দাসত্ব যখন কারো অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়, তখন সে তার শক্তি ভুলে যায়!

 "চাবি দরজার ভেতরে ছিল"

দাসত্ব

ছোট একটা শহরের কোণায় একটা পুরোনো কাপড়ের দোকান। দোকানের মালিক নয়, সেখানে চাকরি করে এমন একজন বছরের পর বছর দোকান সামলায়। সকাল ৮টায় আসে, রাত ১০টায় যায়। দোকানদার চাইলে সে ছুটিও নেয় না।

অনেকেই জিজ্ঞেস করেছে—

“তুমি নিজেই তো পুরো দোকান চালাও, নিজের একটা ছোট দোকান দাও না?”

সে হাসে, বলে,

“আমার সাধ্য নেই, সাহসও নেই। মালিক যা দেন, খাই, চলি। আলহামদুলিল্লাহ।”

তাকে দেখলে মনে হয় সে খুব ‘বিশ্বস্ত’ ও ‘নির্ভরযোগ্য’।

আসলে সে একটা অলক্ষ্যে গড়ে ওঠা অভ্যাসের দাস।

তার পাশে থাকা আরেক কর্মচারী একদিন সাহস করে ছেড়ে দেয় চাকরি। একটু একটু করে শুরু করে নিজস্ব কাপড়ের অনলাইন পেইজ। প্রথমে ব্যর্থতা, তারপর পরিশ্রম। এখন তার নিজের দোকান, নিজস্ব কর্মচারী।

একদিন পুরোনো দোকানে এসেছিল মালামাল কিনতে। আগের সহকর্মীকে দেখে বলল—

“তুমি এখনও ওখানেই? তুমিই তো আমাকে একদিন শেখালে কিভাবে মাল দেখতে হয়!”

সে মৃদু হেসে বলল,

“তোর মতো ঝুঁকি নেওয়ার সাহস আমার কখনও ছিল না।”

কিন্তু সেই রাতেই…

দোকানের তালা লাগিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সে ভাবে—

“আমি এই দোকান ১৫ বছর ধরে চালাই, মালিক এখন বিদেশে। আমি এখনো এখানে তালা লাগাই, হিসাব রাখি, আর নিজের বলতে কিছুই নেই।”

“আমি যদি ৫ বছর আগে শুরু করতাম…?”

তার পা থেমে যায়। মনে পড়ে, একবার সে জমিয়ে ছিল ৫০ হাজার টাকা। মালিক অসুস্থ, তাই দিয়ে মাল এনেছিল, আর ফেরত চায়নি।

মনে পড়ে, একবার ছেলেকে স্কুল থেকে ফিরিয়ে এনেছিল—বেতন দিতে পারেনি বলে।

তখন মালিক তার ছেলেকে ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি করেছিল।

সে দেয়ালে মাথা ঠুকে ভাবে—

“আমি তো আসলে চাকরি করিনি, নিজেই নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছিলাম।”

“নিজের কণ্ঠ, সাহস, স্বপ্ন—সব জমা রেখেছিলাম এই দোকানের কাউন্টারে।”

শিক্ষার জায়গা

অনেক মানুষ “ভালোমানুষ”, “বিশ্বস্ত” বা “ধৈর্যশীল” নামের আড়ালে আসলে নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে বসে।

তারা ধীরে ধীরে দাসত্বকে নিরাপত্তা মনে করতে শেখে—আর সেই নিরাপত্তার খাঁচাতেই জীবন কাটিয়ে দেয়।

বাস্তবিকভাবে, যেখানে তুমি কেবল "হুকুম মানো", সেখানেই তুমি নিজের শক্তি হারিয়ে ফেলো।

শেষ কথা

> যার খাঁচা বানানো শেষ, তার ডানা আর কাজ করে না।

আর যে একদিন চাবি খুঁজে নেয়, তার সামনে আকাশটাই ছোট হয়ে যায়।