বাচ্চা না হওয়ার কষ্টের গল্প | খুব কষ্টের গল্প

 খুব কষ্টের ভালোবাসার গল্প

খুব কষ্টের ভালোবাসার গল্প

'আমার মা‌য়ের কথায় আমি আমার অনাগত প্রথম সন্তান‌কে এবরশন ক‌রে মে* রে ফে‌লে‌ছিলাম।'

মে‌য়ে‌টির কথা শু‌নে হা হ‌য়ে তা‌কি‌য়ে রইলাম। প‌রিবা‌রের সা‌থে ঘুর‌তে সি‌লেট গি‌য়েছিলাম। আসার প‌থে ট্রে‌নে ঢাকা আস‌ছিলাম। আপু‌টি আমার পা‌শের সি‌টেই ব‌সে ছি‌ল। কেমন যে‌ন বিষন্নতায় ভরা তার চেহারা। কেঁ‌দে কেঁ‌দে চোখ মুখ লাল ক‌রে ফে‌লে‌ছিল। অনেক সাহস ক‌রে প‌রি‌চি‌তো হওয়ার জন্য কথা বললাম, তার নাম অন্তরা। বেশ কিছুক্ষণ কথা হওয়ার পর সাহস ক‌রে জি‌জ্ঞেস ক‌রেই ফেলালাম,

'আপ‌নি কাঁদ‌ছেন কেন?'

‌তি‌নি আনম‌নে ব‌লে উঠ‌লেন,

'আমার মা‌য়ের কথায় আমি আমার অনাগত প্রথম সন্তান‌কে এবরশন ক‌রে মে‌রে ফে‌লি।'

আমি বেশ অবাক হ‌য়ে জি‌জ্ঞেস করলাম,

'আপ‌নি এমনটা কেন কর‌লেন?'

'আমার মা‌য়ের কার‌ণে।'

'কিছু ম‌নে না কর‌লে সবটা খু‌লে বল‌বেন প্লিজ!'

'আ‌মি যখন ইন্টার ২য় ব‌র্ষে উঠলাম তখন আমার বি‌য়ে হয়। খুব অল্প বয়স হওয়ায় তখন বি‌য়ে কর‌তে চাই‌নি, কিন্তু বাবা-মা একরকম জোর ক‌রেই বি‌য়ে দি‌য়ে দেয়। আস‌লে আমার ব‌র রিয়াদ‌ এর অবস্থা খুব ভা‌লো। সে দেখ‌তেও খুব সুন্দর। মোটামু‌টি টাই‌পের ভা‌লো ব্যবসায় আছে তার। তাছাড়া সে তার বাবা মা‌য়ের একমাত্র সন্তান। সব মি‌লে‌য়ে আমার প‌রিবা‌রের পছন্দ হয় তাই, তাড়াহুড়প ক‌রেই বি‌য়ে দি‌য়ে দেয়। প্রথ‌মে বাবা মা‌য়ের উপর ভীষণ রাগ হ‌য়ে‌ছি‌ল, কিন্তু বি‌য়ের পর রিয়া‌দের ভা‌লোবাসা, ওর খেয়াল রাখা দে‌খে বাবা মা‌য়ের উপর থে‌কে রাগ প‌ড়ে গে‌ছিল। বি‌শেষ ক‌রে রিয়া‌দের মা ওনার মত ভা‌লো ম‌হিলা আমি জীব‌নে দে‌খি‌নি। কোন মানুষ যে এত ভা‌লো হ‌তে পা‌রে তা রিয়া‌দের মা‌কে না দেখ‌লে বুঝ‌তে পারতাম না।


‌বি‌য়ের পর রিয়া‌দের মা‌য়ের কাছ থে‌কে যে ভা‌লোবাসা, স্নেহ আর আদর পে‌য়ে‌ছি তা আমি নি‌জের মা‌য়ের কাছ থে‌কে পে‌য়ে‌ছি ব‌লে ম‌নে হয়‌নি। জীবনে যে‌ন জান্না‌তের সুখ অনুভব কর‌তে লাগলাম। রিয়া‌দের মা কড়া ক‌রে ব‌লে দি‌ছে স্বামীর সা‌থে ঘোরাঘু‌রি, ডে‌টিং, ফে‌টিং যা ইচ্ছা ক‌রো, কিন্তু তার জন্য লেখাপড়ায় বে‌খেয়া‌লি হ‌লে চল‌বে না। লেখাপড়া ঠিকভা‌বে কর‌তে হ‌বে ব‌লে দিলাম। দেখ‌তে দেখ‌তে এইচ এস সি পরীক্ষার পর অর্না‌সে ভ‌র্তি হলাম ক‌য়েক‌দিন ক্লাস করার পর শরীরটা কেমন যে‌ন লাগ‌তে শুরু কর‌লো। রিয়াদ তখন ঢাকার বাই‌রে ছি‌ল। ওকে টেনশন দি‌তে চাই‌নি ব‌লে কিছু না ব‌লে নি‌জেই ডাক্তার কা‌ছে গেলাম। ডাক্তার পরীক্ষা ক‌রে বল‌ল, আমি প্রেগ‌নেন্ট। খবর শু‌নে ভীষণ খু‌শি লাগ‌ছি‌ল, কিন্তু সা‌থে কেমন যে‌ন অসম্ভব রকম ভয় এসে ম‌নে ভর কর‌লো। এতটুকু বয়‌সে বাচ্চা সামলা‌তে পার‌বো তো? কোন কিছু বুঝ‌তে না পে‌রে আমার মা‌কে ফোন দিলাম।


মা আমার কন‌সিভ করার খবর শু‌নে খুব বকা দি‌লো। বল‌ল, নি‌জের প্র‌তি কোন ক‌ন্ট্রোল নাই, সর্তক থাক‌তে পা‌রিসনি। এত ছোট বয়‌সে বাচ্চা হ‌লে সালা‌বি কি ক‌রে? নি‌জের শরী‌রের কী হ‌বে? লেখা পড়া ভ‌বিষ্য‌তের কি হ‌বে? আরো অনেক কিছু। মা আমা‌কে বল‌লেন এ কথা তোর শাশু‌ড়ি বা বর কাউ‌কে জানাস না এখন। প‌রেরটা আমি দেখ‌ছি। মা‌য়ের কথা শু‌নে জীব‌নে প্রথম ভু‌লের দি‌কে পা বাড়ালাম। পরের দিন মা ভাইয়া‌কে পা‌ঠি‌য়ে দি‌লেন আমা‌কে নি‌তে আমার শাশু‌ড়ি‌কে বল‌লেন, মা‌য়ের শরীরটা ভা‌লো না। রিয়াদের সা‌থে ফো‌নে কথা ব‌লে শাশু‌ড়ি মা‌য়ের অনু‌মো‌তি নি‌য়ে ভাইয়ার সাথে সি‌লেট মা‌নে আমা‌দের বা‌ড়ি চ‌লে আসি।


বা‌ড়ি এসে মা নানাভা‌বে বু‌ঝি‌য়ে এবরশন করা‌তে বল‌লেন। প্রথ‌মে মন সায় না দি‌লেও প‌রে কে‌নো যে‌ন মা‌য়ের কথা মে‌নে নিয়ে এবরশন ক‌রি‌য়ে ফেললাম। এটা ছি‌ল জীব‌নের সব‌চে‌য়ে বড়ো ভুল। মা বল‌লেন, রিয়াদ‌কে এসব জানা‌নোর কোন দরকার নাই। আমি মা‌য়ের কথা মে‌নে নিলাম কিন্তু ম‌নের ম‌ধ্যে সবসময় একটা অপরাধ আর ভয় বোধ কাজ কর‌ছি‌ল। তারপর খুব সুন্দরভা‌বেই কে‌টে গি‌য়ে‌ছিল ক‌য়েকটা বছর। এর ম‌ধ্যে অর্নাস শেষ কর‌ছি আর পড়বো না ব‌লে সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছি। আর গত দু বছর যাবত আমরা বে‌বির জন্য ট্রাই করছিলাম, কিন্তু কন‌সিভ কর‌ছিলাম না। ডাক্তার দেখা‌লেও ডাক্তার কোন প্রব‌লেম পায় না , না আমার না ওর। এরপর একজন না‌মি দা‌মি ডাক্তা‌রের কা‌ছে যাই, তখন চেম্বা‌রে আমার সা‌থে রিয়াদও ডু‌কে। তি‌নি আমায় কিছু প্রশ্ন‌ কর‌লেন?

'আমার কোন বে‌বি আছে কিনা? জন্ম নিয়ন্ত্র‌নের জন্য কি কি পদ্ধ‌তি গ্রহন ক‌রে‌ছি আর শেষ প্রশ্নটা ছি‌লো প্রথম বে‌বি এবরশন কেন আর কত দিন আগে ক‌রি‌য়ে‌ছেন ?'


ডাক্তা‌রের কথা শু‌নে আমার ক‌লিজা শু‌কি‌য়ে গে‌ল। রিয়া‌দের দি‌কে তাকালাম দেখলাম সারা রা‌জ্যের বিষ্ময় ওর চো‌খে মু‌খে ভীর ক‌রে‌ছে। অনেক ভয় পে‌লেও ভাবলাম নাহ্ আর লু‌কোচু‌রি নয় এবার যা হবার স‌ত্যি দি‌য়ে হ‌বে। ডাক্তারকে ব‌লে দিলাম পাঁচ বছ‌র আগে। তখন ডাক্তার বল‌ল,

'দেখ‌ুন আজকালকার দি‌নে প্রথম বে‌বি এবরশন না করাই ভা‌লো। প্রথম বে‌বি এবরশন করা‌নোর ফ‌লে আপ‌নার শরী‌রে হর‌মোনাল অনেক চেঞ্জ হ‌য়ে‌ছে, যার কার‌নে প‌রের বার মা হ‌তে পার‌বেন কি না তা স‌ঠিক করে বলা মুশকিল। ঔষধ দি‌চ্ছি, এখন সব আল্লাহর ইচ্ছা!'


এতক্ষন ডাক্তা‌রের সা‌থে কথ‌া বলার সময় রিয়াদ একটা কথাও বল‌লো না। চ‌ুপচাপ পাথ‌রের মত দা‌ঁড়ি‌য়ে ছিল। চেম্বার থে‌কে বের হ‌য়ে বা‌ড়ি আসার প‌থে সারা পথ কোন কথা বল‌ল না। বা‌ড়ি গি‌য়ে দেখি মা বা‌ড়ি‌তে নেই কা‌জের মেয়েটা বল‌ল, তার না‌কি চাচা‌তো বোন মারা গে‌ছে সেখা‌নে গেছে আমরা বা‌ড়ি আস‌লে আমরাও যে‌ন সেখা‌নে যাই। রিয়াদ কা‌জের মে‌য়েটা‌কে তার বা‌ড়ি যে‌তে ব‌লে মে‌য়েটা চ‌লে গে‌লে রিয়াদ রু‌মে এসে ঠাস ক‌রে আমার গা‌লে একটা চড় মার‌লো। তারপর বল‌ল,

'আজ প্রায় সাত বছ‌রের বিবা‌হিত জীব‌নে প্রথম বার তোমায় চড় মারলাম। কেন মার‌লে আমার বাচ্চাটা‌কে, অন্তরা! না তু‌মি এটা ভে‌বে না আমি ভে‌বে‌ছি এটা অন্য কা‌রো বাচ্চা বা তোমার সা‌থে অন্য কা‌রো সম্পর্ক ছি‌ল। আমি জা‌নি তু‌মি তেমন মে‌য়ে নও, কিন্তু কেন আর কী কার‌ণে পাঁচ বছর আগে তু‌মি আমা‌দের বাচ্চাটা‌কে পৃ‌থিবী‌তে আসার আগেই মে‌রে ফেল‌লে? আর আমা‌কে কেন জানা‌লে না?'


আমি রিয়াদ‌কে সবটা খু‌লে বললাম। সব শু‌নে ‌রিয়াদ বলল,

'আমার বে‌বি তোমার গর্ভে ছি‌ল, সেটা তু‌মি আমা‌কে জানাও‌নি পর্যন্ত। আবার না আমা‌কে না জা‌নি‌য়ে আমার বাচ্চাটা‌কে মে‌রে ফেলার অধিকার কে দি‌য়ে‌ছে তোমায়? অন্তরা, আমি নি‌জে থে‌কেই তখন তোমা‌কে বলতাম তু‌মি অর্নাস ৩য় ব‌র্ষে উঠার পর বে‌বি নেওয়ার কথা ভাব‌বো। কারন তখন তোমার স‌ঠিক বয়স হ‌বে কিন্তু ভুল বস‌তো যখন বে‌বিটা কন‌সিভ হ‌য়ে গে‌ছি‌ল হয়‌তো আল্লাহ কোন চিন্তা ক‌রেই দি‌য়ে‌ছি‌লে। হ্যাঁ তোমার তখন সামলা‌তে কষ্ট হ‌তো, কিন্তু আমি ছিলাম মা ছি‌ল। দুজন মি‌লে ঠিক সব সাম‌লে নিতাম। তু‌মি জা‌নো বাবা মারা গে‌ছে আমা‌দের বি‌য়ের ছয় মাস পর তখন বাবার খ‌ুব ইচ্ছা ছি‌ল না‌তির মুখ দেখার, কিন্তু মা তখন বাবা‌কে ব‌লে‌ছে মে‌য়েটার বয়স অল্প এখন বাচ্চার দা‌য়িত্ব নেয়ার বয়স হয় নাই। আমার নি‌জের মা যে কি না তোমার শাশু‌ড়ি সে তোমা‌কে এত ভা‌লোবাস‌তো অথচ তোমার মা কী কর‌লো? আর তু‌মিই বা আমা‌দের ভা‌লোবাসার কি প্র‌তিদান দিলা? এখন এই মুহূ‌র্তে আমার ঘর থে‌কে বেরি‌য়ে যা‌বে। আমি তোমার মুখ আর দেখ‌তে চাই না।'

‌রিয়াদ তখন অনেক কান্না কর‌লো। রিয়াদ‌কে কি ব‌লে বুঝা‌বো ভে‌বে পা‌চ্ছিলাম না! কী-ই-বা বুঝাতাম বুঝা‌নোর মত‌ে‌া কিছুতো ছি‌লে‌া না। তারপর বুঝা‌নোর বৃথা চেষ্টা কতক্ষণ করলাম, কিন্তু লাভ হ‌লো না। রিয়াদ আমার হাত ধ‌রে বা‌ড়ি থে‌কে বের ক‌রে দি‌লো। কোন উপায় না পে‌য়ে চ‌লে এলাম সি‌লেট। বা‌ড়ি এসে মা‌কে সব খু‌লে বলা‌তে মা উল্টা কথা বলা শুরু কর‌লো সে না‌কি রিয়াদ আর রিয়া‌দের মা‌য়ের না‌মে নির্যাত‌নের মামলা কর‌বে। মা‌য়ের পা ধ‌রে মা‌কে থামালাম। কারন একটা মিথ্যা একটা পাঁপ আমা‌র জীব‌নের রঙ কে‌ড়ে নিয়ে‌ছে আর মিথ্যা ব‌লে পাঁপ কর‌তে চাই না।


তারপর বেশ কিছু‌দিন সময় চ‌লে যায়। প্রথম প্রথম ক‌দিন বাবা-মা, ভাইয়া-ভা‌বি আমার মোটামু‌টি খেয়াল রাখ‌লেও ধী‌রে ধী‌রে তা‌দের কা‌ছে বোঝা হ‌তে শুরু করলাম। কার‌ণে অকা‌র‌ণে ভা‌বি কথা শুনা‌তো, খোটা দি‌তো। মাস তি‌নের ম‌ধ্যে মা-ও আমা‌কে যা তা বলা শুরু কর‌লো যেমন: বি‌য়ের পরও বাপ ভাই‌য়ের অন্ন ধ্বংস কর‌ছি, অপয়া, আরও অনেক কথা। তখন মা‌কে খুব বল‌তে ইচ্ছা করতো তু‌মি‌তো আমার আপন মা, আর আমার সর্বনা‌শের জন্য তু‌মিই দায়ী, তাহ‌লে তু‌মি এ কথা কীভা‌বে ব‌লো? কিন্তু চুপ ক‌রে থাকতাম। কারণ আমার দুর্ভ‌গের জন্য মা‌য়ের ‌থে‌কে আমি বে‌শি দায়ী ছিলাম।


‌তিন মা‌সে রিয়াদ‌কে অনেক ফোন ক‌রেছি, কথা ব‌লে‌নি আমার সাথে। রিয়া‌দের মা‌য়ের সা‌থে প্রায়ই কথা হ‌তো তি‌নি আমা‌দের বিষ‌য়ে জান‌তেন না জান‌তেন ঝগড়প হ‌য়ে‌ছে। রিয়াদ না‌কি বল‌ছে সময় হ‌লে বল‌বে, কিন্তু তি‌নি আমা‌কে ফি‌রে যে‌তে বল‌তেন খুব কান্না কর‌তেন। আমার তখন নি‌জে‌কে আরো বে‌শি অপরাধী ম‌নে হ‌তো। তা-

ই তা‌কে সব স‌ত্যি ব‌লে‌দি। তি‌নি সে‌দিন সবটা শুনে ফোন কে‌টে দি‌য়ে‌ছিল হয়‌তো আমার সা‌থে কথা বলার রু‌চি চ‌লে গি‌য়ে‌ছে। সে‌দিন নি‌জে‌কে সব থে‌কে বেশ নিঃশ্ব ম‌নে হ‌য়ে‌ছি‌ল। 


তারপ‌রের দিন বিকা‌লে একটা অচেনা নাম্বার থে‌কে ফোন আসে ফোনটা রি‌সিভ ক‌রি, কিন্তু ‌কোন কথা বলার আগেই ভা‌বি আর মা রু‌মে এসে প‌রে, এবং আমা‌কে নানান রকম কথা শুনা‌তে থা‌কে তাদের কথা শু‌নে আমার ফো‌নের কথা খেয়াল ছি‌লো না। অনেক কান্না করলাম সে‌দিন সারারাত জে‌গে রিয়াদ আর ওর মা‌য়ের ছ‌বি দেখ‌ছিলাম। রাত তিনটার দি‌কে সেই নাম্বারটা থে‌কে কল আসে। হ্যা‌লো বল‌তেই বু‌ঝে যাই রিয়াদ ফোন ক‌রে‌ছে চার মাস পর রিয়া‌দের গলার আওয়াজ পে‌য়ে ফু‌পি‌য়ে কেঁ‌দে উঠলাম। 


‌রিয়াদ বলল,

'মা, তোমা‌কে মাফ ক‌রে দি‌তে বল‌ছে। তোমা‌কে ‌ফি‌রি‌য়ে নি‌তে বল‌ছে। তু‌মি আস‌বে?'

‌রিয়া‌দের কথায় স্পষ্ট বুঝ‌তে পার‌ছিলাম রিয়াদ কাঁদ‌ছে। আমি জি‌জ্ঞেস করলাম,

'মা না হয় ফি‌রে আস‌তে ব‌লে‌ছেন, ত‌বে তু‌মি কি চাও?

ধরা ক‌ণ্ঠে রিয়াদ বলল,

'আমি তোমা‌কে ছে‌ড়ে আর থা‌কতে পার‌বো না, অন্তু। তোমা‌কে ঐ নর‌কে আর থাক‌তে দি‌বো না। আমি বিকা‌লে ফো‌নে তোমার মা আর ভা‌বির সব কথা শুন‌ছি। আমি জা‌নিনা বাচ্চা হ‌বে কী না? ত‌বে এটা জা‌নি তোমা‌কে ছে‌ড়ে বাঁচা আমার প‌ক্ষে সম্ভব না অন্তু। চার মাস আমি কীভা‌বে কা‌টি‌য়ে‌ছি তা কেবল আমি জা‌নি। আর তাছাড়া মা‌কে তু‌মি স‌ত্যি বলার পর মা আমার উপর খুব রাগ কর‌ছে বল‌ছে বাচ্চা একটা মে‌য়ে অন্যের প্ররচনায় প‌রে একটা ভুল কর‌ছে আর তু‌ই মে‌য়েটা‌কে বা‌ড়ি থে‌কে বের ক‌রে দি‌লি যতক্ষণ পর্যন্ত অন্তরা বা‌ড়ি না আস‌বে ততক্ষণ পর্যন্ত তোর সা‌থে কথা বল‌বো না। 

অন্তরা কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে বললাম,

'আমি আস‌বো রিয়াদ। কাল সকা‌লেই আস‌বো।%

'কিন্তু তোমা‌কে একটা প্র‌মিজ কর‌তে হ‌বে এমন কাজ আর কখ‌নো কর‌বে না। আর হ্যাঁ তোমার মাকে ব‌লো পার‌তে সাধ্যে তু‌মি আর তার কা‌ছে যা‌বে না'


আমি কাঁদ‌ছি কিন্তু খু‌শি‌তে কাঁদ‌ছি। প‌রেরদিন খুব সকা‌লে বাবা‌কে সব খু‌লে বললাম আর আসার সময় মা‌কে শুধু একটা কথাই বলে আসলাম,

'তোমার মত মা যে‌ন আল্লাহ শত্রু‌কেও না দেয়। কারন তু‌মি মাতৃ‌ত্বের মর্ম বোঝ না। এখন আমি রিয়া‌দের কা‌ছে যা‌চ্ছি।,


অন্তরা আপুর সা‌থে আরো বেশ কিছুক্ষন কথা বলার পর ট্রেন ঢাকা আস‌লো। সবাই একসা‌থে নামলাম। অন্তরা আপু‌কে দেখলাম দূ‌রে দাঁড়া‌নো একজন পুরুষ আর বোরকা প‌রি‌হিতা এক ম‌হিলার দি‌কে যে‌তে। হয়‌তো তার বর আর শ্বশুড়ী। অন্তরা আপু গি‌য়ে ম‌হিলা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কান্না ক‌রতে থাক‌লো। ম‌হিলা অন্তরার কপা‌লে চ‌ু‌মু দি‌য়ে পরম মমতায় তা‌কে বু‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌লেন। আর পা‌শে দাড়া‌নো ছে‌লে‌টি মা‌নে রিয়াদ সেও এ পর্যায় কান্না কর‌তে কর‌তে অন্তরা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌লো। তারপর তিনজন মি‌লে চ‌লে গে‌ল। আমি বেশ কিছুক্ষণ তা‌কি‌য়ে ভাবলাম এমন ভা‌লো শাশু‌ড়ি পৃ‌থিবী‌তে আছে বিধায় বউয়েরা এখ‌নো সুন্দরভা‌বে বেঁ‌চে আছে। সু‌খে থাকুক অন্তরা আপু আর তার প‌রিবার, আল্লাহ্ তা‌দের ঘ‌রে নতুন অতিথী পা‌ঠি‌য়ে তা‌দের সকল অপূর্নতা‌কে পূর্ন ক‌রে দিক। অন্তরা আপু‌কে মাতৃ‌ত্বের সুখ দিক।


#‌বিঃদ্রঃ গল্পটার মূল কাহী‌নি মা‌নে ৮০% কাহী‌নি বাস্তব জীবন থে‌কে নেওয়া। তাই বা‌জে মন্তব্য করা থে‌কে বিরত থাকুন। এখা‌নে মা‌কে কোন ভা‌বেই ছোট করা হয়‌নি, কারন সব শাশু‌ড়ি যেমন এক না তেম‌নি সব মা-ও এক না। অনেক শাশু‌ড়ি আছেন, যারা নি‌জের ছে‌লের বউকে মে‌য়ের মতো ভা‌লোবা‌সেন আবার অনেক আপন মা-ও আছেন যারা মা‌য়ের মূল অর্থটা ভু‌লে যায়। আর আপু‌দের বল‌ছি নিজের দাম্পত্য জীব‌নের কথা নি‌জেদের মা‌নে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই রাখুন। সেখা‌নে নি‌জের মা‌ বা বান্ধ‌বী‌কে টান‌বেন না। আমি এমন অনেক জায়গায় দে‌খে‌ছি যে, মা বা বান্ধবীর সংসা‌রে ভিত‌রে ঢোকার কার‌ণে সম্প‌র্কে ফাটল ধ‌রে। স্বামী-স্ত্রীর ব্য‌ক্তিগত বিষয় নিজেদের মা‌ঝেই রাখুন। ভাইয়ারাও এর বিপরীত কর‌বেন না। ত‌বে মে‌য়ে‌দের বা‌ড়ি‌য়ে কেন বললাম? কারণ উক্ত ভুল গুলা আমরা মে‌য়েরাই বে‌শি ক‌রি।



-মাতৃত্ব

লেখা: শার‌মিন আক্তার সাথী


মেয়েদের সংসার জীবনের গল্প পড়ুন।