গল্প: ছোটনের টাইম মেশিন কাণ্ড!
মজার গল্প
ছোটন ছিল পাড়ার সবচেয়ে কৌতূহলী আর দুষ্টু ছেলে। প্রশ্ন করতেই তার ভালো লাগে, আর সবকিছুর উত্তর সে নিজেই খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। একদিন ছোটন টিভিতে “টাইম মেশিন” দেখে পুরো পাগল হয়ে গেল।
সে ভাবল,
“আমি যদি টাইম মেশিন বানাই, তাহলে স্কুলের পরীক্ষার আগেই ভবিষ্যতে গিয়ে প্রশ্ন দেখে আসতে পারব! কাহিনী শেষ!”
পরদিন সকাল থেকেই শুরু হল তার ‘বড় প্রজেক্ট’।
পুরনো প্রেসার কুকার, দুইটা ফ্যানের পাখা, বাবার সেলাই মেশিনের মোটর, একজোড়া সানগ্লাস, দাদুর ঘড়ির পুরনো কাঁটা – সব একত্র করে ছোটন বলল,
“এই হলো – টাইম মেশিন ১.০!”
পেছনে বড় করে লিখল—"Future Jabo – Past Esho"
তারপর সে ভিতরে ঢুকে বেল বাজাল, যা আসলে ছিল মায়ের রান্নাঘরের ঘন্টি। বেল বাজাতেই পাশে রাখা বাতি জ্বলে উঠল, কারণ সে আগে থেকেই সুইচে লুকিয়ে রেখেছিল! ছোটন চিৎকার করে বলল,
“ওহ্ না! আমি চলে যাচ্ছি ভবিষ্যতে!”
মা পাশের ঘর থেকে বলল,
“তুই গেছিস তো তোর বাবার কাছে! সেলাই মেশিনের মোটর খুলে রাখছিস কেন?”
ছোটন ভেবেছিল সে ভবিষ্যতে গিয়ে দেখবে রোবট শিক্ষক, উড়ন্ত গাড়ি আর ভেসে চলা স্কুল। কিন্তু বাস্তবে, সে তার মায়ের বকুনি শুনে দরজা বন্ধ করে ভেতরে লুকিয়ে পড়ল। তাও তার নাটক থামে না।
দুপুরে পাড়ার রতন কাকা এলো বাসায়। ছোটন তার সামনে মুখ গম্ভীর করে বলল,
“কাকা, আমি এখন ভবিষ্যতের লোক। আমাকে 'ডঃ ছোটন' বলে ডাকো।”
রতন কাকা চোখ কুঁচকে বলল,
“তাই নাকি! ভবিষ্যতের লোকে কি ছেঁড়া মোজা পরে?”
ছোটন দ্রুত মোজা লুকিয়ে ফেলল, তারপর বলল,
“ভবিষ্যতের ফ্যাশন কাকা, তুমি বুঝবে না।”
সে দিনভর পাড়ায় ঘুরে বেড়াল টাইম মেশিন নিয়ে। পেছনে বড় হর্ন লাগিয়ে বাজাতে বাজাতে বলত,
“সাবধান! সময়ের গাড়ি আসছে!”
সবাই মজা পেল, কেউ কেউ হাসতে হাসতে বলল,
“ছোটনের মাথায় আবার ঝড় উঠছে!”
বিকেলে তার বন্ধু রাজু বলল,
“তুই সত্যি ভবিষ্যতে গেছিস? বল তাহলে আগামীকাল কী হবে?”
ছোটন কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“আগামীকাল তুমি স্কুলে হোমওয়ার্ক করবে না। আর স্যার তোমাকে দাঁড় করিয়ে রাখবে। আর… তুই লুকিয়ে টিফিন খাবি।”
রাজু হাঁ করে তাকিয়ে বলল,
“তুই কিভাবে জানলি?”
ছোটন গম্ভীর গলায় বলল,
“Because… I am from the future!”
রাত পর্যন্ত সে নাটক চালিয়ে গেল। এমনকি বিছানায় শুয়েও বলল,
“আজ আমি টাইম মেশিনে ঘুমাবো। যেন স্বপ্নেও ভবিষ্যতে যেতে পারি।”
পরদিন সকালে দেখা গেল, ছোটন ঘুম থেকে উঠে চিৎকার করছে,
“মা! আমার টাইম মেশিন গায়েব!”
মা পাশ থেকে বলল,
“ওটা আমি উঠানে পাঠিয়ে দিয়েছি। পোকা ধরেছিল!”
ছোটন হঠাৎ হাসতে হাসতে বলল,
“মা, এবার আমি টাইম মেশিন ২.০ বানাবো। এবার সেটা ফ্রিজ দিয়ে বানাব!”
মা বলল,
“দেখিস, আমি যেন ভবিষ্যতে গিয়ে তোকে আর মারতে না হয়!”
---
গল্পের শিক্ষা:
ভাবতে দোষ নেই, চেষ্টা করতেও নেই, কিন্তু সব কাজে বুদ্ধি আর বাস্তবতা দরকার। আর কখনো সেলাই মেশিন খুলে টাইম মেশিন বানাতে যেও না!