১৭ বছরের মেয়ের ৫০ এর স্বামী | গল্প: একটা চুড়ির দাম

 গল্প: একটা চুড়ির দাম

একটা চুড়ির দাম

সন্ধ্যার আগেই ঝড় উঠেছিল। গরম বাতাসে গাছের ডালপালা হেলে পড়ছে একদিকে। গ্রামের ভাঙাচোরা কাঁচা রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে একটা ছোট্ট মাইক্রোবাস। তাতে বসে আছে ১৭ বছরের সরল মেয়ে রাহিলা। তার সালোয়ার কামিজের রঙ যেমন ম্লান, মুখটা তেমনি নিস্তেজ। চোখে কেবল ভয়, কেবল অচেনা একটা জীবনের প্রতিচ্ছবি।


রাহিলার বাড়ি বরিশালের এক দূরবর্তী গ্রামে। বাবা দিনমজুর, মা গৃহিণী। অভাব এত বেশি যে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ক্লাস নাইনের পর। হঠাৎ একদিন মা এসে বলল—

“একজন পাকা মানুষ এসেছে, শহরে থাকে, গাড়ি আছে, দোকান আছে, বুড়ো হলেও খুব ভালো। তুই যদি হ্যাঁ বলিস, আমাদের দুঃখ শেষ হবে।”


রাহিলা কিছু বলতে চায়নি, শুধু বলেছিল,

“মা, আমি কি ওর মেয়ের বয়সী না? আমি ভয় পাই... আমি... আমি...”

এরপর মুখে এক চড়। মায়ের সেই কান্নাভেজা গলা—

“তুই আমাদের কতটুকু বুঝিস রে? পেটে ভাত না থাকলে ভালোবাসা দিয়ে কি জীবন চলে?”


বিয়েটা হয়ে গেল খুব দ্রুত। শহরের পঞ্চাশ বছর বয়সী মালিক শরীফ সাহেবের সঙ্গে বিয়ে। তার আগের স্ত্রী মারা গেছে, দুই ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গেছে, সে চায় একজন "শান্ত, ঘরকুনো" মেয়ে।


রাহিলা নতুন বাড়িতে এসে দেখল, এটা যেন কোনো ঘর নয়, একেকটা রুম যেন একটা বন্দিশালা। বর তার বয়সের দ্বিগুণ, মেজাজ খিটখিটে, কণ্ঠে আদর নয়, বরং আদেশ।


একদিন রান্নাঘরে হঠাৎ গ্যাসের আগুনে হাত পুড়ে যায়। সে কেঁদে কেঁদে স্বামীকে ডাকল। শরীফ সাহেব ধীরে হেঁটে এসে একটুকু চেয়ে বললেন,

“এই জন্যই তো বলি সাবধানে কাজ করো। আর একটা কাজের মেয়ে লাগিয়ে দিতে হবে মনে হচ্ছে।”


রাহিলা বোঝে—সে স্ত্রী নয়, এক ‘চাকরি’। সংসারে তার দায়িত্ব একতরফা—ভালোবাসার কোনো প্রতিদান নেই।


একদিন সে সাহস করে ছোট্ট একটা চুড়ি কিনে আনল নিজের জন্য। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবল—“এইটুকু জিনিস যদি আমাকে একটু ভালো লাগার অনুভূতি দেয়, তাহলে কি আমি খুব বেশি চাইছি?”


চুড়িটা দেখে তার স্বামী বলল—

“তোমার এসব সাজগোজ করার বয়স না, এসব আমার পছন্দ না। আমার স্ত্রীকে এসব মানায় না।”


রাহিলা কিছু বলেনি। চুড়ি খুলে রেখে দিল চুপচাপ। কিন্তু সেদিন থেকে ঠিক করে—সে আর কাঁদবে না। অন্তত নিজের জন্য প্রতিদিন ছোট কিছু ভালোবাসা খুঁজবে—একটা চুড়ি, একটা কবিতা, একটু রোদ, একটা গল্প।


তার ছোট ছোট সেই 'প্রতিদিন'ই তাকে মনে করিয়ে দেয়,

“তুই মানুষ রাহিলা। তোকে চুপ করে থেকে শুধু মানিয়ে নিতে হয়নি, তোর অধিকার আছে—স্বপ্নের, ভালোবাসার, নিজের মতো করে বাঁচার।”


এখনো সে বেঁচে আছে ওই পুরনো শহুরে বাড়িতে। কিন্তু সে ধীরে ধীরে নিজের মতো করে শিখে নিচ্ছে—যদি কেউ না ভালোবাসে, নিজেকে ভালোবাসতে হয়।

Disclaimer / Story Policy

This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.

We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.

If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.

"এই গল্পটি ‘জীবন যুদ্ধ গল্প.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com