পাড়ার কিছু আন্টি নামে গাল নাগিনদের জন্য আজকে আমার এতো কষ্ট ।

নারীদের কানা ফুঁসা কতটা ভয়ংকর

নারীদের কানা ফুঁসা

বাড়ির আঙিনায় বসে আকাশ খান আজ একা। কেউ পাশে নেই, কেউ খোঁজও নেয় না। অথচ এই বাড়িতেই একদিন ছিলো প্রাণ, ভালোবাসা, হাসি—একটি পরিপূর্ণ সংসার। চার বছরের দাম্পত্য জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল প্রার্থনার মতো পবিত্র, যত্নের মতো কোমল। কিন্তু এখন… এখন কেবল অশ্রুর জল।

আকাশ ছিলেন পরিবারের একমাত্র ছেলে। বাবা-মায়ের চোখের মণি, বোনদের আদরের ভাই। বিয়ের আগপর্যন্ত সবাই ভালোবাসত। কিন্তু বিয়ের পর সেই ভালোবাসা বদলে গেল অভিযোগে, অবহেলায়, সন্দেহে।

স্ত্রী ছিলেন একজন পর্দানশীল, নম্র, শিক্ষিতা, সংসারী নারী। বিয়ের পর পরই আকাশের মা প্রথমে খুব খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু সমাজের কিছু নারীর কু-বাক্য, কু-পরামর্শ ধীরে ধীরে সেই মায়ের মনে বিষ ঢেলে দেয়। "মেয়েটা তো ছেলের চেয়ে বড় দেখায়", "মেয়ের পরিবার কিচ্ছু দেয়নি", "সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘুমায়",—এইসব কথাই মা’কে ঘায়েল করতে শুরু করে।

বউমা একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠলেই উঠতো ঝড়। অথচ সময়টা সকাল ৭টা। মা বলতেন, “এই মেয়েটা জমিদারের মেয়ে না হয়, যে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘুমায়?” অথচ বউমা একটাও কথার জবাব দিত না, চুপচাপ চোখের জল ফেলত।

আকাশ তার স্ত্রীর হাত ধরেছিলো ভালোবেসে, ধর্মের নির্দেশ মেনে। বিয়ের আগে থেকেই তার একটিই শর্ত ছিল—পর্দাশীল মেয়ে চাই। আল্লাহ তাকে সেই নেয়ামতই দিয়েছিলেন। কিন্তু সমাজ তাকে মেনে নেয়নি। একদল পাড়া-প্রতিবেশীর মহিলা প্রতিদিন বিষ ছড়াত আকাশের ঘরে।

সেই মহিলারা নিজের স্বামীর কাছে ভালোবাসা পেলে গর্ব করে, আর আকাশ তার স্ত্রীকে ভালোবাসে বললেই শুরু হতো সমালোচনা—“স্ত্রীর কথা শোনে, মায়ের কথা শোনে না!” অথচ মা-বাবা যত কথাই বলুক, আকাশ কখনো উচ্চস্বরে কিছু বলেনি। বরং স্ত্রীকে বলত, “মা-বাবা বয়সে বড়, ওনারা কিছু বললে মন খারাপ করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।”

কিন্তু সেই ঠিক আসেনি।

দিন দিন সংসারে বিষ ছড়াতে শুরু করে এলাকার কিছু তথাকথিত 'শুভানুধ্যায়ী' আন্টির দল। ওনারাই পর্দাশীল সেই মেয়েটিকে নিয়ে কানাঘুষো করত, আবার তার সাজসজ্জা নিয়েও কথা বলত। আকাশের স্ত্রী ঘরের কাজ করে, রান্না করে, পর্দা করে তবুও সুখ নেই। কারণ তাদের চাওয়া, মেয়ে না হোক বউ—জানোয়ারের মতো নিঃশব্দ, নিঃসাড় হোক।

আর শুরু হলো অন্য এক চাপ—যৌতুকের নাম করে ‘বাবার বাড়ি থেকে কী আনল’? মা বলতেন, “সবাই আনে, তুই আনতে পারবি না?” আকাশ উত্তর দিত, “মা, ওরা যা পেরেছে, সম্মানের সাথে দিয়েছে। আমি চাই না হারাম কিছু নিয়ে সংসারে আল্লাহর গজব আসুক।” কিন্তু সেই যুক্তি থেমে যেত মা’র কান্নার শব্দে।

একদিন এক ঝগড়ার পর মা বলেছিলেন, “তোর বউ সংসার ভাঙবে, তুই বুঝবি না।” অথচ আসল ভাঙনটা করছিল যারা, তারা ছিল বাইরের সেই মুখোশধারী সমাজপতিরা। যে সমাজ দেখে না কার চোখে জল, কেবল খোঁজে পরচর্চা।

অবশেষে মা-বাবার ওপর চাপ, সমাজের চোখ, এলাকার মহিলাদের ফিসফাসে আকাশের সংসার ভেঙে যায়। তারা আকাশকে বলে—“তুই অমানুষ, মায়ের কথায় না চললে তোকে ত্যাজ্য করব।” আর স্ত্রী… চোখের জল নিয়ে বিদায় নেয়। চিৎকার করে না, প্রতিশোধ নেয় না, শুধু মাথা নিচু করে চলে যায়।

আজ আকাশ একা। মা-বাবা একদিন বলেছিলেন—“সব তোর স্ত্রীর দোষ।” এখন তারাও বুঝে গেছেন, দোষ ছিল নিজের চোখের দৃষ্টিভঙ্গিতে, সমাজের কু-বক্তব্যে, আন্টি নামের বিষধর নাগিনদের কথায়।

আকাশ এখন বলে না কিছু, শুধু একটিই কথা ভাবে—“ভালোবাসার অপরাধ কী ছিল? ভালো স্বামী হতে চাওয়া কি অপরাধ?”

এই সমাজে যখন ভালোবাসা দেখালে পুরুষ “স্ত্রী-ঘেঁষা” হয়, তখন জেনে রাখুন—সংসার নয়, বরং নষ্ট হয় মনুষ্যত্ব।