পরকীয়ার মায়াজালে হারিয়ে যাওয়া এক নারীর গল্প
শহরের এক প্রান্তে থাকতো শিউলী নামের এক নারী। দেখতে ছিলো সুন্দর, কথায় ছিলো মিষ্টি, আর সংসারও ছিলো সবার চোখে আদর্শ। স্বামী রাশেদ ছিলেন পরিশ্রমী মানুষ, সকাল থেকে রাত অবধি ছুটে বেড়াতেন সংসারের জন্য। তাদের এক ছেলে-মেয়ে ছিলো, যাদের হাসি-খুশিতেই ভরে উঠতো ঘর।
কিন্তু মানুষ যখন সবকিছু পেয়ে যায়, তখন অনেক সময় সেই প্রাপ্তির কদর হারিয়ে ফেলে। শিউলীর ক্ষেত্রেও তাই হলো। স্বামী কাজে ব্যস্ত, সন্তানের পড়াশোনা—এই মাঝেই একদিন তার জীবনে ঢুকলো পুরনো এক কলেজ বন্ধু, সুমন।
সুমন কথায় কথায় শিউলীর মন জিততে শুরু করলো। সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘ চ্যাট, ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা আলাপ—শিউলীর মনে হতে লাগলো, রাশেদের থেকে সুমন নাকি তাকে “বেশি বোঝে”। একসময় এই ভুল বোঝাবুঝিই তাকে পরকীয়ার অন্ধকার পথে টেনে নিলো।
প্রথমে শিউলী ভেবেছিল—এটা সামান্য বন্ধুত্ব। কিন্তু ধীরে ধীরে এই সম্পর্কের জন্য সে স্বামী-সন্তানকে অবহেলা করতে শুরু করলো। রান্না ফেলে দিত, সন্তানকে স্কুলে সময়মতো পাঠাতো না, স্বামী বাড়ি ফিরলে কথা না বলে ফোনে ব্যস্ত থাকতো। রাশেদ একদিন বুঝে গেলেন, কিছু একটা গড়বড় হচ্ছে।
সত্য জানার পর রাশেদ ভেঙে পড়লেন, কিন্তু অনেক চেষ্টা করলেন স্ত্রীকে ফেরাতে। সন্তানদের মুখ দেখিয়ে বোঝালেন—"এই পথে গেলে কিছুই বাকি থাকবে না।" কিন্তু শিউলীর চোখে তখন কেবল সুমনের রঙিন স্বপ্ন।
শেষমেশ রাশেদ ডিভোর্স দিলেন। সন্তানরা মায়ের সঙ্গে থাকতে চাইলো না, তারা বাবার কাছেই থেকে গেলো। সমাজে শিউলীর বদনাম ছড়িয়ে পড়লো। একসময় সুমনও পালিয়ে গেলো—সে কখনোই সংসার করার জন্য আসেনি, শুধু খেলেছে আবেগ নিয়ে।
শিউলী তখন একা। চারপাশে কেউ নেই, সন্তান নেই, স্বামী নেই, পরিবার নেই। প্রতিবেশীরা তাকে আঙুল তুলে হাসতো, কেউ ঘরে ডাকতো না। দিন গড়াতে গড়াতে তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গেলো। রাস্তার পাশে বসে থাকা, নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলা—এটাই হলো তার শেষ জীবন।
কখনো সে বলে, "আমার স্বামী আমাকে খুব ভালোবাসতো..." আবার কখনো বলে, "আমার বাচ্চারা কোথায় গেলো?" অথচ সে জানে, এই অবস্থার জন্য দায়ী সে নিজেই।
শিক্ষা
পরকীয়া কখনোই প্রেম নয়, এটা কেবল ধ্বংসের রাস্তা। এর নেশা অল্প সময়ের জন্য মিষ্টি মনে হয়, কিন্তু পরিণতি হয় ভয়াবহ। যে নারী-পুরুষ সংসার, সন্তান, ভালোবাসা ফেলে এই পথে যায়—শেষে তাদের হাতে থাকে শুধু একাকীত্ব, কান্না আর আফসোস।
ভালোবাসার মূল্য যেদিন বোঝা যায়, সেদিন অনেক দেরি হয়ে যায়। 💔