না পাওয়া ভালোবাসার গল্প
আমি রাফি। জন্ম ঢাকার এক অভিজাত পরিবারে। বিলাসবহুল জীবন আমার পরিচিত ছিল—গাড়ি, ব্র্যান্ডেড পোশাক, দামি খাবার, এসব আমার নিত্যসঙ্গী।
কিন্তু আমি সবসময় বিশ্বাস করতাম, সত্যিকারের ভালোবাসা কেবল অর্থের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। তাই নিজের জীবনে এক অদ্ভুত পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
আমি গরিবের ছদ্মবেশে ঘুরতে লাগলাম—সাধারণ জামা-কাপড়, পুরোনো ফোন, রিকশায় চলাফেরা। আর তখনই তোমার সাথে দেখা।
তোমার নাম ছিল মেহজাবিন—তুমি ছিলে সুন্দরী, হাসিখুশি, কিন্তু তোমার চোখে ছিল বিলাসের স্বপ্ন।
তুমি প্রথমে আমার পাশে থাকলে, কিন্তু ধীরে ধীরে আমি বুঝলাম—তুমি শুধু সহ্য করছো, ভালোবাসছো না।
যখন রিকশায় তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতাম, তুমি মুখ ঘুরিয়ে নিতে। একদিন সরাসরি বললে—
“তোমাকে ভালোবেসে আমি ঠকেছি। আমার সব বান্ধবীরা গাড়িতে ঘুরে, দামি জায়গায় খায়, আর আমি? একটা গরিব ছেলের স্বপ্নে আটকে আছি।”
আমি ভেতরে ভেঙে পড়লেও চুপচাপ ছিলাম। কারণ আমি চাইছিলাম, তুমি নিজের চেহারা নিজেই দেখাও।
তাই একদিন আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু রায়হানকে বললাম—তুমি একটু বড়লোক সেজো। দামি গাড়ি, দামি পোশাক, দামি গিফট।
সে তোমার সামনে এল, আর খুব দ্রুতই তুমি তার প্রেমে পড়ে গেলে।
তুমি একদিন আমার সামনে দাঁড়িয়ে বললে—
“রাফি, তুমি আমার লেভেলের না। আমি চাই জীবনটাকে উপভোগ করতে। তুমি গরিব, আমার স্বপ্ন তোমার সাথে হবে না।”
আর সেইদিন তুমি আমার হাত ছেড়ে রায়হানের গাড়িতে উঠে গেলে, আমাকে অপমান করে চলে গেলে।
আমি আর কিছু বলিনি।
কিছুদিন অপেক্ষা করলাম।
তারপর একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে আমি এবং রায়হান একসাথে ঢুকলাম—আমি আমার আসল পরিচয়ে, রাজকীয় পোশাকে, আমার গাড়ি আর বডিগার্ড সহ।
তুমি আমাদের দেখে স্তব্ধ!
রায়হান তখন মাইক্রোফোনে বলল—
“এই মেয়েটিকে আমি ভালোবাসিনি। আমি ছিলাম আমার বন্ধুর পরীক্ষার অংশ। আর সে পরীক্ষা তুমি অকৃতকার্য। তুমি তাকে নয়, তার টাকার স্বপ্নকে ভালোবেসেছো।”
আমি তখন তোমার চোখে জল দেখেছিলাম।
তুমি বলেছিলে—
“রাফি, আমি ভুল করেছি... আমাকে ক্ষমা করো...”
আমি শুধু বলেছিলাম—
“ভুল করলে ক্ষমা করা যায়। কিন্তু বিশ্বাস ভাঙলে সেটা কখনো আগের মতো হয় না। তুমি ভালোবাসতে শিখোনি, তুমি শুধু লোভে ছিলে। আর ভালোবাসার নামে লোভ চলবে না।”
তুমি চলে গিয়েছিলে নিঃশব্দে।
আমি বুঝেছিলাম, আমি ভালোবাসতে পারি। কিন্তু যাকে ভালোবাসলাম, সে আমাকে নয়, আমার চারপাশকে চেয়েছিল।
আজও তুমি হয়তো সেই রিকশার দিনের কথা মনে করো।
কিন্তু আমি এখনো তাকিয়ে আছি সেই দিনের অপেক্ষায়—যখন কেউ শুধু “রাফি” নামটাই ভালোবাসবে, তার অবস্থান নয়।