সুন্দর শৈশব আমার | বাস্তব শিক্ষনীয় গল্প

 বাস্তব জীবনের গল্প

বাস্তব জীবনের গল্প

মামার বাসায় বেড়াতে এসে যখন মামাতো ভাইকে প্রশ্ন করলাম,

--কিরে, তুই ক্রিকেট খেলতে পারিস?

ও উত্তর দিলো,

-"না ভাইয়া,আমি ক্রিকেট কখনো খেলি নি"

যখন বললাম,

--তাহলে ফুটবল খেলতে পারিস?

ও উত্তর দিলো

- না।

আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম,

-- তুই ক্রিকেট খেলতে পারিস না ফুটবলও খেলতে পারিস না। তাহলে পারিস টা কি?

আমার মামাতো ভাই তখন বললো,

-"আমি ফোনে ফ্রী-ফায়ার, পাবজি খেলতে পারি। আসলে আমি যখন ক্রিকেট খেলতে বাহিরে যেতে চাইতাম তখন আম্মু যেতে দিতো না। তাই আর কখনো খেলা হয় নি।


আমি অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম, ক্লাস ফাইভে পড়ে একটা ছেলে অথচ কখনো ক্রিকেট, ফুটবল খেলে নি। আমি বাসা থেকে বের হয়ে একটা ক্রিকেট ব্যাট আর বল এনে আমার মামাতো ভাই মুহিনকে ডেকে বললাম,

--আয় খেলতে যায়। তোকে আজ ক্রিকেট খেলা শিখাবো। 

 মুহিন দৌড়ে এসে ব্যাটটা হাতে নিলো। 


এমন সময় মামী আমায় বললো,

-"পিয়াস, মুহিনকে নিয়ে বাহিরে যেও না। কাল ওর জেলা স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা। ওর এখন পড়তে হবে।"

এই কথা বলে মামী যখন মুহিনের দিকে রাগী চোখে তাকালো মুহিন তখন হাত থেকে ব্যাটটা ফেলে গোমড়া মুখে নিজের রুমে চলে গেলো।


এই বয়সে একটা বাচ্চার শৈশব থাকা উচিত রঙিন, দুরন্তময় অথচ বর্তমান অভিভাবকদের মাত্রাতিরিক্ত শাসন, ভয় দেখানো আর পড়ার চাপে একটা বাচ্চার শৈশব হয়ে যায় ঘরবন্দী আর ফ্যাকাশে।    


কয়েকদিন পরের ঘটনা। আমি আর মুহিন ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ মামী বাসার ভিতর ঢুকেই মুহিনের কাছে এসে মুহিনকে থাপ্পড় মারলো। মুহিন মামীর রাগান্বিত চেহারা দেখে ভয়ে আমার পিছনে লুকালো।

আমি মামীকে বললাম,

-- কি হয়েছে মামী আপনি ওর গায়ে হাত তুলছেন কেন?

মামী চিৎকার করে বললো,

- “ওরে আমি আজ মেরেই ফেলবো। ওর কিসের কমতি রেখেছি যে ও জেলা স্কুলে চান্স পেলো না। অথচ ওর বন্ধু রকি ঠিকিই জেলা স্কুলে চান্স পেয়েছে। এই ছেলের পড়াশোনার জন্য আমি নিজে চাকরি ছেড়েছি। মাস্টার রেখেছি দুইটা। অথচ ও চান্স পেলো না। ওর বন্ধু ঠিকিই চান্স পেয়েছে।”

  

আমি মামীকে বললাম,

-- মামী সত্যি করে বলেন তো ও জেলা স্কুলে চান্স পায় নি দেখে বেশি কষ্ট পেয়েছেন নাকি ওর বন্ধু চান্স পেয়েছে বলে বেশি কষ্ট পেয়েছেন?


মামী কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো। ছেলে চান্স পায় নি বলে মামী রাতে কিছু না খেয়েই শুয়ে পড়েছে । এই বিষয়টা আমাকে খুব অবাক করেছিলো।তাই রাত ১১টার দিকে মামা মামীর রুমে গেলাম।আমায় দেখে মামা বললো,

-” কিরে, কিছু বলবি?”

আমি তখন বললাম,

--হ্যা আপনাদের দুইজনকে আমার কিছু বলার আছে।

মামী বিছানায় শোয়া অবস্থা থেকে বসে বললো,

-”কি কথা?”

আমি বিছানার পাশে থাকা চেয়ারটাতে বসে মামাকে বললাম,

-- আপনারা রেসের ঘোড়ার মত দৌড়াতে চান দৌড়াতে থাকুন। কিন্তু আপনাদের সাথে বাচ্চা ছেলেটাকে দৌড়িয়ে ওর শৈশবটা কেন নষ্ট করছেন?

মামা অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,

-”মানে! কি সব বলছিস?”

আমি মামার দিকে তাকিয়ে বললাম,

-- আপনারা বাচ্চা ছেলেটাকে তারবিহীন রোবট বানিয়ে ফেলছেন। ওর ভিতরে একটা প্রোগ্রাম সেট করে দিয়েছেন যার কাজ হলো শুধু পড়াশোনা করা আর ঘড়ির সময় ধরে চলাফেরা করা। অন্য দিকে চাইলেও সে মন দিতে পারবে না। আচ্ছা মামা আপনার শৈশবটা কি আপনার ছেলের মতো ছিলো? আমার মা বলেছে আপনি ছোটবেলায় দুনিয়ার বাদর ছিলেন। গ্রামে এমন কোন ফলের গাছ নেই যেই গাছ থেকে আপনি ফল চুরি করেন নি। সারাদিন ক্রিকেট ব্যাট হাতে নিয়ে বন্ধুদের সাথে মাঠে পড়ে থাকতেন।রং বেরংয়ের ঘুড়ি আকাশে উড়াতেন। কত সুন্দর সোনালী একটা শৈশব ছিলো আপনার। অথচ সেই আপনিই আপনার ছেলের সোনালী শৈশবটা কেড়ে নিচ্ছেন। আজ থেকে ২০ বছর পর আপনার ছেলেকে যখন প্রশ্ন করবে তার শৈশব কেমন ছিলো তখন আপনার ছেলে সরাসরি উত্তর দিবে,” আমার কোন শৈশব ছিলো না।আমার শৈশব আমার বাবা মা গলা টিপে মে*রে ফেলেছে” 


আমার কথা শুনে পাশে বসে থাকা মামী আমায় বলবো,

-” তুমি আমাদের বুঝতে ভুল করছো। আমরা যা করছি মুহিনের ভালোর জন্যই করছি। বর্তমান যুগ প্রতিযোগীতার যুগ। ওরে যদি এখন পড়ার চাপ না দেই তাহলে ও পিছিয়ে যাবে অন্যদের থেকে “


আমি মামীর দিকে তাকিয়ে বললাম,

-- আমার জানা মতে আপনি ক্লাস টেন পর্যন্ত কোন প্রাইভেট পড়েন নি কোচিং করেন নি। আপনাকে আপনার বাবা পড়িয়েছে। অথচ আপনি আপনার ছেলেকে ক্লাস ফাইভেই কোচিং প্রাইভেট দুটোই করাচ্ছেন। আপনি একজন শিক্ষিত মা হয়েও আপনার সন্তান কারো থেকে পিছিয়ে গেলে তাকে উৎসাহ না দিয়ে বরং ওকে ভয় দেখান। আপনি ভাবছেন ওকে ভয় দেখালে ও হয়তো পরবর্তীতে ভালো করবে কিন্তু এটা ভুল। আপনার দেখানো ভয়ের জন্যই ও আরো পিছিয়ে যাবে। 


আমার কথা গুলো শুনে মামা মামী দুইজনেই নীরব হয়ে রইলো। আমি রুম থেকে বের হবার সময় মামীকে বললাম,

-- বাচ্চাদের কখনো কারো সাথে তুলনা করবেন না। এতে বাচ্চারা মেন্টালি প্রেসারে পড়ে যায়। সন্তানকে সাথে নিয়ে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে রেসের ঘোড়ার মত না ছুটে বরং সন্তানকে একটা সোনালী শৈশব দেন একটু সাপোর্ট আর উৎসাহ দেন দেখবেন সন্তান আপনায় সফলতার স্বাদ এনে দিবে। এই কথা বলে আমি রুম থেকে বের হয়ে আসলাম---


১ বছর পর...


বিকাল দিকে মামী আমায় ফোন দিয়ে বললো,

-” পিয়াস,মুহিন ভালো একটা স্কুলে চান্স পেয়েছে।

আমি বললাম,

--মুহিনের টিউশন মাস্টারের সংখ্যা আরো বাড়িয়েছেন নাকি?

মামী হেসে বললো,

- “তোমার কথা মতো আমার ছেলেকে সুন্দর শৈশব দিয়েছি আর আমার ছেলে আমায় সফলতার স্বাদ দিচ্ছে। "


শৈশব

আবুল_বাশার_পিয়াস

এমন আরও বাস্তব জীবনের গল্প পড়ুন।