জোর করে বিয়ে
কলেজ থেকে বের হওয়ার এক মাস পরেই মা-বাবার চাপে বিয়ে হয়ে গেল সায়লার।
ছেলেটা ছিল কানাডা ফেরত, উচ্চ শিক্ষিত, নিজের একটা সফটওয়্যার কোম্পানি চালায়। চেহারায় ভালো, পরিবারটাও অনেক ধনী।
বিয়ের প্রস্তাব এলে মা বলেছিল—
“মেয়ে, এমন ছেলে সবাই পায় না। আমরা তো চিরকালই মধ্যবিত্ত। এই একটা বিয়েই তো আমাদের কপাল ফিরবে।”
সায়লা কিছু বলার চেষ্টা করেছিল। তার ইউনিভার্সিটির বন্ধু রিদয়কে নিয়ে তার মনের কোণে ছোট্ট একটা স্বপ্ন ছিল। কিন্তু মা চোখের জল ফেলেছিল, বাবা চুপচাপ কাঁধে হাত রেখেছিল।
সেই রাতে সায়লা আর কিছু বলতে পারেনি।
বিয়ের কদিন আগে রিদয় মেসেঞ্জারে লিখেছিল—
“তুই কি নিশ্চিত? না হলে এখনও সময় আছে।”
সায়লা উত্তর দেয়নি।
বিয়ের পরে ঢাকা শহরের এক অভিজাত ফ্ল্যাটে উঠেছিল ওরা। দামি পর্দা, ঝাঁ চকচকে রান্নাঘর, আধুনিক সব আসবাব। একটা ঝলমলে জীবন চারপাশে।
স্বামী কাব্য ছিল একজন নিপাট ভদ্রলোক। কিন্তু কেমন যেন একটা দূরত্ব তার মধ্যে, যেন সবকিছু ঠিকঠাক করেও কোথাও কিছু আটকে আছে।
সায়লা দিন গুনত। সকালে কাব্য বেরিয়ে যেত, রাতে ফিরত ক্লান্ত হয়ে। কথা বলত প্রয়োজনমাফিক। সায়লা চেষ্টা করত ঘর গুছিয়ে রাখতে, ভালো রান্না করতে।
কিন্তু এক সন্ধ্যায় কাব্য হঠাৎ বলল—
“দেখো, আমাদের বিয়েটা দুজনের জন্যই একটু চাপে হয়েছে। আমি চেষ্টা করছি, তুমিও করো। কিন্তু বলেই রাখি—এই সংসারটা হবে একটা সুন্দর ব্যবস্থাপনা। অত আবেগ-ভালোবাসার আশায় থেকো না।”
সেই রাতে সায়লা ছাদে গিয়ে বসে ছিল অনেকক্ষণ। ঠান্ডা বাতাসে চোখের জল শুকিয়ে যাচ্ছিল।
তার মনে হয়েছিল—সে কি একটা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে?
পরদিন সকালে সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করল, “আমি কি সুখী?”
জবাব এলো না।
দিন, মাস পেরিয়ে গেল। কাব্য সৎ, দায়িত্ববান—কিন্তু দূরের।
সায়লার ঘর সাজানো হয়, তার দামী জামা-কাপড় আছে, বিদেশ ভ্রমণের প্ল্যান হয়।
কিন্তু কেউ তার চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে না—"তুই কেমন আছিস?"
একদিন একা এক কাপ চা খেতে খেতে সে নিজেকে বলে, “যদি রিদয়ের সাথে একটা ভাড়া বাসায় থাকতাম, সকালে তার মুখ দেখে ঘুম ভাঙত, রাতে তার গল্প শুনে ঘুমাতাম, সেটা কি কম কিছু হতো?”
তিন বছর পরে একদিন বাবার বাড়ি গিয়েছিল। মা বলেছিল—
“দেখিস, একটু ধৈর্য ধর, একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে।”
সায়লা হেসে বলেছিল—
“সব ঠিক মানে কি? সম্পর্ক গড়ে না তুলেই কি একটা জীবন ঠিক হয়?”
মা চুপ করে গিয়েছিল।
এক সন্ধ্যায় কাব্য বলেছিল,
“তুমি চাইলে চাইল্ড প্ল্যানিং শুরু করা যায়। সময় তো হয়ে গেছে।”
সায়লা ধীরে বলেছিল,
“আমি চাই না এমন ঘরে নতুন একটা জীবন আসুক, যেখানে অনুভূতির ঘরই তৈরি হয়নি।”
সেদিন কাব্য কিছু বলেনি। শুধু উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছিল।
সায়লা জানত, কাব্য হয়তো বোঝে সব, কিন্তু বলবে না কিছুই।
এইভাবে চলতে চলতে বছর পাঁচেক পেরিয়ে গেছে।
সায়লার মুখে এখন হাসি থাকে, সামাজিক অনুষ্ঠানে সব ঠিকঠাক করে।
তবে রাতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে একটাই কথা ভাবে—
“মনে শান্তি না থাকলে, ধন-সম্পদের মুল্য কি থাকে?”
একদিন সে নিজেই হয়তো একটা সিদ্ধান্ত নেবে।
হয়তো সে কোথাও গিয়ে একাকী বাঁচবে, অথবা এভাবেই চলতে থাকবে।
কিন্তু একটা কথা সে নিজের ভেতর চিরকাল বয়ে বেড়াবে—
অনিচ্ছার ভিতরে গড়া সংসার যতই চকচকে হোক, ভেতরটা ফাঁপা হয়।
আর সেই ফাঁপা জায়গা কোনো টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়ি বা সামাজিক সম্মান দিয়ে পূরণ হয় না।
এটাই সায়লার গল্প। এমন হাজারো সায়লা আছে চারপাশে, যারা মুখে হাসি পরে, কিন্তু ভিতরে একা।
তাদের জীবন চলে, কিন্তু বাঁচে না।
Disclaimer / Story Policy
This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.
We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.
If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.
"এই গল্পটি ‘জীবন যুদ্ধ গল্প.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com