গল্প: চুপ থাকা মানুষগুলো | বিয়ের পর সব শেষ হয়ে গেলো

 গল্প: "চুপ থাকা মানুষগুলো"

চুপ থাকা মানুষগুলো

রাত তখন ১২টা পেরিয়েছে।

ঢাকার উত্তরা এলাকার একটা ছোট্ট ফ্ল্যাটের বারান্দায় বসে আছে রাশেদ। সামনে ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা, চোখে অনিদ্রার ছাপ।

রাশেদ একজন প্রাইভেট কোম্পানির চাকরিজীবী, বয়স ৩৪।

বিয়ে করেছে ৫ বছর হলো। স্ত্রী মেহজাবিন, একজন স্কুল শিক্ষিকা।

বাইরে থেকে তাদের সংসার শান্ত, গোছানো, ভদ্র — কিন্তু ভিতরে?

শুধু “চুপ”।

---

৫ বছর আগের গল্প…

বিয়ের শুরুতে দুজনের মধ্যে যে ভালোবাসা ছিল, তা অন্যরকম।

মেহজাবিন হাসত, রান্না করত, গান গাইত, রাশেদ অফিস শেষে ছুটে আসত বাসায়।

রাশেদ বলত,

“তুমি না থাকলে আমি এক কাপ চাও বানাতে পারি না।”

মেহজাবিন হেসে বলত,

“তুমি থাকলে আমার পৃথিবীটাই লাগে ছোট।”

তাদের ঘরভর্তি ছিল কল্পনা —

নিজের ফ্ল্যাট, একটা গাড়ি, একটা সন্তান, ঈদে বেড়াতে যাওয়া, মেহজাবিনের স্কুলের প্রমোশন, রাশেদের অফিসের ইনক্রিমেন্ট…

কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে অনেক সময় দেয়াল থাকে।

---

🕰️ সময় গড়াতে থাকে…

৩ বছর পেরিয়ে যায়।

প্রথম সন্তান আসে না।

শ্বশুরবাড়ির চাপ, আত্মীয়দের কটুকথা,

আর রাতের পর রাত — মেহজাবিনের চোখের কোণে জমে ওঠে পানি।

রাশেদ সান্ত্বনা দেয়। কিন্তু তার অফিস, টেনশন, ফাইনান্স — সবকিছুতে একসময় সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

মেহজাবিন বদলে যেতে থাকে…

সে আর হাসে না, শুধু অভিযোগ করে।

রাশেদ বদলে যেতে থাকে…

সে আর আগের মতো মন দিয়ে শোনে না।

এখন তাদের মধ্যে কথার চেয়ে বেশি হয় “চুপ থাকা”।

---

💔 একদিন…

রাশেদ অফিস থেকে ফিরে দেখে — টেবিলের ওপর একটা চিঠি:

> “আমি জানি, তুমি আমাকে ভালোবাসো।

কিন্তু তোমার ভালোবাসা বোঝার মতো সময় এখন আমার নেই।

আমি কিছুদিন বাবার বাসায় থাকব।

নিজেকে খুঁজে নেওয়ার জন্য।”

রাশেদ বসে থাকে অনেকক্ষণ চুপচাপ।

তারপর উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

সে জানে, এই শব্দ — “নিজেকে খোঁজা” — মানে অনেক সময় চিরতরে হারিয়ে ফেলা।

---

গল্পের শেষ নয়…

মেহজাবিন ফিরে এসেছিল।

কিন্তু ফিরে এসেছিল অন্য মানুষ হয়ে।

তারা এখনো এক ছাদের নিচে থাকে।

রাশেদ এখনো অফিস যায়, মেহজাবিন এখনো স্কুলে পড়ে।

বাইরের চোখে সব ঠিকঠাক।

কিন্তু তারা জানে — তারা একসাথে থেকেও একা।

---

শেষের দিকে

সব সম্পর্ক ভাঙে না, অনেক সময় সম্পর্ক "বেঁচে" থাকে — কিন্তু ভেতরে মরে যায়।

চুপ থাকা মানেই সব ঠিক আছে না…

অনেক সময় চুপ থাকা মানুষগুলোই সবচেয়ে বেশি ভাঙা।