চেহারার অহংকার
একটা সময় ছিলো, গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সবাই মায়া নামের মেয়েটির সৌন্দর্যের গল্প করতো।
তার চোখ যেন কালো হরিণের মত, ঠোঁট যেন গোধূলির সূর্য, চুল যেন কালো জলের ঢেউ।
ছেলেরা শুধু একবার মায়ার মুখ দেখার জন্য রাস্তা বদলাতো, চায়ের দোকানে বসতো, মসজিদের মোড়েও ভিড় করতো।
মায়া নিজেও জানতো, সে সুন্দর।
কিন্তু তার মধ্যে ছিলো এক অদ্ভুত অহংকার।
সে ভাবতো, “আমার সৌন্দর্য চিরদিন থাকবে, আমি চাইলে রাজা থেকে ফকির সবাইকে নাচাতে পারবো।”
ভালোবাসার নামে শিকার
মায়া কখনো সত্যিকারের প্রেম করেনি।
তার কাছে প্রেম ছিলো একটা খেলা—যেখানে ছেলেরা গুটি, আর সে খেলোয়াড়।
একেকজনকে কাছে টেনে, স্বপ্ন দেখিয়ে, আবার হঠাৎ দূরে ঠেলে দিতো।
যাদের মন ভেঙে যেতো, মায়া শুধু বলতো,
> “আমি তো কাউকে প্রতিশ্রুতি দিইনি, দোষ তোমার।”
একবার মায়া রাহাত নামের এক তরুণকে প্রেমে ফাঁসালো।
রাহাত তার জন্য নিজের চাকরি ছাড়লো, পরিবারকে অবহেলা করলো।
মায়া কয়েক মাস পরে বললো—
> “তুমি আমাকে মানায় না, আমি আরও বড় কারো সাথে সম্পর্ক করবো।”
রাহাত ভেঙে পড়লো। মায়া? হাসলো।
তার সৌন্দর্যের অহংকারে চোখ ঢেকে গিয়েছিল।
সাপের বিষ
মায়ার এক বন্ধু লীলা তাকে একদিন বললো,
> “তুমি যা করছো, এটা সাপের কামড়ের থেকেও খারাপ। সাপ একবার কামড়ায়, তুমি বারবার বিষ ঢালছো।”
মায়া শুধু হাসলো,
“সাপের ভয় মানুষ পায়, আমার সৌন্দর্যের ভয় তো তারা পায় না। উল্টে সবাই আমার পেছনে দৌড়ায়।”
সময়ের পাল্টা আঘাত
বছর গড়িয়ে গেলো।
মায়া বুঝতেই পারলো না কখন তার মুখে বয়সের ছাপ পড়লো, চুলে সাদা আসতে শুরু করলো, ত্বক আগের মতো টানটান নেই।
একসময় যে আয়নায় সে নিজের রূপ দেখে মুগ্ধ হতো, এখন সেই আয়না তাকে চুপচাপ কাঁদায়।
নতুন প্রজন্মের মেয়েরা এখন শহরের রাস্তায় রাজত্ব করছে।
ছেলেরা তাকাচ্ছে অন্য দিকে—আর মায়া?
বড়লোক ব্যবসায়ী হোক বা কলেজের প্রেমিক—কেউ তার দিকে ফিরছে না।
ফেরার পথ নেই
মায়া চেষ্টা করলো পুরনো প্রেমিকদের সাথে যোগাযোগ করতে।
কেউ আর ফোন ধরলো না।
একদিন রাহাতকে রাস্তার ধারে দেখলো—
রাহাত সুন্দর সংসার করছে, সন্তান কোলে, মুখে প্রশান্তি।
মায়াকে দেখে শুধু হালকা হাসলো, কিন্তু চোখে কোনো আগ্রহ নেই।
সেদিন মায়া প্রথম বুঝলো—
সৌন্দর্য নদীর মতো, একদিন শুকিয়ে যায়।
যখন নদী শুকিয়ে যায়, তখন তার তীরে কেউ বসে থাকে না।
শেষ দৃশ্য
বয়স পঞ্চাশে পা দিয়েছে মায়া।
ফেসবুকে মাঝে মাঝে পুরনো ছবিতে রঙচঙে ফিল্টার লাগিয়ে পোস্ট করে, লাইক আসে হাতে গোনা।
বাসার এক কোণে বসে আয়নায় নিজের মুখ দেখে ভাবে—
> “আমি যদি তখন একটু কম অহংকারী হতাম, হয়তো আজ একা থাকতাম না।”
সৌন্দর্য ছিলো তার সবচেয়ে বড় শক্তি, আর সেই সৌন্দর্যের অহংকারই হয়ে গেলো তার সবচেয়ে বড় অভিশাপ।
শিক্ষা:
সৌন্দর্য ক্ষণস্থায়ী।
যে নারী বা পুরুষ সৌন্দর্য নিয়ে অহংকার করে, ভালোবাসার নামে অন্যের হৃদয় ভাঙে, সময় একদিন সেই অহংকার ভেঙে চুরমার করে দেয়।
ভালোবাসা মানে মানুষকে মূল্য দেওয়া—শুধু নিজের রূপের পূজা করা নয়।