অভিনয় মিথ্যা ভালোবাসা
গল্পের নাম: “রিদয়ের অভিমান”
চরিত্র পরিচিতি:
রিদয় – একজন গরিব ঘরের ছেলে, কিন্তু ভালোবাসায় সৎ, আত্মসম্মানে অটল।
আয়েশা – শহরের উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে, নিজের স্বার্থে ভালোবাসা ব্যবহার করে।
তানভীর – আয়েশার নতুন প্রেমিক, ধনী, দামি গাড়ি, কিন্তু সম্পর্কের কোনো মূল্য বোঝে না।
---
রিদয় বড় হয়েছে দারিদ্র্যের মাঝে। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছে, মা অন্যের বাসায় কাজ করে তাকে স্কুলে পাঠিয়েছে।
অভাবের মধ্যেও রিদয়ের মনে ছিল ভালোবাসার স্বপ্ন, যেখানে সে কাউকে পাবে—যে তার মনের মানুষ হবে, পাশে থাকবে, ভালোবাসবে।
তখন কলেজে পড়া অবস্থায় রিদয়ের পরিচয় হয় আয়েশার সাথে।
আয়েশা ছিল ঝাঁ চকচকে জামাকাপড় পরা, নামি পরিবারের মেয়ে।
প্রথমদিকে আয়েশা কোনো গুরুত্ব দেয়নি রিদয়কে।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে রিদয়ের যত্ন, ভালোবাসা, স্নেহ ও ভরসা পেয়ে আয়েশা এক সময় বলে বসে –
“তুমি যদি চাও, আমি সব ছেড়ে তোমার হবো রিদয়।”
রিদয় বিশ্বাস করে।
তার মা-ও বলে – “এই মেয়েটা সত্যি তোমার ভালো চায়।”
রিদয় ভাবে – এই মেয়ে তার জীবন সঙ্গী হবে, যার জন্য সে সব কিছু ত্যাগ করতে রাজি।
কিন্তু গল্পটা সেখানে থেমে যায় না।
একদিন হঠাৎ করেই আয়েশার ব্যবহারে পরিবর্তন আসে।
মেসেজে রিপ্লাই দেয় না, ফোন ধরেও বলে – “ব্যস্ত আছি।”
রিদয় জানতে পারে, আয়েশা এখন একজন বড়লোক ছেলের সাথে ঘোরাঘুরি করে।
ছেলেটার নাম তানভীর – শহরের নামকরা ব্যবসায়ীর ছেলে।
রিদয় কাঁদতে কাঁদতে একদিন আয়েশার বাড়িতে যায়।
দরজায় দাঁড়িয়ে বলে –
“তুমি তো বলেছিলে, তোমার মা আমাকে পছন্দ করে, আমাকে মেনে নেবে?”
আয়েশার এই কথা শুনে বলে...
আয়েশার মা বলে –
“তুই গরিবের ছেলে, তোর মতো ছেলের সঙ্গে আমার মেয়ে মানায়, তর সাথে আমার মেয়ের কখনো যায় না? তুই ছোট ঘরের তর স্বপ্নই ছোট, আমার মেয়ে বড় ঘরের তার স্বপ্ন অনেক বড়, আমার বাড়ির সামনে থেকে যা, তানাহলে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিবো।”
আয়েশা বলে উটলো–
“তানভীরের গাড়ি আছে, টাকা আছে, স্ট্যাটাস আছে। তুই কী দিতে পারবি?”
রিদয় সেই দিন বোঝে, মেয়েটা তার ভালোবাসাকে নয়, তার পকেটের ওজন দেখেছে।
তবুও একদিন সে আয়েশার কাছে যায়, বলে –
“তোমার জন্য আমি সবকিছু করতে রাজি। আমি পড়াশোনা শেষ করবো, বড় হবো, শুধু তুমি আমার সাথে থেকে যাও।”
আয়েশা হাসে।
তানভীরকে ডাকে।
তানভীর এসে রিদয়ের গলা ধরে, এক ঘুষি মেরে ফেলে দেয় মাটিতে।
রিদয়ের ঠোঁট থেকে রক্ত পড়ে, কিন্তু সে দাঁড়িয়ে থাকে।
সে ফিরে যায়, জেদ করে—
“আমি এখনো হেরে যাইনি। আমার আজ নেই কিছু, কিন্তু কাল সব থাকবে।”
তারপর শুরু হয় রিদয়ের সংগ্রাম।
দিনে রিকশা চালায়, রাতে প্রাইভেট পড়ে, নিজে খেয়ে না খেয়ে বই কেনে।
বছরের পর বছর কেটে যায়।
স্নাতক শেষ করে, মাস্টার্স শেষ করে।
পরীক্ষা দেয়।
শেষে, রিদয় হয়ে যায় প্রশাসনের বড় অফিসার—উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
তার ছবি পত্রিকায়, টেলিভিশনে, ইউটিউবে।
একদিন আয়েশা, যার এখন স্বামী তানভীর তাকে ছেড়ে দিয়েছে অন্য মেয়ের জন্য, ছুটে আসে রিদয়ের অফিসে।
চোখে পানি, গালে চুল এলোমেলো, হাহাকার করে বলে –
“রিদয়, আমাকে ক্ষমা করো। আমি ভুল করেছিলাম। তুমি ছিলে আমার আপন মানুষ।”
রিদয় তাকে দেখে, চুপ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে।
তারপর বলে –
“তোমার মা বলেছিল, তোমাকে আমার হাতে তুলে দেবে। কিন্তু সে ছিল লোভী।
তুমি বলেছিলে, আমাকেই ভালোবাসো, অথচ টাকার জন্য চলে গেলে।
তুমি আমাকে তোমার বড় লোক প্রমিক তানভীরকে দিয়ে মেরে , অপমান করে তারিয়ে দিয়েছিলে।
এখন সে কোথায়, তোমাকে আর ভালো লাগে না।
আর আজ কেন এসেছো?”
আয়েশা কান্না চেপে বলে –
“ভুল করেছি রিদয়... তোকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখতাম, এখনও দেখি।”
রিদয় কঠিন চোখে বলে –
ভুল বললে তুমি কখনোই আমাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখনি!
“আমি তো তোমাকে বিয়ে করার জন্য কতো স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেই স্বপ্নের প্রতিটি পাতা ছিঁড়ে আগুনে ফেলে দিয়েছি।
তুমি নষ্ট হয়ে গেছো, তোমার ভালোবাসা ছিল লোভে ভরা।
আজ আমি ভালোবাসি আমার সম্মানকে, সেই সম্মান আমি আর তোমাকে ছুঁতে দিবো না।”
আয়েশা পায়ের কাছে পড়ে কাঁদে, রিদয় তাকে দেখে শান্তভাবে অফিসে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
আর বলে আর কখনো ফিরে এসো না এখানে, তোমার জন্য সমস্ত দরজা বন্ধ হয়ে গেছে।
---
এই গল্পের উদ্দেশ্য:
সব সম্পর্কের ভিত্তি থাকে বিশ্বাসে, ভালোবাসায়।
যেখানে স্বার্থ থাকে, সেখানে সম্পর্ক টিকে না।
রিদয় তার ভালোবাসা হারিয়ে পেয়েছে সম্মান, পেয়েছে আত্মসম্মান, আর পেয়েছে এক অমূল্য জেদ—যা তাকে পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের শিখরে।