মন বাঁধবি কেমনে?
হাত বাঁধবি, পা বাঁধবি, মন বাঁধবি কেমনে?
রায়হান আর সায়মা—দু’জনার দেখা একেবারেই হঠাৎ। ট্রেনের কামরায়, লম্বা ভ্রমণে। রায়হান জানালার পাশে বসে বাইরের দৃশ্য দেখছিলো। সায়মা হঠাৎ এসে বললো—
“ভাইয়া, একটু সরবেন? বসতে হবে।”
রায়হান অবাক হয়ে তাকালো। মেয়েটার কণ্ঠে যেন একটা অদ্ভুত টান। হালকা রাগও ছিল, আবার মিষ্টি ভাবও।
যাত্রা চললো, কথাবার্তাও শুরু হলো। আলাপ জমতে জমতে কখন যেন দুইটা মন একে অপরের দিকে টানতে শুরু করলো।
সময় কেটে গেল।
প্রথমে ফোন নাম্বার, তারপর মেসেজ, তারপর দীর্ঘ রাতের কথা।
সায়মা একদিন মজা করে বললো—
“তুমি তো আমাকে খুব ভালোবাসো মনে হয়?”
রায়হান হেসে বললো—
“ভালোবাসি না? আমি তোমার জন্য পৃথিবীর সব বাঁধন মানতে রাজি। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো—হাত বাঁধা যায়, পা বাঁধা যায়, কিন্তু মন বাঁধা যায় কেমনে?”
সায়মা মুচকি হেসে উত্তর দিলো—
“মন তো বাঁধা যায় না, মন তো শুধু জয় করা যায়।”
গল্প এগোতে থাকলো।
একদিন সায়মার পরিবার জানলো তাদের সম্পর্কের কথা। ঘরে ঝড় উঠলো। মা-বাবা বললো—
“এই ছেলেটার হাতে কিছুই নেই, ও তোমার যোগ্য না।”
সায়মা অনেক কষ্টে বললো—
“হাত দিয়ে কি সুখ বাঁধা যায়? পা দিয়ে কি ভবিষ্যৎ বাঁধা যায়? সুখ তো মনেই থাকে।”
কিন্তু পরিবার মানলো না।
সায়মাকে বাড়িতে আটকে রাখা হলো, ফোন কেঁড়ে নেওয়া হলো।
রায়হান তখন হাল ছাড়েনি।
রাতের আঁধারে চিঠি লিখে, পরিচিতদের দিয়ে, সায়মার কাছে পৌঁছে দিতো। প্রতিটা চিঠিতে একই লাইন—
“হাত বাঁধতে পারো, পা বাঁধতে পারো, কিন্তু মন বাঁধতে পারবে কেমনে? আমাদের মন একে অপরের।”
সায়মা সেই চিঠি পড়েই বেঁচে থাকতো।
অনেক লড়াই, অনেক কান্না, অনেক ঝড়ঝাপটার পর অবশেষে দুইটা পরিবার রাজি হলো।
বিয়ের দিন সায়মা মঞ্চে এসে রায়হানের দিকে তাকিয়ে হাসলো। ফিসফিস করে বললো—
“তুমি ঠিকই বলেছিলে, মন বাঁধা যায় না। আর আমি আমার মন শুধু তোমার হাতেই দিয়ে দিলাম।”
রায়হান চোখ মুছতে মুছতে হাসলো—
“এবার বুঝলে? হাত বাঁধা, পা বাঁধা, সব মিথ্যে। আসল বাঁধন হলো ভালোবাসার।”
ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, তবে কোনো দেয়াল, কোনো বাঁধন, কোনো শিকল তাকে আটকাতে পারে না।
হাত বাঁধবি, পা বাঁধবি, কিন্তু মন বাঁধবি কেমনে—যখন সেই মন কেবল ভালোবাসায় বাঁধা থাকে। ❤️