গল্প: অপেক্ষার নামে প্রতারণা | পরকীয়া ভালোবাসা হয় না

 গল্প: “অপেক্ষার নামে প্রতারণা”

পরকীয়া

রায়হান মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করে। কাতারে এক নির্মাণ কোম্পানিতে ম্যানেজার। আট বছর ধরে প্রবাসে আছেন। স্বপ্ন ছিল — ঘর তুলবেন, মা-বাবার মুখে হাসি আনবেন, আর স্ত্রীর মুখে স্বপ্নের আলতো ছোঁয়া দেবেন।

তিনি বিয়ে করেছিলেন আয়েশাকে, গ্রামের চেনা মেয়ে, শান্ত স্বভাব, দেখতে সুন্দর, স্বভাবেও মায়াবতী।


প্রথম প্রথম সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিলো। প্রতিদিন রায়হান দেশে ফোন করতেন, স্ত্রীর খোঁজ নিতেন, তার হাতে টাকা পাঠাতেন, বাড়িতে নতুন ঘর তুলেছিলেন। সবকিছুর মাঝে একটাই কষ্ট — দূরত্ব।


আয়েশা একা থাকতেন। শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে যথেষ্ট সম্মান দিতেন। কিন্তু বয়স কম, আর হৃদয়ে রায়হানের অনুপস্থিতি যেন দিনে দিনে একটা শূন্যতা তৈরি করছিলো। সেই ফাঁকেই প্রবেশ করল মিলন।


মিলন ছিলো একই গ্রামে থাকত, ফুর্তিবাজ, মুখে মধুর ভাষা আর চোখে ধূর্ততা। শুরু হলো দেখা, কথা, সাহায্যের নামে আসা-যাওয়া। আয়েশা প্রথমে বিরক্ত হতো, তবুও একাকিত্ব তাকে তাড়িয়ে বেড়াতো।


একদিন মিলন তাকে বলল, “রায়হান তো দূরে, তুমি তো মানুষ, পাথর না… তুমি কি কখনো নিজের ভালো চেয়েছো?”


আয়েশা চুপ। প্রশ্নটা গেঁথে গেলো মনে। রায়হানকে সে ভালোবাসতো, কিন্তু তার ছায়াও তো পাশে নেই। দিনের পর দিন একা, রাতের পর রাত নিঃসঙ্গ।

ধীরে ধীরে আয়েশা মিলনের দিকে ঝুঁকে গেলো। একদিন সম্পর্ক গড়ালো ভুল পথে।


রায়হান জানতো না কিছুই। তিনি তখনও আয়েশার জন্য সোনার চেইন পাঠাচ্ছেন, ঈদের শাড়ি কিনে দিচ্ছেন, এমনকি দেশে জমি কিনে স্ত্রীর নামে লিখেও দিয়েছেন। তিনি ভেবেছিলেন — স্ত্রীকে ভালোবাসলে সে বিশ্বস্তই থাকবে।


কিন্তু একদিন হঠাৎ গ্রামের একজন ছবি তুলে পাঠালেন রায়হানকে — আয়েশা আর মিলনের একান্ত মুহূর্ত। রায়হানের পা কাঁপতে লাগল। বুকের ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো।


তিনি চুপ থাকলেন। দেশে ফিরলেন না, শুধু বাড়িতে খোঁজ নিতে লাগলেন। এর মধ্যেই জানা গেলো — আয়েশা মাঝে মাঝে বাড়ি না বলেই কোথাও যায়, আবার অনেক রাতে ফেরে। একদিন হঠাৎ বাড়ির লোকজন মিলনকে আয়েশার ঘরে দেখতে পেলো। সেদিন গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে গেলো পরকীয়ার খবর।


রায়হান দেশে ফিরে এলেন না। শুধু তালাকনামা পাঠিয়ে দিলেন।

স্ত্রী কাঁদলো, আর বললো, “আমি ভুল করেছি, ক্ষমা করে দাও।”

কিন্তু বিশ্বাস একবার ভাঙলে তা আর কখনো জোড়া লাগে না।

আয়েশা আর মিলন একসাথে থাকার চেষ্টা করলো, কিন্তু সেই সম্পর্ক টিকল না বেশিদিন। মিলন একসময় নতুন কাউকে খুঁজে নিলো, আয়েশাকে ফেলে চলে গেলো।


সব হারিয়ে আয়েশা আজ একা। বাড়ির লোক মুখ ঘুরিয়ে নেয়, গ্রাম তাকে নিয়ে কথা বলে, সমাজ তাকে ঘৃণা করে। আয়নার সামনে দাঁড়ালেই সে কাঁদে — নিজের ভুলের জন্য, নিজের লোভের জন্য, নিজের একাকিত্বকে ভুলভাবে পূরণ করার জন্য।


রায়হান এখন মালয়েশিয়ায়। একা থাকেন, হয়তো কাউকে আর বিশ্বাস করেন না। জীবনের কাঁটা তাকে শিখিয়েছে — হৃদয়ের ঘর তৈরি করার আগে অনেকবার চিন্তা করতে হয়, কারণ বিশ্বাস ভাঙলে শুধু সম্পর্ক না, একটা মানুষও ভেঙে পড়ে।

---

গল্পের উদ্দেশ্য কথা:

পরকীয়া কখনো ভালোবাসা নয়, এটা লুকানো লোভ আর ভুলের ফল। অল্প কিছুক্ষণ ভালো লাগতে পারে, কিন্তু শেষে যা থাকে তা শুধু পশ্চাৎপটাপ, ঘৃণা, নিঃসঙ্গতা আর অপমান। এক মুহূর্তের দুর্বলতা একটা জীবনের সব ভালোবাসা শেষ করে দিতে পারে।

Disclaimer / Story Policy

This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.

We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.

If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.

"এই গল্পটি ‘জীবন যুদ্ধ গল্প.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com