বউ শাশুড়ি দুইটি ভিন্ন গল্প | শাশুড়ি ভালো খারাপ এর

 বউ শাশুড়ির গল্প

বউ শাশুড়ির গল্প

-পিরিয়ড না হওয়ার কারনে 'ডাক্তারের কাছে গেলে  ডাক্তার জানিয়ে দেয়। 

-উর্মি কখনো মা হতে পারবেনা।   

-এই কথা শুনা মাত্রই উর্মির মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পরলো। কি হবে এখন তার'

'এই সব চিন্তা করতে করতে বাসায় আসা মাত্রই শাশুড়ি বলে উঠে'

-কি ব‍্যপার উর্মি  ডাক্তার তোমাকে কি বললো শুনি একটু।

'শাশুড়ির এই প্রশ্নের উত্তর কি দিবে উর্মি ভেবে পাচ্ছেনা।

-কি হলো উর্মি বলো। উত্তর দাও?

-আসলে মা আমি কখনো মা হইতে পারবোনা। আমাকে মাপ করে দিও।

'কথাটি শুনেই শাশুড়ির মুখটা কেমন জানি মলিন হয়ে গেলো। 

' এর পরে বেশ কয়েমাস যাওয়ার পরে উর্মি তার স্বামী এবং শাশুড়ি কে একত্রিত করে বলে '

-মা আপনার সন্তান কে বলুন ও যেনো আমাকে ডিভোর্স দিয়ে নতুন আবার বিয়ে করে?

-হঠাৎ এই কথা কেনো উর্মি।

-আমি তো কখনো মা হতে পারবোনা। আপনাকে নাতি বা নাতনির মুখ দেখাইতে পারবোনা?

-ওহ। 

-আপনার ছেলেকে অনেক করে বললাম কিন্তু সে কোন ভাবেই রাজি হচ্ছেনা।

'উর্মির এমন কান্নাভেজা কথা শুনে শাশুড়ি বলে'

-যদি আর একবার ডিভোর্সের কথা মুখে আনো তাহলে কষে একটি থাপ্পড় দিবো তোমাকে। পারবে আমাদের ছেরে থাকতে, পারবে অভয়কে ছেরে থাকতে।

-নাহ পারবোনা।

-তাহলে এমন কথা বলো কেনো পাগলি। তোমাকে আমি মেয়ের মতো দেখি। তোমার বাচ্চা হবেনা এই জন্যে সংসার নষ্ট করবো এইটা কোন কথা। 

-তবুও মা। 

-চিন্তা করিওনা আমরা তোমার চিকিৎসা করবো। এর পরেও ভালো না হলে একটি সন্তান দত্তক নিবো। 

'শাশুড়ির মুখে এমন কথা শুনে উর্মি হাউ মাউ করে কান্না করতে থাকে আর বলে ' এত ভালো কেনো আপনারা'

-কান্না করিওনা মা আমার? সব ঠিক হবে"

"আসলেই শাশুড়ি হলে এমন হওয়াই দরকার। যে সব কিছু বুঝবে পাশে থাকবে"

নুগল্প: শাশুড়ির_গুন


– “ বৌমা, ইদানিং তোমার সাহস বেড়ে গিয়েছে দেখতেছি।আগেত এমন ছিলেনা?দিনদিন কেমন বেশরম আর বেহায়া হয়ে যাচ্ছ? ”


আমি জানি আমার শাশুড়ী কেন,কিসের জন্য এমন রাগ করে কথা বলছেন।তবুও না বোঝার ভান করে, নরম স্বরে জানতে চাইলাম,

– “ আমি কি করেছি মা? ”

– “ এমন ভাব দেখাচ্ছ,মনে হয় ভাজা মাছটিও উল্টে খেতে পারনা।একটা চোরের মেয়েকে ঘরের বউ করেছি। ”


আমি সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের মত গর্জন করে উঠি।

– “ খবরদার মা।আমাকে যা ইচ্ছে গালমন্দ করেন।কিন্তু বাবা মা তুলে কথা বললে আমি ছাড়বোনা। ”


তিনিও আর ও উত্তেজিত হয়ে,

– “ কিই...?চোরের মেয়ে চোরের কথা শুনো। ”


আমার বর আবির রুম থেকে বেরিয়ে এসে,

– “ মা,শায়লা।তোমরা কি শুরু করেছ?অফিস থেকে আসতে না আসতেই এসব দেখতে ভালোলাগে? ”


আমার শাশুড়ী ভেজা গলায় বলতে লাগলেন,

– “ বাবা এতদিন বলিনি।তুই বউকে ভুল বুঝবি তাই।বিষয়টা সামান্য।কিন্তু সেই সামান্য বিষয়টা যখন হরহামেশাই ঘটে, তখন তা আর সামান্য থাকেনা।বিশাল ঘটনা হয়ে যায়! ”


মায়ের কথা শুনে আবির চোখ কটমট করে আমার দিকে তাকালো।পারে তো উষ্ঠা মারে।আমিও আরও প্রবলভাবে তারদিকে আগুনচোখে তাকাই।বুঝিয়ে দিই,ভুলবুঝলে ওই চোখ গেলে দিব, আমার নকশিকাঁথা সেলাইয়ের সোনালী সুঁচ দিয়ে।


– “ বাবা শুন, কয়মাস ধরেই,বউ রান্না করা কিছু জিনিস চুরি করে খেয়ে ফেলে। ”


আবির ভ্রু কুঁচকে বললো,

– “ মা চুরি বলছ কেন?শুনতে বাজে লাগে।ঘরের বউ ঘরের জিনিস খেয়েছে, এটা চুরি হতে যাবে কেন?বুঝলাম না। ”


আমি সাপোর্ট পেয়ে গোপনে উল্লসিত হয়ে উঠি। মনে মনে বলি,‘এ এত বুঝনেওয়ালা কবে থেকে হলো?’


শাশুড়ী বলতে লাগলেন, 

– “ আজকেও তো ইলিশ মাছের মাথা খেয়ে ফেলছে।রেখেছি তোর জন্য।এভাবে ভাজা চিংড়ি, মুরগীর কলিজা,বুকের পিস,বড় মাছের পেটি,জ্বাল দেওয়া দুধ,সেদ্ধ করা ডিম সব খেয়ে ফেলে।গাছের সব ফল যখন তখন পেড়ে ইচ্ছেমত খেতে থাকে। ”


– “ খেলে সমস্যা কি মা? ”

– “ আরে বাবা,ধর রাখি একজনের জন্য, খেয়ে ফেলে সে।সেগুলো ত তার ভাগের না। ”


– “ ওহ তাইতো।এটা চুরি নয়,বাট কেমন যেন গোলমেলে লাগছে বিষয়টা।শায়লা... ”


আমি তার দিকে চাইলাম। 

– “ মা যা বলছে সত্যি? ”

– “ হুম সত্যি। ”

– “ আজব।তুমি অন্যের ভাগের খাবার খাও কেন? ”


চুপ না থেকে দৃঢ় গলায় জবাব দেই,

– “ আমি কখনোই অন্যের ভাগেরটা খাইনি।আমি আমার ভাগের খাবার নিয়ে খাই। ”


– “ তাহলে মা মিথ্যে বলছে? ”

– “ মা মিথ্যে বা সত্যি কিছুই বলেনি। ”

– “ কি আশ্চর্য শায়লা।তুমি কি মেন্টাল হয়ে গেলে নাকি? ”


– “ আমিও এতদিন চুপ মেরে ছিলাম,তুমি মাকে ভুল বুঝবে বলে।কিন্তু আর নয়। 


❝ মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছি।সুতরাং কমবেশী টানাপোড়েন লেগেই থাকতো।প্রিয় খাবারগুলো ভাগে অল্প পেতাম বলে খুব মন খারাপ করতাম।মাঝে মাঝে চোখ দিয়ে পানিও বের হতো।তখন মা বলতেন,মা শায়লা তুই পরীর মত সুন্দর।দেখবি মা তোকে বড় ঘরে বিয়ে দিব।তখন যা মন চায় খেতে পারবি।মায়ের মুখের কথায় ফুলচন্দন ফুটলো।তোমাদের ঘরের বড় বউ হয়ে এলাম।কখনো মায়ের উপর কর্তৃত্ব করার প্রয়োজন মনে করিনি।সবকিছু মেনে নিলাম।মানিয়ে নিলাম।


তুমি রোজ সকালে অফিসে চলে যাও।আস রাতে।তাই কিছুই দেখনা, জানোনা।সকাল থেকে রাত অবধি ঘরের যাবতীয় কাজ আমিই করি।এত পরিশ্রমের পর খেতে গেলে পছন্দের খাবার প্লেটে পাইনা।যখনি মার কাছে চাই।মা না দিয়ে বলে,তুমি মেয়ে মানুষ। ঘরেই থাক।যেমন তেমন ভাবে খেলেও চলবে।আবির ছেলে মানুষ। কত খাটুনি করে ঘরে ফেরে।এটা তার জন্য থাকুক। 


তাই একসময় ঠিক করলাম,নিজেই নিয়ে খেয়ে ফেলবো। ব্যাস নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।তুমি মাটির মানুষ, আর আমি কি প্রাণহীন পাথরের মূর্তি?আমার সাধ নেই?অনভূতি নেই?আমার ইচ্ছে করেনা এটা ওটা খেতে?ইলিশ মাছের মাথা কোনদিন ও খেতে পারিনি।অথচ প্রায়ই ইলিশ রান্না হয়। তুমি বাইরে শ্রম দাও, আমি ঘরে শ্রম দেইনা? তোমার যেমন সুস্থ থাকা দরকার, তেমনি আমার ও সুস্থ থাকার দরকার নয়?তোমার শ্রমের মূল্য আছে,আমার শ্রমের মূল্য নেই?তোমার পছন্দ আছে, আমার নেই?


নাকি ঘরের বউদের তোমরা মেশিন মনে করো?

মা সবসময় বলেন, ‘তুমি বড় বউ।রয়ে সয়ে থাকতে হয়।আমিও বড় বউ ছিলাম।কত যে উপোস থেকেছি।’এটা কোন লজিক হলো বলো?

উনার সময় অভাব ছিল।উনি মেনে নিয়েছেন। আমার সময়ে ত অভাব নেই।এখন একুশ শতাব্দী।মানুষের চিন্তাভাবনার ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে।তাহলে এই ক্ষেত্রে কেন এত অবিচার?পুরুষ ভালো খাবার খাবে,আর নারী অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের খাবার খাবে?


সমতা চাই সমতা।ঘরের কাজের ও মূল্য দিতে হবে।সুতরাং সব সমানেসমান হতে হবে। ❞


আবিরের নিরবতা দেখে তার মা,ফণা তোলা সাপের মত রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে তার রুমের ভিতরে চলে গেল।


যুগে যুগে নারীরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে।জীবনচলার উঁচুনিচু পথকে নিজেরই মসৃণ করে নিতে হবে।ছিনিয়ে নিতে হবে নিজের প্রাপ্যটুকু।


-সমাপ্ত

-ছোটগল্প

-নারীও_মানুষ

_রেহানা_পুতুল