ভালোবাসার কষ্টের গল্প | নারী শুধু টাকার পাগল 2025

 না পাওয়া ভালোবাসার কষ্টের গল্প

না পাওয়া ভালোবাসার কষ্টের গল্প

---

গল্পের নাম: “অভিমানী হৃদয়ের প্রতিশোধ”

আরাফ একেবারে সহজ-সরল ছেলেটা। গ্রাম থেকে শহরে এসেছে পড়ালেখা করতে, চোখে অনেক স্বপ্ন—বড় হবে, মায়ের কষ্ট দূর করবে, বাবার ঋণ শোধ করবে, সমাজে সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে চলবে। তার জীবনে যেদিন এলো মাহিরা, সেদিন থেকেই জীবনটা অন্যরকম হয়ে গেল।

মাহিরা শহরের মেয়ে, স্মার্ট, সাজগোজে পাকা, কিন্তু মনের দিক থেকে একটু বেশি হিসাবি। একদিন ক্লাসে আরাফকে দেখে হেসে বলল,

— “তুমি অনেক ভদ্র, চুপচাপ থাকো কেন?”

সেই থেকেই কথা শুরু। এরপর ধীরে ধীরে গড়ে উঠল এক গভীর প্রেম। আরাফ সবসময় চেষ্টা করত মাহিরাকে খুশি রাখতে—কখনো পুরনো বই বিক্রি করে তাকে ছোট্ট একটা চেইন উপহার দিত, কখনো রাত জেগে তার পড়ায় সাহায্য করত।

একদিন মাহিরা বলল,

— “তোমার টাকা নাই, তাতে কী? তুমি আছো, এটাই আমার সব।”

আরাফ বিশ্বাস করল এই কথাকে, যত্ন দিয়ে আগলে রাখল মাহিরাকে নিজের পৃথিবীর মতো।

কিন্তু সময়টা বদলে গেল যখন মাহিরার পরিচয় হলো কায়সারের সঙ্গে—এক বড়লোকের ছেলে, দামি বাইক, ঘড়ি, রেস্টুরেন্ট, শহরের লাইফস্টাইল।

কায়সারের হাত ধরে মাহিরা ঘুরতে লাগল।

সেলফি, পার্টি, উপহার—সব কিছুতে মজে গেল। আর আরাফ? সে শুধু মেসে বসে রাত জেগে পড়াশোনা করে, আর অপেক্ষা করে একবার মাহিরার একটা কল আসার।

একদিন মাহিরার সামনে গিয়ে আরাফ জিজ্ঞাসা করল,

— “তুমি এভাবে কেন দূরে চলে যাচ্ছো?”

মাহিরা তখন ঠান্ডা গলায় বলল,

— “তুমি আমার স্ট্যাটাস বুঝতে পারো না, আরাফ। আমি চাই একজন স্টাইলিশ, রিচ পার্টনার। কায়সার আমাকে সেটাই দিচ্ছে।”

আরাফ ভেঙে পড়ে।

তার ভালোবাসার মেয়ে অন্য এক ছেলের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, হাসছে, ছবি তুলছে।

কিন্তু এতো কষ্টের মাঝেও একদিন সে সাহস করে গেল মাহিরার কাছে,

ভেবেছিল, হয়তো পুরোনো কথা মনে পড়লে সে ফিরে আসবে।

কিন্তু মাহিরা তখন কায়সারের সাথেই ছিল।

আরাফ বলল,

— “আমি এখনও তোমাকে ভালোবাসি, তোমার কাছে এসেছি শেষবার।”

মাহিরা হেসে বলল,

— “ভালোবাসা! তোর মতো গরিব একটা ছেলের ভালোবাসা কুকুরের মতো!”

আর কায়সার?

সে কিছু না বুঝে রেগে গিয়ে আরাফকে এক ধাক্কা দিল, গায়ে হাত তুলল।

মানুষের ভিড়ে কেউ কিছু বলল না।

আরাফ পড়ে রইল ধুলোর মধ্যে। বুকের ভেতরটা চুরমার হয়ে গেল।

সেদিন থেকেই সে প্রতিজ্ঞা করল—এই অপমানের জবাব তাকে দিতেই হবে।

রাত জেগে পড়াশোনা করল, নিজেকে গড়ে তুলল, চাকরির জন্য যুদ্ধ করল দিনরাত।

আর অবশেষে, সে জয়ী হল।

পাবলিক সার্ভিসে প্রথম শ্রেণির অফিসার হয়ে শহরে ফিরে এল। গাড়ি, বাড়ি, সম্মান—সব কিছু তার হাতের মুঠোয়।

একদিন অফিসে বসে আছে, হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ল এক পরিচিত মুখ—মাহিরা।

চেহারায় ক্লান্তি, সাজগোজ নেই, চোখে হতাশা।

সে আস্তে বলল,

— “কায়সার আমাকে ফেলে গেছে। আমি বুঝতে পারিনি, তুমি-ই ছিলে আমার সত্যিকারের ভালোবাসা। আমি ভুল করেছি। আমি ফিরে আসতে চাই...”

আরাফ উঠে দাঁড়াল, তাকাল তার চোখে।

গলায় কোনো আবেগ নেই, শুধু একরাশ অভিমান।

— “তুমি যেদিন কায়সারের হাত ধরে আমাকে অপমান করেছিলে, সেদিন আমার চোখ থেকে ভালোবাসার মৃত্যু হয়েছিল।

তুমি ভালোবাসা বোঝোনি, বোঝো টাকা। আজ আমি বড় অফিসার, আমারও টাকা আছে।

কিন্তু আমি জানি, তোমার মতো মানুষকে আগলে রাখা মানে নিজের সম্মানকে মাটিতে ফেলে দেওয়া।

আমি তোমাকে ঘৃণা করি না মাহিরা। কিন্তু তোমাকে গ্রহণ করতেও পারি না।

তুমি যেদিন আমাকে মাটিতে ফেলে দিলে, সেইদিন আমার মনের দরজা তোমার জন্য চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে।”

মাহিরা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল, চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরল।

আরাফ জানালার বাইরে তাকিয়ে বলল,

— “ভালোবাসা যদি দাম দিয়ে মাপা হয়, তবে সেটা ভালোবাসা নয়, সেটা ব্যবসা। আর ভালোবাসা কোনোদিন ব্যবসায়ীদের হাতে টেকে না।”

---

আমাদের কিছু কথা

ভালোবাসা যদি পেছনে লাথি খায়, তবে সে ফিরে এসে করুণা নয়, সম্মান দাবি করে।

একজন ভেঙে পড়া প্রেমিকও একদিন তার আত্মসম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে,

যদি তার কাছে থাকে—জেদ, সাহস, আর আত্মবিশ্বাস।