বড় লোকের অহংকারী মেয়ে | বাস্তব জীবনের গল্প ও শিক্ষা

গল্প: "বড় লোকের সেই মেয়ে"

গল্প: "বড় লোকের সেই মেয়ে"
রাইশা।
নাম শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে দামি গাড়ি, ব্র্যান্ডেড পোশাক, মুখভর্তি মেকআপ আর অহংকারে ঠাসা একটা মুখ।
ঢাকার অভিজাত এক পরিবারের একমাত্র মেয়ে। তার বাবা একজন বড় শিল্পপতি, বিদেশে শাখা-প্রতিষ্ঠান, মিডিয়াতে নিয়মিত মুখ।
রাইশার যা ইচ্ছে হয়, তা-ই পায়।
একটা ফোন, আর মিনিট দশেকের মধ্যেই সব সামনে হাজির।
মাঝে মাঝে মা রাইশাকে বোঝাতেন—
"সবসময় যা চাও, তা-ই পাওয়া জীবনের মানে না রাইশা। একদিন বুঝবে!"

কিন্তু রাইশা মায়ের কথা শুনত না। সে নিজের মতো চলত।
তার কাছে মানুষ ছিল দুই ভাগে—
"আমার মতো বড়লোক, আর বাকিরা— সাধারণ, গরিব, লাফাইয়া চলা ছ্যাবলা!"

কলেজ লাইফে তার আলাদা একটা রাজত্ব ছিল।
অন্য মেয়েরা গার্ডিয়ান নিয়ে কলেজে আসত, সে আসত ব্যক্তিগত গাড়িতে, ড্রাইভার, দেহরক্ষীসহ।
তাকে কেউ কিছু বলার সাহস করত না।
সে বন্ধুরাও বেছে বেছে নিত— যেন তার লাইফস্টাইলের সঙ্গে মিলে।

একদিন কলেজে নতুন একজন ছেলে ভর্তি হলো— নাম ইমতিয়াজ।
অত্যন্ত মেধাবী, শান্ত স্বভাবের। মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। মুখে চুপচাপ, চোখে আত্মবিশ্বাস।

রাইশা প্রথম থেকেই ছেলেটিকে অপছন্দ করত।
কিন্তু একদিন প্রেজেন্টেশনে ইমতিয়াজ সবার সামনে এমন দক্ষতার সাথে কথা বলল, এমন যুক্তি উপস্থাপন করল যে পুরো ক্লাস, এমনকি শিক্ষকও প্রশংসায় ভাসাল।

সেই প্রথমবার রাইশা বুঝল—
"এটা নতুন। এটা আমার মতো নয়, তবে এটা... সম্মান পাচ্ছে।"

হতাশা নয়, বরং আগ্রহ জন্মায় তার মনে।
কয়েকদিন পর রাইশা নিজে ইমতিয়াজের কাছে এসে বলে—
"তুমি আমার গ্রুপে থাকবে?"

ইমতিয়াজ শান্তভাবে জবাব দেয়—
"যদি নিজের শ্রম দিতে পারো, তবে হ্যাঁ। শুধু নাম দিয়ে নয়।"

রাইশা অপমানিত বোধ করে।
তবে রাগে নয়, ভেতরে কোথাও একটা ধাক্কা লাগে।
সে প্রথমবার চিন্তা করে—
"মানুষ আমাকে কেন ভয় পায়, ভালোবাসে না?"

কয়েক মাস পর...
কলেজ ট্যুর হয় বান্দরবানে।
সেখানে একদিন রাইশা একা এক জায়গায় ঘুরছিল।
হঠাৎ পা পিছলে পাহাড়ি ঢালে পড়ে যায়। ফোন নেই, কেউ নেই।

ঘণ্টা দুয়েক পর ইমতিয়াজ অনেক খোঁজাখুঁজির পরে তাকে খুঁজে পায়।
কাঁধে করে নামিয়ে আনে, তার পা ব্যথা হয়েছিল।
পুরো সময় কোনো ছবি তোলা হয়নি, কোনো পোস্ট, কোনো লাইভ।
শুধু নীরবে এক তরুণ একটা মেয়েকে বাঁচিয়েছে— মানুষ হিসেবে।

ফিরে এসে রাইশা তার ঘরের আয়নায় নিজেকে দেখে।
আজ তার দামি জামা নেই, সাজ নেই।
কিন্তু চোখে এক নতুন প্রশ্ন—
"আমি কারো সম্মান কীভাবে অর্জন করেছি?"

দিন যায়, রাইশা পরিবর্তিত হতে থাকে।
একদিন সে এক অনুষ্ঠানে তার বাবাকে বলে—
"আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই, চাকরি করতে চাই।"

বাবা অবাক হন। মা চুপচাপ হাসেন—
"বলেছিলাম না, একদিন বুঝবে!"

রাইশা পরিশ্রম করে।
মিডিয়াতে, ক্যামেরার সামনে নয়, বরং অফিসের ছোট এক ডেস্ক থেকে শুরু করে।
কোনো কিছু চাইলেই এখন আসে না।
কিন্তু যেটা আসে, তা-ই সত্যি আনন্দ দেয়।

হঠাৎ একদিন শুনে— ইমতিয়াজ বিদেশে স্কলারশিপ পেয়েছে।
রাইশা ফোন করে অভিনন্দন জানায়।
ইমতিয়াজ বলে—
"তুমি এখনকার রাইশা হলে, বন্ধু হিসেবে গর্ব করব। আগের হলে, চেনা থেকেও অচেনা হয়ে থাকতে হত।"

রাইশা ফুঁপিয়ে কাঁদে ফোনের ওপারে।
কেউ একজন তাকে মানুষ হিসেবে গ্রহণ করেছে।
না অর্থের জন্য, না সৌন্দর্যের জন্য— শুধুই মানুষের মতো মানুষ হওয়ার জন্য।

---

গল্পের উদ্দেশ্য:

"বড়লোক হওয়া দোষ নয়, কিন্তু বড়ত্ব দেখিয়ে অন্যকে ছোট করে দেওয়া অপরাধ।"
রাইশা তার অহংকারের পর্দা সরিয়ে দেখেছিল— মানুষের মূল্য টাকা দিয়ে নয়, মানবতা দিয়ে মাপা হয়।
আর সেই শিক্ষা তাকে বদলে দিয়েছিল।

Disclaimer / Story Policy

This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.

We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.

If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.

"এই গল্পটি ‘জীবন যুদ্ধ গল্প.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com