ভাবলো—এটা তো ছোটখাটো ব্যাপার।
দ্বিতীয় ভুল
পাড়ায় একটা ঝামেলা হলো—কে যেন দোকান থেকে জিনিস চুরি করেছে।
শামীম সবাইকে বললো—
> “আমি তো কিছু করিনি, কিন্তু আলম ভাই জানেন আমি কত ভালো।”
আলম তার কথা বিশ্বাস করলো, এমনকি সবার সামনে শামীমের হয়ে কথা বললো।
পরে জানা গেলো—চোর ছিলো শামীমই।
কিন্তু তখন সবার চোখে সন্দেহ গেলো আলমের দিকেও—কারণ সে অপরাধীর পক্ষে দাঁড়িয়েছিল।
মাথার উপর থেকে পা
আলমের বন্ধুমহলে শামীম এখন রাজা হয়ে গেছে।
সব কাজেই সে আলমের নাম ব্যবহার করতো—
> “আলম ভাই আমার মানুষ, কাজ হয়ে যাবে।”
এভাবে লোকজন থেকে টাকা, সুবিধা, এমনকি বাজারের দোকানদারদের কাছ থেকেও জিনিস তুলে নিতো।
যখন লোকজন আলমের কাছে অভিযোগ আনলো, শামীম বললো—
> “আপনারা ভুল বুঝছেন, সব আলম ভাইয়ের কাজ। আমি তো কিছুই জানি না।”
এবার আলমের মাথা ঘুরে গেলো—যাকে নিজের মাথায় তুলেছিল, সে-ই এখন তার মাথার উপর পা দিয়ে দাঁড়িয়েছে।
একদিন আলম শামীমকে বাজারে গিয়ে থামিয়ে দিলো—
> “তুই আমার মাথায় ছিলি, কারণ আমি তোকে মানুষ ভেবেছিলাম। কিন্তু তুই মানুষ না, তুই বোঝা।”
শামীম হাসলো, বললো—
> “দোস্ত, মানুষকে মাথায় তুলতে নেই—এই শিক্ষা তুই এখন পেলি।”
বলেই ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে গেলো।
এরপর
আলম শিখলো—
সবাই ভালো মানুষ না, ভালো মুখ মানেই ভালো মন নয়।
ভুল মানুষকে মাথায় তুললে তারা একদিন আপনাকে পায়ের নিচে মাড়াবে।
শ্রদ্ধা, সম্মান আর ভরসা—যাকে দেওয়া হয়, তার যোগ্যতা আগে বুঝে নিতে হয়।
এখন আলম মানুষের প্রতি ভালো, কিন্তু ভরসা দেওয়ার আগে সে ভালো করে দেখে নেয়—
> “এ মানুষটা আমার মাথার মুকুট হবে, না মাথার বোঝা?”