ধোঁকার রাত থেকে নতুন জীবনের আলো
স্টোরি: আমার ভুল
সে আমার স্ত্রী ছিল।
আমি তাকে বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম – এ জীবন হয়তো তার হাত ধরেই কাটবে।
কিন্তু আমার সব স্বপ্ন ভেঙে গেল সেই বাসর রাতেই।
আমি যখন একটু এগিয়ে গেলাম, তখনই সে হাত তুলে বলল,
“আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করো না।”
আমি হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“কেন? তুমি তো আমার স্ত্রী।”
সে নির্দ্বিধায় উত্তর দিলো,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি না। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। আর তোমাকে বিয়ে করেছি শুধু কাবিনের টাকার জন্য। তোমার ১০ লাখ টাকা আমার পরিবারের দরকার ছিল।”
আমার বুকের ভেতর তখন কেবল শূন্যতা। আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম যে প্রথম রাতেই ভালোবাসার গল্প শুরু হবে, অথচ সেদিন আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর অধ্যায় শুরু হয়ে গেল।
আমি তাকে অনেক বুঝালাম, কাকুতিমিনতি করলাম, বললাম,
“যেও না, আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি। আমি তোমাকে সুখে রাখবো।”
কিন্তু সে আমার চোখের পানি দেখে হাসলো, আর বলল,
“আমি তাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।”
পরের দিনই সে আমাকে ছেড়ে চলে গেল।
আমি তাকে ছুঁতেও পারিনি।
ভাঙা স্বপ্নের প্রতিজ্ঞা
আমি প্রতিজ্ঞা করলাম – আর কখনো বিয়ে করবো না।
একটা জীবন, একটা বিয়ে – এটাই ছিল আমার স্বপ্ন।
কিন্তু সেই স্বপ্নের কফিন গড়া হয়ে গিয়েছিল।
সমাজ, পরিবার – সবাই আমাকে জোর করলো।
একসময় আমি ভেঙে পড়লাম।
অবশেষে দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হলো।
কিন্তু এইবার আমি শিখে গিয়েছিলাম।
আমি আমার দ্বিতীয় স্ত্রীকে সব খুলে বললাম।
প্রথম স্ত্রী কীভাবে আমাকে ধোঁকা দিয়েছিল, সেই রাতের প্রতিটি সত্য লুকালাম না।
সে সব শুনে আমার হাত ধরলো আর বললো—
“আমি তোমাকে ধোঁকা দেবো না। আমি তোমার পাশে থাকবো সবসময়।”
আজ আমি তার সাথে সুখে আছি।
সে আমার খেদমত করে, আমাকে ভালোবাসে, আমার ভাঙা হৃদয়ে নতুন আলো জ্বালিয়েছে।
প্রথম স্ত্রীর ফিরে আসা
একদিন হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়লো।
দরজা খুলতেই আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
সে-ই দাঁড়িয়ে আছে – আমার প্রথম স্ত্রী।
মুখ শুকনো, চোখে পানি।
সে কাঁদতে কাঁদতে বললো—
“আমি ভুল করেছি। যে ছেলেকে আমি ভালোবাসতাম, সে আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। আমাকে ব্যবহার করে ছেড়ে দিয়েছে। এখন আমি একা, ভাঙা, নিঃস্ব। আমাকে মাফ করে দাও। আমি আবার তোমার কাছে ফিরতে চাই।”
আমি শান্তভাবে তাকিয়ে রইলাম।
বুকে একটা চাপা ব্যথা জেগে উঠলো, কিন্তু এবার আমি ভাঙিনি।
আমি ধীরে ধীরে বললাম—
“তুমি সেই বাসর রাতে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলে। তুমি বলেছিলে আমার প্রয়োজন নেই, শুধু টাকার দরকার ছিল। আজ যখন তুমি নিঃস্ব, তখন আবার ফিরে এলে কেন? আমার সাথে তোমার ডিভোর্স হয়েছে। তুমি আমার কাছে স্ত্রী নও। তুমি শুধু একজন অপরিচিতা।”
সে কান্নায় ভেঙে পড়লো।
আমি আবার বললাম—
“আমার দ্বিতীয় স্ত্রী আমাকে যেমন খেদমত করে, যেমন ভালোবাসে – তেমন ভালোবাসা তুমি কখনো দিতে পারতে না। আমি তাকে সবকিছু খুলে বলার পর বিয়ে করেছি। তাকে ধোঁকা দিইনি। কিন্তু তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়েছিলে। ভালোবাসার নামে আমাকে প্রতারণা করেছিলে।”
শিক্ষা
সে মাথা নিচু করে চলে গেল।
আমি তার দিকে আর তাকালাম না।
আমি বুঝলাম –
ভুল মানুষকে জীবনসঙ্গী করলে, জীবনের সবচেয়ে পবিত্র সম্পর্কও ছাই হয়ে যায়।
আর ধোঁকাবাজ মানুষ যতই কান্না করুক, যতই ফিরে আসুক – বিশ্বাস একবার ভাঙলে আর জোড়া লাগে না।
আমি আজ সুখী আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে।
কারণ সে ধোঁকাবাজ নয়, সে সত্যিকারের সঙ্গী।
এই গল্পটা আমাদের শেখায় –
যে সম্পর্ক মিথ্যা, স্বার্থ আর প্রতারণার ওপর দাঁড়ায়, তা টিকে না।
আর যেটা সত্য, ভালোবাসা আর আস্থার ওপর দাঁড়ায় – সেটাই জীবনের প্রকৃত সুখ।
