না পাওয়া ভালোবাসার কষ্টের গল্প
গল্পের নাম: "একবার ভালোবেসে, চিরদিন ভেঙে পড়া"
রাফি ছিল একেবারে সাধারণ ঘরের ছেলে। বাবার ছোট চাকরি, মায়ের হাতে গড়া সংসার। তবে ছেলেটার চোখে ছিল স্বপ্ন—একদিন অনেক বড় হবে, মায়ের কষ্ট দূর করবে, বাবাকে বলবে—“আপনি এখন বিশ্রাম নিন, আমি আছি।”
কলেজে পড়াকালীন রাফির জীবনে আসল তানিয়া।
তানিয়া ছিল প্রাণচঞ্চল, হাসিখুশি, শহুরে মেয়েদের মতো স্মার্ট। রাফি একটু লাজুক, কিন্তু তানিয়ার সামনে সব কথা বলে ফেলত—হাসি, কান্না, স্বপ্ন, ভয়। দু’জনের মধ্যে গড়ে উঠল এক গভীর সম্পর্ক।
রাফি ছিল যত্নশীল, প্রতিটি ছোট জিনিসে তানিয়াকে খুশি রাখার চেষ্টা করত। পকেট খালি থাকলেও, ভালোবাসায় ছিল ভরা। তানিয়া বলত,
— “টাকা না থাকলেও তুই আমায় ভালোবাসিস, এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় সম্পদ।”
রাফি বিশ্বাস করেছিল তাকে।
কিন্তু সময় বদলায়, মানুষও বদলায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠেই তানিয়ার চোখে ধরা পড়ল শহরের আলোকঝলমলে জীবন। ক্লাসের সেই ধনী ছেলে সাজিদ—গাড়ি, দামি ঘড়ি, বিদেশ ভ্রমণের গল্প, ইন্টারন্যাশনাল খাবার—সব কিছুই যেন আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠল তানিয়ার কাছে।
রাফি বুঝে উঠতে পারছিল না হঠাৎ এত দূরত্ব কেন। মেসেজের উত্তর আসত না, দেখা করার সময় মিলত না। একদিন ক্যাম্পাসের পাশে এক রেস্টুরেন্টে সে দেখে ফেলল তানিয়াকে সাজিদের পাশে বসে থাকতে। হাতে হাত, চোখে চোখ—সেই চেনা ভালোবাসার ছোঁয়া, যা একদিন তার ছিল।
রাফির পৃথিবী ভেঙে পড়ল।
তানিয়া পরে নিজেই বলল,
— “তুই ভালো ছেলে রাফি, কিন্তু তোকে নিয়ে কিছু হবে না। সাজিদের সাথে আমি সুখে থাকতে পারব। তোকে আমি ভাইয়ের মতো দেখি এখন।”
ভাই!
এই একটা শব্দ যেন হাজারটা ছুরির মতো বিঁধল রাফির বুকে।
সে রাত রাফি কাটিয়েছিল ঘরের ছাদে, চোখে পানি আর বুকভরা আঘাতে।
কিন্তু সে থেমে যায়নি।
প্রতিটা অপমানকে শক্তিতে পরিণত করল সে। পড়ালেখা শেষ করল। সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগল রাত জেগে। বছর তিনেক পর, সে হয়ে গেল প্রশাসনের একজন গর্বিত কর্মকর্তা—বড় অফিসার।
জীবন বদলে গেল।
গাড়ি, নাম, খ্যাতি—সব কিছু এল রাফির হাতে। কিন্তু তার মনটা ঠিক আগের মতোই রয়ে গেল—তানিয়ার সেই কথার মতো:
“আমি তোকেই চেয়েছিলাম সব সময়, যদি তুই টাকা কামাইতে পারতি!”
এদিকে সাজিদও ছিল অস্থির প্রকৃতির। কিছুদিন পরই তানিয়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলল। নতুন মেয়ের পেছনে ছুটতে শুরু করল। তানিয়া হারাল তার “আনন্দের” সঙ্গীকে, ফিরে এল একাকীত্বে।
আরও বছরখানেক পর, এক সন্ধ্যায় রাফির অফিসে হাজির হল তানিয়া—চোখে চশমা, চেহারায় পরিণত বয়সের ছাপ, আর কণ্ঠে এক ধরনের অনুশোচনার কাঁপুনি।
— “রাফি... তুই সত্যিই বদলে গেছিস। আমি ভুল করেছিলাম। সাজিদ টাকাই দিয়েছিল, ভালোবাসা নয়। আমি আবার তোকে ফিরে পেতে চাই।”
রাফি ঠাণ্ডা গলায় বলল,
— “তুই যেদিন সাজিদের গাড়িতে বসেছিলি, আমি সেই দিন থেকেই তোকে মনের মধ্যে কবর দিয়ে দিয়েছি। আমার আজ টাকা আছে, সম্মান আছে, কিন্তু তোকে আগলে রাখার মন আর নেই। তোকে আজ ঘৃণা করি না, কারণ তুই আমাকে মানুষ হতে সাহায্য করেছিস। কিন্তু তোকে গ্রহণ করবো না—কারণ আমি জানি তোর ভালোবাসার মাপে ‘টাকা’ ছিল, মন না।”
তানিয়া কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।
রাফি শুধু একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
— “ভালোবাসা কখনো টাকায় কেনা যায় না। মন দিয়ে যাকে আপন ভাবা যায়, সে-ই সত্যিকারের সঙ্গী। তুই তো হারিয়ে গেছিস, আমি নিজেকে ফিরে পেয়েছি।”
---
ভালোবাসার উদ্দেশ্যে কিছু কথা
ভালোবাসা যদি স্বার্থ দিয়ে মাপা হয়, তবে সেটা কখনো টেকে না।
একজন মানুষ হারিয়ে গেলে কিছু যায় আসে না,
যদি নিজের স্বপ্ন আর সম্মান বাঁচিয়ে রাখা যায়।