স্বামীকে প্রবাসে পাঠিয়ে: স্ত্রী কি সুখী হয় বা সুখে থাকে; বাস্তব সমাজ

 গল্প: "অপেক্ষার অন্ধকারে আলো"

অপেক্ষার অন্ধকারে আলো

নাজমা আক্তার, ২৬ বছরের একজন গৃহবধূ। তার স্বামী ফারুক মাত্র এক বছর হলো মালয়েশিয়া গেছেন গার্মেন্টসে চাকরি করতে, সংসার গুছিয়ে তুলবেন বলে। যাওয়ার আগে প্রতিদিন হাসি ছিল, আদর ছিল, কিছুটা অভিমানও ছিল – কিন্তু সবই ছিল কাছাকাছি থাকার মাঝে।

প্রথম তিন মাস নাজমার চোখে মুখে ছিল আশা। ভিডিও কলে কথা, ছবি পাঠানো, নতুন বাসার স্বপ্ন – যেন কোনো সিনেমার দৃশ্য। কিন্তু তারপর, সময় একটু একটু করে বদলাতে শুরু করল।

সমাজ যা বলে, তার চেয়ে ভেতরে যা ঘটে তা অনেক গভীর...

প্রতিদিন সকালবেলা নাজমাকে শুনতে হয় প্রতিবেশীদের কথাবার্তা —

“স্বামী নেই, তবুও সাজগোজ কিসের?”

“কে জানে, রাতে কার সাথে ফোনে কথা বলে?”

“বিদেশের টাকায় সুখী, কিন্তু মন কি সত্যিই ওখানেই?”

সে কিছু বলে না। ভেতরে কষ্ট চেপে রাখে।

রাতে যখন ফারুক সময় না পায়, ক্লান্তির অজুহাতে ফোন না ধরে — তখন নাজমা কাঁদে, বিছানার পাশে ফারুকের দেওয়া একটা চিঠি নিয়ে।

পরিবারের দিক থেকেও শান্তি নেই...

শ্বশুরবাড়ি বলে, “তোমার কাজ রান্না আর ফারুককে টাকা পাঠাতে বলা।”

নিজের বাড়ি থেকে বলে, “তুমি বুঝে শুনে নিজের সংসার সামলাও।”

কারো চোখে যেন সে ভালোবাসার মানুষ না, শুধু “টাকার রিসিভার”।

কিন্তু সত্যি কি সে সুখে আছে?

ফারুক মাসে টাকা পাঠায় ঠিকই, কিন্তু তাতে কেবল ভাত-তরকারি কেনা যায়, ভালোবাসা কেনা যায় না।

একবার ভিডিও কলে নাজমা বলেছিল,

“তুমি তো পরিশ্রম করো, আমি কাকে বলি কষ্টের কথা?”

ফারুক বলেছিল,

“সবাই তো সহ্য করে। আমাকেও করতে হচ্ছে।”

কথা সত্যি, কিন্তু তাতে কষ্ট হালকা হয় না।

একদিন...

একদিন এক সন্ধ্যায় সে ছাদে গিয়ে চুপচাপ বসে ছিল। পাশের বাসার ছেলেটা হঠাৎ বলেছিল,

“আপু, ভাববেন না খারাপ কিছু। আপনি অনেক একা। আপনার যদি কোনো কথা বলার মানুষ না থাকে, আমি পাশে থাকতে পারি।”

সে আরেকটু চুপ করে রইল। উত্তর দিল না, শুধু মনে মনে ফারুককে বলল —

“তুমি কই আছো? আমি তো এখানেই আছি, তোমার হয়ে লড়ছি।”

---

🔚 শেষের কথা

হ্যাঁ, স্ত্রী প্রবাসী স্বামীকে পাঠিয়ে সুখে থাকে — কিন্তু সেটা ভাত, কাপড় বা ফ্রিজ কিনে নয়।

তার সুখ যদি হয়, তাহলে সেটা হয় অপেক্ষার শক্তিতে, ভালোবাসার স্থায়ীত্বে, আর সমাজের বিষাক্ত কথাগুলোর বিরুদ্ধে চুপচাপ লড়ে যাওয়ায়।

নাজমার মতো মেয়েরা হয়তো চোখে জল লুকিয়ে হাঁসে, কিন্তু ভেতরে তারা যুদ্ধ করে – প্রতিদিন, নিঃশব্দে।