স্বামীকে অবহেলা, স্বামীর বিশ্বাস বাঙা, স্ত্রীর শিক্ষা ও ভালোবাসা হারিয়ে যাওয়া

গল্প: "যখন বোঝে, তখন অনেক দেরি"

স্বামীকে অবহেলা

শাহিন একজন সাদাসিধে মানুষ। গ্রামের ছেলে, ঢাকায় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। সকালে বের হয়, রাতে ফেরে। সংসারের জন্য জীবনটা যেন একটা ছকে বাঁধা ক্যালেন্ডার। স্ত্রী রুনা আর একমাত্র মেয়ে সিমি— এদের নিয়েই তার ছোট্ট পরিবার।

রুনা শহুরে, একটু আধুনিক চিন্তার মেয়ে। বিয়ের পর প্রথম কয়েক বছর সবকিছু ভালোই চলছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে তার মনে হতে লাগলো, শাহিন বেশি সোজা-সরল।

"এই মানুষটা কিছুই বুঝে না, রোমান্টিক না, শুধু অফিস আর টাকা-পয়সার চিন্তা করে!"

– এই অভিযোগটা প্রায়ই রুনার মনে তৈরি হতো।

শাহিন ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘরে ফিরলেও, রুনার মুখে কোনো হাসি থাকত না। উল্টো ঝাড়ি, অভিযোগ আর মুখ ভার করে থাকা।

"তুমি তো আর কিছু বুঝো না, মানুষ কিভাবে সংসার করে! আমি তো বন্দি এখানে!"

শাহিন সব শুনে চুপ করে থাকত।

তার একটাই চিন্তা— "সংসারটা ভালোভাবে টিকে থাকুক, তর্কে লাভ নেই।"

---

⏳ সময় গেল...

রুনার অভিযোগ বাড়তেই থাকল, আর শাহিন চুপ থাকতেই থাকল।

একদিন এক আত্মীয়র বিয়েতে গিয়ে রুনা পরিচিত হলো রিজভী নামে এক মানুষের সাথে। রিজভী ছিল বেশ স্টাইলিশ, মুখে মিষ্টি কথা, খুব মিশুক।

সে রুনাকে একটু বিশেষভাবে কেয়ার করছিল, প্রশংসা করছিল, বলছিল,

"আপনি তো অনেক সুন্দর, আপনার হাসি দেখেই বোঝা যায় আপনি ভালোবাসা পান না।"

এইসব কথায় রুনার মনের অভিমানগুলো যেন জায়গা পেতে লাগলো।

তার মনে হতে লাগলো, "শাহিন তো কখনো এভাবে বলে না! রিজভী তো অন্তত আমাকে মানুষ ভাবে!"

শুরু হলো নিয়মিত কথা, ম্যাসেজ, দেখা-সাক্ষাৎ।

শাহিন কিছুটা আঁচ করতে পারলেও, কিছু বলত না।

সে জানতো, "অভিমান চাপিয়ে দিলে, সম্পর্ক ভেঙে যায়। ধৈর্য ধরতে হয়।"

---

💔 একদিন…

রুনা সরাসরি শাহিনকে বলে দিলো,

"তুমি আমাকে বোঝো না, আমি সুখী নই। আমি আলাদা থাকতে চাই কিছুদিন।"

শাহিন আর কিছু বলল না, মাথা নিচু করে বলল,

"যেভাবে তোমার ভালো লাগে, থাকো। আমি বাধা হবো না। শুধু আমাদের মেয়েটাকে ভুলে যেও না।"

রুনা মেয়েকে নিয়েই আলাদা থাকলো কিছুদিন।

রিজভী তাকে আশ্বাস দিলো— "আমি সব সামলাবো। তুমি চিন্তা কোরো না।"

কিন্তু কয়েক মাস না যেতেই রুনা বুঝলো, রিজভীর ভাষা যত মিষ্টি, মানুষটা ততটাই ফাঁপা।

সে কেয়ার করে, কিন্তু দয়া করে।

সে সময় দেয়, কিন্তু সম্মান দেয় না।

সে ভালোবাসা চায়, কিন্তু সম্পর্ক চায় না।

রুনা ধীরে ধীরে বুঝতে পারলো,

"আমি যে মানুষটাকে অবহেলা করেছিলাম, সে-ই ছিল আমার সবচেয়ে আপন। আমি শুধু চেয়েছি কিছু বাহ্যিক ভালোবাসা, অথচ শাহিন তো নিজের জীবনটাই দিয়েছিল।"

---

🕊️ ফিরে আসা…

রুনা একদিন সাহস করে শাহিনের বাসায় ফিরে গেল। মেয়েটা দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরলো।

শাহিন চুপচাপ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল।

রুনা বলল,

"আমি জানি, আমি তোমার ভালোবাসার যোগ্য ছিলাম না। কিন্তু আমি এখন জানি, তুমি ছাড়া আমি কিছুই না।"

শাহিন তাকিয়ে বলল,

"আমি কখনো তোমাকে ঠকাতে চাইনি। শুধু ভালোবেসেছি। আজো বাসি। কিন্তু আমি ভেঙে গেছি রুনা। আমার বিশ্বাসটা ফিরে পেতে সময় লাগবে।"

রুনার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছিল।

তার মনে হচ্ছিল,

"ঘরে সতীন না থাকলে আমরা বিশ্বাস করি, মানুষটা যাবে না। তাই যত্ন নিতে ভুলে যাই। অথচ অন্য কেউ তাকে কিছু ভালোবাসা দেখালে, তখনই বোঝা যায়— আমরা কী হারাচ্ছি।"

---

🔚 গল্পের শিক্ষা

ভালো মানুষ সবসময় চিৎকার করে কষ্ট দেখায় না।

তারা শুধু চুপ হয়ে যায়, হারিয়ে যায়— আর যখন বোঝা যায়, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।